ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

নয়া সাম্রাজ্যবাদ ও করোনাভাইরাস

মো. ইসরাফিল আলম এমপি | প্রকাশিত: ০৭:১৫ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২০

আগে পাথরের তৈরি অস্ত্র দিয়ে, তারপর লাঠিসোটা দিয়ে, অগ্নিসভ্যতার সময় লোহা বা ধাতব পদার্থ দিয়ে, অতঃপর হাতে তৈরি ম্যানুয়াল অস্ত্র দিয়ে, তারপর তলোয়ার, ঢাল, তীর-ধনুক জাতীয় অস্ত্র দিয়ে, কামান দিয়ে গোলা দিয়ে, হাতি দিয়ে, ঘোড়া দিয়ে, সম্মুখ যুদ্ধ করে, রাজা-বাদশারা তাদের রাজত্ব রক্ষা এবং রাজ্য বিস্তার করত- এক রাজা অন্য রাজাকে পরাজিত করে, রাজ্য দখল করত, তাদের সম্পদ লুণ্ঠন ও ভোগ দখল করত। তার ধারাবাহিকতায় দেখা গেল আধুনিক অস্ত্র, বিশেষ করে ভূমি থেকে ভূমিতে, আকাশ থেকে আকাশে ও ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য, নৌপথে আক্রমণ এবং ডুবুরি জাহাজের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে, এক দেশ আর দেশকে দখল করার যুদ্ধ শুরু করল।

অতঃপর বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধ, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ, তেল সরবরাহ বন্ধ, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক লেনদেন বন্ধ করা ইত্যাদির মাধ্যমে বড় বড় দেশ বা জোট কিছু কিছু দেশ এবং অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করার বা তাদেরকে দখল করার বা ওই দেশের সরকার ব্যবস্থাকে উৎখাত ও পরিবর্তন পরিবর্ধন করার কিংবা সংস্কার করার যুদ্ধ শুরু করল। এরপর দেখা গেল বিভিন্ন পণ্য তৈরি এবং সেই পণ্যের গুণগত মান ও মূল্য কমবেশি করার ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত লড়াই শুরু করল।

জাতিসংঘ নামের যে প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্ববাসীর কাছে মানবতার ও সভ্যতার আশা-আকাঙ্ক্ষার নতুন আলোকবর্তিকা হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলো- তারাও কিছু ধনিক রাষ্ট্র এবং পরাশক্তির খেলার পুতুল হয়ে গেল। কারণ জাতিসংঘ এমন একটি সংস্থা যারা তাদের সদস্য রাষ্ট্রের ওপর কিছু দিকনির্দেশনা, উপদেশ, পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু বোধকরি কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না। তাই দেখা যাচ্ছে জাতিসংঘ গরিব এবং দুর্বল রাষ্ট্রের অধিকার ও সুরক্ষা জন্য তেমন কোনো প্রতিকারমূলক ও ন্যায় ভূমিকা পালন করতে পারছে না। বরং অনেক ক্ষেত্রেই ধনিক রাষ্ট্র বা পরাশক্তির স্বার্থসিদ্ধির জন্য মুখপাত্র ও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

অন্যদিকে ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র পারমাণবিক শক্তির মালিক ও অধিকারী হয়ে গেছে। তাই অস্ত্রের শক্তিতে বলীয়ান হয়েও ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ বাঁধানোর বা এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে দখল করার প্রক্রিয়াকে এখন আর অনুসরণ করছে না। কারণ একটি রাষ্ট্র আরেকটা রাষ্ট্রকে যদি পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে তাহলে সেই রাষ্ট্র যদি পাল্টা আক্রমণ করে তাহলে দেখা যাবে- প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, একই সাথে আশেপাশের অন্যান্য রাষ্ট্র যারা এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সাথে সম্পর্কিত নয়, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর দ্বারা নারী-শিশু ও বৃদ্ধসহ নিরস্ত্র সাধারণ জনগণ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তাই এখন অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করে এক দেশ থেকে আরেক দেশ দখল করা বা এক দেশের ওপর আরেক দেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার সময় প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সে জন্যই নতুনভাবে, নতুন পদ্ধতিতে ও আকৃতিতে উন্নত রাষ্ট্রগুলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল তথা রাষ্ট্রের ওপর তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে, অর্থনৈতিক শক্তি, বাণিজ্যিক শক্তি, প্রযুক্তিগত শক্তি এবং অধিক গুণগতমান সম্পন্ন তুলনামূলক অল্পমূল্যে আকর্ষণীয় পণ্য সরবরাহ করার শক্তিকে ব্যবহার করছে।

