ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

তাদের আসলে দায়িত্ব কী!

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৮:৪৭ এএম, ০৬ মে ২০২০

একদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অন্যদিকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার শঙ্কা। এ অবস্থায় মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জনস্বার্থে নোটিশটি পাঠান ঢাকার সূত্রাপুরের বাসিন্দা ও আইনজীবী ফাহিমা ফেরদৌস।

গতকাল মঙ্গলবার (৫ মে) সকালে ই-মেইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, মেয়র (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ), স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মশা নিধনের জন্যে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

আইনজীবী ফাহিমা ফেরদৌস বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো করোনাভাইরাস। বাংলাদেশ সরকার তা প্রতিরোধে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ডেঙ্গু করোনাভাইরাসের মতোই বিপদজনক এবং এডিস মশা ডেঙ্গুর কারণ।

তিনি বলেন, গত বছর ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে এই সময়ে প্রায় ৮০ জন লোকের প্রাণহানি ঘটেছে এবং পাঁচ হাজার ৬০০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্ত বর্তমানে মশার উৎপাত ও উপদ্রব অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মশা নিধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও নগরের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রের।

নোটিশে ফাহিমা আরও উল্লেখ করেন, একদিকে নগরবাসী করোনা আতঙ্কে আতঙ্কিত অন্যদিকে মশার উপদ্রবে দিশেহারা। করোনার সঙ্গে সঙ্গে যদি মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাহলে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫(ক), ১৮(১) এবং ৩২ অনুচ্ছেদে স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে অনুচ্ছেদে ৩২ অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার, যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

তিনি আরও বলেন, সার্বিক বিবেচনায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রদেরকে নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সত্যি বলতে কী মশার উৎপাতে জনজীবন অতিষ্ঠ। বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ থাকলেও সে অনুযায়ী মশকনিধনে নেই দুই সিটি কর্পোরেশেনের তেমন কোনো কার্যক্রম। তাই মশা নিয়ে দুর্ভোগ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মশাবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও। তাই মশকনিধনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

নগরবাসীরা বলছেন, অন্য সময়ের চেয়ে মশার উপদ্রব খুব বেড়েছে। দিনেও মশার হাত থেকে রেহাই নেই। অন্যদিকে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দরজা-জানালা সব বন্ধ করে বদ্ধভাবে থাকতে হয়। অথচ মশকনিধনে দুই সিটি করপোরেশেনের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা। এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়- মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যকরী পদক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ।

মশা নিধন কার্যক্রমের জন্য দুই সিটি করপোরেশনে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু এর কতটা মশকনিধনে ব্যবহার হয় এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। হলে মশার এত উপদ্রব থাকার কথা নয়।

মশা শুধু দুর্ভোগই সৃষ্টি করে না। ডেঙ্গু, জিকা ভাইরাসহ বিভিন্ন মরণঘাতী রোগের জীবাণুও বহন করে মশা। এ জন্য মশার উপদ্রব বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে এডিস মশার সংখ্যা যাতে বৃদ্ধি না পায় এ লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

মানুষজনকে সচেতন করে তুলতে হবে। এ বিষয়ে নাগরিক সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ। বাসাবাড়ির আঙিনা, ফুলের টব, ছাদের বাগান, ভবনের চৌবাচ্চা, এসি-ফ্রিজ থেকে জমা পানিতে মশার বংশ বিস্তার বেশি ঘটে। এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

মশকনিধন নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা বা শৈথিল্য মেনে নেয়া যায় না। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নানা সময় মশকনিধনের নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ হয় না। প্রশ্ন উঠেছে দুই সিটি মেয়রের আসলে দায়িত্ব কী? দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে দিন দিন মশার উৎপাত বৃদ্ধি পায় কী করে!

দুঃখজনক হচ্ছে মশকনিধনে তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। অথচ এ জন্য বাজেট রয়েছে। রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক। কাজেই মশকনিধনে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায় মানুষজন। যাতে আর উকিল নোটিশ পাঠানোর মতো আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন না হয়।

এইচআর/বিএ/পিআর