তরুণ ও তারুণ্যের রোল মডেল ববি
জাতির পিতার পরিবারে জন্ম, আর সেই রাজনীতি এবং আদর্শের আবহে বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে রোল মডেল, আর তরুণ প্রজন্মের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছেন অবিরত। এতক্ষণ বলছিলাম যার কথা, তিনি হলেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য নাতি, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার একমাত্র পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। আজ তার জন্মদিন। ১৯৮০ সালের এই দিনে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
জীবনের একটা বড় অংশ দেশের বাইরে কাটালেও রাদওয়ান মুজিব ববি তার মায়ের পরিবারের রাজনৈতিক আবহ ও আদর্শ নিয়েই বড় হয়েছেন। এখন বেশ কয়েক বছর ধরে দেশেই কাটাচ্ছেন বেশিরভাগ সময়।
এ সময়ে সরাসরি রাজনীতির বাইরে থেকে দেশ গড়ার কাজে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন তিনি। বড় খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ পরিচালনায় গবেষণাভিত্তিক তথ্য ও তত্ত্ব দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও পরামর্শে পরিচালিত সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) থেকে এ কাজগুলো করা হচ্ছে। তিনি সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি।
বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স গ্রাজুয়েট রাদওয়ান মুজিব বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। লন্ডন স্কুল অব কলেজে থেকে গ্রাজুয়েশনে তার অধ্যয়নের প্রধানতম বিষয়গুলো ছিল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড হিস্টরি, পলিটিক্যাল থিওরিজ, ইন্টারন্যাশনাল হিস্টরি। একই প্রতিষ্ঠান থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন রাদওয়ান মুজিব। এতে তার অন্যতম পাঠ ছিল কমপেরাটিভ পলিটিক্স, কনফ্লিক্ট অ্যান্ড রেগুলেশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি।
রাদওয়ান সিদ্দিক ববি লন্ডনের স্কুল অব ইকোনমিক্সে লেখাপড়া শেষ করে ঢাকায় একটি বিদেশি সংস্থায় দুই বছর চাকরিও করেছেন। দেশে এসে ২০১১ সালে তিনি ইউএনডিপির অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পে যোগ দেন। দুই বছর মেয়াদি ওই প্রকল্পের কর্মকর্তা হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ করেন। এ প্রকল্পের দুই বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে তিনি ফের লন্ডন চলে যান।
শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই বাংলাদেশের রাজনৈতিক মান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। নতুন প্রজন্মকে রাজনৈতিক সচেতন করে তুলতে নেয়া অন্যতম কর্মসূচি ‘ইয়াংবাংলা’ সারাদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একইসঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে করে তুলেছে উজ্জীবিত। এই কর্মসূচির অন্যতম পরিকল্পনাকারী রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।
এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতারের পর লন্ডনেও তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। সেই সময়টাতে ববি বিখ্যাত ‘ফ্রস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর স্যার ডেভিডকে প্রধানমন্ত্রীর গ্রেফতারের বিরুদ্ধে যে সাক্ষাৎকার দেন তা বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরিতে বিরাট ভূমিকা রাখে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কাজ নিয়ে ‘আপনি জানেন কি’ শিরোনামে ১৭টি প্রামাণ্যচিত্র এবং অন্যান্য সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের তুলনামূলক ১৯টি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি এবং নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে আসার অনুষ্ঠান ‘ইয়াংবাংলা’র পেছনের অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন ববি।
তার নির্দেশনায় প্রকাশিত হচ্ছে ‘মুজিব’ নামের একটি শিশুতোষ প্রকাশনা। জীবনীভিত্তিক এই প্রকাশনার মধ্য দিয়ে ছোট ছোট শিশুদের কাছে পরিচিত করে তোলা হচ্ছে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে।
‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)’ আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা: যাত্রা, অর্জন ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক সেমিনারে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হবার পর আমার খালা (শেখ হাসিনা) এবং মায়ের (শেখ রেহানা) দিনগুলো ছিল খুব কঠিন। স্কুলে যেতে পারতাম না। খুনিরা সবখানে ফলো করত। ওই সময় ১৫ আগস্ট-ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স সম্পর্কে সকলকে গিয়ে গিয়ে জানাতে হতো। তবে আশার কথা হলো, এখন সময় বদলেছে।