এ রকম একটি অবস্থায় করোনাভাইরাস নামে যে জীবাণু সারাবিশ্বকে এবং সারাবিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এবং ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং প্রকম্পিত করে ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে সাদাচোখে কোনো মতামত দেয়া সঠিক না হলেও- বিশ্বব্যবস্থা এবং বিশ্ববাসীর চিকিৎসা সম্পর্কিত চিকিৎসাবিজ্ঞানের দুর্বলতা ও অসহায়ত্ব দেখে অভিমত ব্যক্ত করার যথেষ্ট যুক্তি আছে এইভাবে যে, বিশ্বের কোনো রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রপুঞ্জ বিশ্ববাসীকে নিজেদের কর্তৃত্বে এবং নিয়ন্ত্রণে জিম্মি করার জন্য বায়োলজিক্যাল উইপন বা জীবাণু অস্ত্র ব্যবহারের কৌশল অবলম্বন করছে না তো? না হলে সামান্য একটা জীবাণু করোনাভাইরাসকে একটি দানবিক ও অপ্রতিরোধ্য শক্তিরূপে প্রচার-প্রচারণা চালানোর যে মহোৎসব শুরু হয়েছে সারাবিশ্বব্যাপী, তার পেছনে কি কারণ আছে?

আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের যুগে যখন মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গকে পরিবর্তন করা হচ্ছে, রূপান্তর-স্থানান্তর করা হচ্ছে, ছেলেকে মেয়ে, মেয়েকে ছেলে বানানো হচ্ছে, কৃত্রিম উপায়ে নিঃসন্তানদের জঠরে সন্তান জন্ম দেয়া হচ্ছে, সেই সে রকম একটি উন্নত সমৃদ্ধ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্বর্ণযুগে করোনাভাইরাসের মতো একটা জীবাণুকে ধ্বংস করার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে, তা বিশ্ববাসীর কাছে কেন পৌঁছে দেয়া হচ্ছে না?

এই প্রশ্নটি এবং এই কৌতূহলটি স্বাভাবিকভাবেই আমার মতো যেকোনো মানুষের মনে কি জাগ্রত হতে পারে না? শোনা যায়, এমন ইনজেকশন আবিষ্কার হয়েছে যা মানবদেহে পুশ করলে তার কোষ এবং সেলগুলো আবার রিভাইটালাইজড ও শক্তিশালী হবে এবং ওই দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা যৌবনকালের মতো হবে, কর্মক্ষমতা যৌবনকালের মতো পুনরুদ্ধার হবে। কোথায় গেল এসব চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা? কোথায় গেল ওই সমস্ত ওষুধ এবং প্রতিষেধক?

এখন সারাবিশ্বের প্রচারমাধ্যমের প্রধান প্রচারের আইটেম করোনাভাইরাস। সেটাকে শিরোনাম করে যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে এই করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ও প্রতিকারহীনতা সম্পর্কে। তাতে আতঙ্কিত হয়ে বহু মানুষ হতাশ এবং হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুশয্যায়। সামান্য সর্দি-কাশি-গলাব্যথার রোগীরাও আতঙ্কে শয্যাশায়ী হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসক বা চিকিৎসা পাচ্ছেনা। ওষুুধ নাই, প্রতিষেধক নাই! কীভাবে বাঁচা যাবে? এই দুর্ভাবনায় অনেকে উপরওয়ালার কাছে আত্মসমর্পণ করে, মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবা দরকার। কারণ আমি ডায়াবেটিসের রোগী ২০০২ সাল থেকে, আমার হৃদপিণ্ডে রিং পরানো আছে, ব্লাড প্রেসার আছে, আমার কিডনির সমস্যা আছে। তারপরও আমি ২৯ তারিখ থেকে আমার নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষের সাথে মোটামুটি স্বাভাবিকভাবে মেলামেশা করছি। নিজস্ব উদ্যোগে খাদ্য সহায়তার কাজে অংশগ্রহণ করছি, ভিজিটরদের সাথে কথা বলছি, পাবলিক হেয়ারিং নিচ্ছি, বিভিন্ন প্রতিকার দিচ্ছি, মাঠ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করছি, গণমাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করছি, কোনো ধরনের পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট ব্যবহার ছাড়াই। আমার সর্দি-কাশি হচ্ছে ,গায়ে জ্বর আসছে, গলাব্যথা হচ্ছে, আমি গতানুগতিক ধারার যে চিকিৎসা পদ্ধতি আছে সেটা ব্যবহার করেই তো এখনো ভালো আছি, ইনশাআল্লাহ সুস্থ-স্বাভাবিক আছি।

