আমরা কি আত্মহননের প্রতিযোগিতায় নেমেছি!
এটা খুবই উদ্বেগজনক যে দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ৩২৮ জন মারা গেলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ২৭৩ জন, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২২ হাজার ২৬৮ জনে।
গতকাল রোববার (১৭ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
দুঃখজনক হচ্ছে মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চললেও বাড়ছে না সচেতনতা বরং একটা উদাসীনতা এবং নিয়ম না মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটি অনুমান করাও দুঃসাধ্য। তাই যেকোনো মূল্যে মানুষজনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে।
ডা. নাসিমা করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানান বুলেটিনে।
উল্লেখ করা যায় যে, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে চলেছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত সোয়া ৪৭ লাখ। মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে ১৮ লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। তারপর দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
কিন্তু বাড়ছে না সচেতনতা। শপিংমল, রাস্তাঘাট, সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি না মানার আত্মহননের প্রতিযোগিতায় নেমেছে লোকজন। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় অনেক শপিংমল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। তবু হুঁশ হচ্ছে না। ফেরিঘাটগুলোতে কিছুদিন আগে ছিল রাজধানীতে ফেরা মানুষের ভিড়। এখন আবার ঈদে বাড়িফেরা মানুষের ভিড়।
এ অবস্থায় যেকোনো মূল্যে লোকজনকে নিজ নিজ বাসাবাড়িতে অবস্থান করতে বাধ্য করতে হবে। নইলে সামাজিক সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। আবিষ্কার হয়নি ভ্যাকসিন।
এ অবস্থা শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই মরণঘাতী এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়। এ জন্য ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটিও চলছে। আমরা যেন অবহেলায় এই মূল্যবান ছুটি নষ্ট না করি। কেননা এরসঙ্গে আমাদের বাঁচামরার প্রশ্ন জড়িত।
এইচআর/বিএ/জেআইএম