১৫ আগস্ট মা-খালা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরের পরিস্থিতির স্মৃতিচারণ করে ববি বলেন, আমরা যখন ১৯৮৬ সালে দেশে আসি তখন রাজধানীর বনানীর একটি স্কুলে আমাকে ভর্তি করা হয়। কিছুদিন পর মা বলেন তোমাকে অন্য স্কুলে ভর্তি করা হবে। আমি এখানে নতুন বন্ধু পেয়েছিলাম। আমি মাকে বললাম কেন মা? মা বললেন এখানে তোমার নানার খুনিদের সন্তানরা পড়ে। তারা প্রতিদিন এখানে আসে।
বঙ্গবন্ধুর নাতি জানান, তখন তারা এখানে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও ছিলেন চিন্তিত। তিনি তার মা শেখ রেহানাকে প্রশ্ন করেন, জাতির জনকের খুনিরা কীভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। তবে তখন এর কোনো উত্তর ছিল না তার মায়ের কাছেও। দেশে ফিরে আমাকে বনানীর একটি স্কুলে কেজি ওয়ান-কেজি টু পড়ার সময়গুলো অনেক ইনজয় করতাম। কিন্তু একদিন মা এসে বললেন, তোমার স্কুল ভর্তি পরিবর্তন করতে হবে। আমি ছোট ছিলাম। স্বাভাবই জিজ্ঞাসা করলাম কেন? কারণ তখন ছোট ছিলাম, এখানে অনেক বন্ধু তৈরি হয়ে গেছে। আবার নতুন স্কুল! এখানকার বন্ধুদের ছেড়ে, আবার নতুন পরিবেশে! ওই অল্প বয়সে যা হয় আর কি।
তখন মা আমাকে বললেন, এই স্কুলে খুনিদের ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়েছে। এই স্কুলে পড়া যাবে না। আমি খুব অবাক হতাম, খুনি-তাহলে তারা বাইরে ঘুরছে কীভাবে? আমাদের পরিবার থেকে ১৫ আগস্ট সম্পর্কে সবসময় স্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। কোনো লুকোচুরি করা হয়নি। তখন জানতে পারলাম ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের কথা। জানার পর আমরা সবাইকে গিয়ে বলতাম ১৫ আগস্ট কী হয়েছিল। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স কী। কিন্তু এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। সবাই জানে, ১৫ আগস্ট কী হয়েছিল। এমনকি অফিসে বসে আছি একজন রিসার্চ করে এসে জানাল- জানেন, আপনার নানা কী বলেছিলেন। আমি নতুন করে জানতে পারছি। আর এসব হয়েছে সিআরআইয়ের কল্যাণে।
তিনি আরও বলেন, খুনিরা স্কুল থেকে আমাদের ফলো করতে শুরু করল। মা সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে আবারও দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার। স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আর কতদিন। আপনারা তো জানেন আমার মা-খালারা তাদের জীবন নিয়ে কখনও ভীত ছিলেন না। কিন্তু আমাদের নিয়ে তারা চিন্তিত ছিলেন। ১৯৯৩তে আমি আবার দেশে ফিরে আসি। তখনও বয়স খুব একটা বেশি না। ১২ কি ১৩। তখন গিয়ে গিয়ে সকলকে ১৫ আগস্ট সম্পর্কে জানাতে হতো। এখন সময় বদলেছে।
তরুণ প্রজন্মকে জানানোর দায়িত্বটা তারপরও রয়ে গেছে। সে দায়িত্বটা আমাদের। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুকে দেখি নাই, তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে যারা ৭১-৭৫ দেখেছেন তাদের কাছ থেকে জেনে তরুণ প্রজন্মকে জানানো। শিশুদের শৈশব উপভোগ করা নিয়ে ভাবেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তিনি শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ দিতে এবং তাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় আরও উন্মুক্ত স্থান রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি গুলশানের উন্মুক্ত স্থানকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করার আহ্বান জানান। সেখানে আগে ওয়ান্ডারল্যান্ড বিনোদন পার্ক ছিল।
তিনি বলেন, যদিও বর্তমান অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, তারপরও ওয়ান্ডারল্যান্ডের স্থান ও গুলশান ইয়ুথ ক্লাব (জিওয়াইসি) মাঠটিতে ‘যুবকরা লেখাধুলা করছে, আনন্দ করছে।
আর এভাবে তারা শরীর চর্চায় সক্রিয় থাকছে। রাদওয়ান হাঁটার পার্কের সংখ্যা এবং শিশু-কিশোর ও তরুণদের জন্য সব আবহাওয়ায় খেলার উপযোগী স্থানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখারও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘কেন আমরা পুরোনো ওয়ান্ডারল্যান্ড স্থানটিকে একটি খেলাধুলার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারি না? শুধু কয়েকটি বহুমুখী স্থাপনা গড়ে তুলে শিশুদের খেলতে দিতে পারি।’
রাদওয়ান প্রতিদিন ফুটবল খেলেন এবং তিনি একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে পরিচিত। তিনি বাচ্চাদের সবসময় লেখাপড়ার জন্য চাপ না দিতে এবং খেলাধুলা ও শরীর চর্চা করতে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি শিশুদের জন্য আরও বেশি উন্মুক্ত স্থান সৃষ্টির আহ্বান জানান।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের খেলাধুলার উন্নয়নে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম স্থাপনের প্রকল্পটি চলমান আছে।
আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি রাদওয়ান সিদ্দিক মুজিব ববি ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত। তার স্ত্রীর নাম পেপি কিভিনিয়ামি সিদ্দিক। মেয়ে লীলাতুলী হাসিনা সিদ্দিক এবং ছেলে কাইয়াস মুজিব সিদ্দিক।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন।
যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
এইচআর/বিএ/জেআইএম