আসলেই বিশাল বিভ্রান্তির সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি না তো আমরা? ওই যে মানুষ বলে না, যা সম্পর্কে মানুষ বোঝে না, জানে না, যাকে মানুষ দেখতে পায় না, তাকে নিয়েই মানুষের আতঙ্ক এবং ভীতি বেশি। মৃত্যুটাকে যদি মানুষ চোখে দেখতে পারত, জীবিত অবস্থায় যদি মৃত্যুর যন্ত্রণা অনুভব করতে পারত। তাহলে সেই মৃত্যুকে মানুষ হয় তো এত ভয় পেত না। মৃত্যু পরবর্তী জীবনের সাক্ষাৎ যদি কোনো মানুষ পেত, মৃত্যু সম্পর্কে মানুষ যদি সরাসরি সবকিছু জানতে পারত। তাহলে বোধ হয় মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে মানুষ এত আতঙ্কিত হতো না। করোনাভাইরাস কি সে রকম কিছু?

করোনাভাইরাস বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো এই বিশ্বকে নতুনভাবে দখল করার, নিয়ন্ত্রণ করার এবং তাদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবার একটি সুদুরপ্রসারী পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে অনেকে আখ্যায়িত করছে? বিষয়গুলো নিয়ে কৌতূহল উদ্দীপক ভাবনার উদয় হচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা দয়া করে মুখ খুলুন? রসায়নবিদরা দয়াকরে নির্বিকার থাকবেন না। কারণ এভাবে সারাবিশ্বকে আতঙ্কের মধ্যে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা যায় না। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকদিন হয়ে গেল এবং এক লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হলো।

আমি প্রশ্ন করব আপনারা যারা পরিসংখ্যানবিদ আছেন, তারা একটু পরিসংখ্যান প্রতিবেদন অনুসন্ধান করে দেখুনতো? গত বছর এ রকম সময়ে এই কয় মাসে বিভিন্ন রোগে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে? আমি বাংলাদেশের কথা বলতে চাই। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে প্রতিদিন কতজন মানুষ মৃত্যুবরণ করে? সারা বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসাকেন্দ্রে কতজন মানুষ কী ধরনের রোগে মারা যাচ্ছে? এ তথ্যগুলো দয়া করে তুলনামূলকভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হোক। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত ভীতি ও আতঙ্ক তাদের মন থেকে, চিন্তা থেকে দূর করার জন্য মানুষের মনে সাহস ও উৎসাহ সৃষ্টি এবং সঞ্চারকারী নিউজ আলোচনা ও মতামত সামনে আনা হোক- A negative thinking does not create positive result। করোনার বিরুদ্ধে সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ লড়াই, সংগ্রাম এবং সামাজিক সচেতনতা ও আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তথ্যসমৃদ্ধ ইতিবাচক পরিসংখ্যান এবং প্রচারণা এখন খুবই জরুরি। কারণ সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বরের রোগীদের কেউ কেউ করোনা আতঙ্কে চিকিৎসাহীন করে বেকায়দায় ফেলা দিচ্ছে। যে কারণে এই ঋতু পরিবর্তনের সময় গত বছরের তুলনায় এই বছরে দেখবেন সর্দি-কাশি ও জ্বরের রোগীর সংখ্যা কম।

প্রায় একশত দিন হয়ে গেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার আতঙ্ক সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা এমন জায়গায় চলে গেছে যে, স্বামী অসুস্থ হলে স্ত্রী তার কাছে যাচ্ছে না, সন্তান অসুস্থ হলে মাকে তার কাছে যেতে দিতে, বাবা অসুস্থ হলে সন্তানদের সেবা দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সবচাইতে মর্মান্তিক বিষয় হলো, করোনা সন্দেহে বা সিমটমে মৃত ব্যক্তির জানাজা বা সৎকার করতেও তার আপনজনরা অংশ নিতে যাচ্ছেন না। যাচ্ছে না শেষ বিদায় দিতে, শেষ দেখা দেখতে।

আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার যুগে, মানবিকতা ও সভ্যতার যুগে এ ধরনের পরিস্থিতি কি কেউ কখনো আশা করেছিল? এ তো পেছনে ফেলে আসা প্রাগৈতিহাসিক বর্বর যুগের দৃশ্যপট যেন আমাদের সামনে এনে হাজির করা হচ্ছে। স্মরণ আছে নিশ্চয়ই আপনাদের প্লেগ রোগের কথা। যে রোগকে প্রতিকারহীন রোগ বলে আখ্যায়িত করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর মিছিলে ফেলে দেয়া হয়েছিল।

আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি ডায়রিয়ার কথা বা কলেরা রোগের কথা। এই রোগটি যে গ্রামে ঢুকেছে সেই গ্রামকে শ্মশান বানিয়ে ছেড়েছিল, কিন্তু কোনো প্রতিষেধক কেউ দিতে পারেনি। আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যান নাই বসন্ত রোগের কথা। বসন্তবাবু মহামারি রোগের নাম ধারণ করে যে বাড়িতে বা পাড়া-মহল্লায় ঢুকেছে, সেই জনপথের অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে, সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে আপনজনরা ফুটন্ত বসন্ত আক্রান্ত রোগীর সেবা করতে যায়নি।

নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে যক্ষ্মারোগের কথা। এই রোগ সম্পর্কে বলা হতো- যার হবে যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা! আবার ক্যান্সারকে বলা হয়েছিল যার হলো ক্যান্সার তার নেই অ্যানসার। এইচআইভি বা এইডস রোগকে বলা হলো, এই মরণব্যাধি। এটি একটি মারাত্মকভাবে ছোঁয়াচে রোগ, যার প্রতিকার নাই, প্রতিষেধক নাই। যে কারণে একই ঘরের মধ্যে এইডস রোগীকে মশারি টাঙ্গিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তার সংস্পর্শে আপনজন বলতে কেউ যান নাই। অনেককে ঘরের বারান্দায় শয্যাশায়ী থাকতে থাকতে মৃত্যুকে সঙ্গীকরে পরপারে চলে যেতে হয়েছে।

কিন্তু পরবর্তীতে আমরা কী দেখলাম? উপরে বর্ণিত প্রতিটা রোগে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারানোর পর প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এই রোগগুলো এখন আর কোনো রোগ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে না। এখন স্যালাইন খেলে কলেরা ভালো হয়ে যায়। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রিত। বসন্তের তো কোনো দেখাই পাওয়া যায় না। এইচআইভি নিয়ন্ত্রিত। হয়তো বা এই করোনাভাইরাসের প্রতিষেধকও একদিন আবিষ্কৃত হবে। কিন্তু ততদিনে লক্ষ লক্ষ মানুষ চিকিৎসাহীন অবস্থায় এবং আতঙ্কবাদীদের নির্মম শিকার হয়ে প্রাণ হারাবে। সারা বিশ্ববাসীর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক -বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মানবিক সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

তাই, আবারও বলতে চাই, বর্তমান বিশ্বে মানুষের চেয়ে শক্তিশালী কোনো ভাইরাস হতে পারে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ জীবাণু বিজ্ঞানীরা জানে, একটি জীবাণুকে আরেকটি জীবাণু দিয়ে কীভাবে নিমেষের মধ্যে ধ্বংস করতে হয়। মাইক্রোবায়ালজিস্ট সাহেবরা জানেন কীভাবে তাকে নির্মূল করা যায়।

চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে যত গবেষণা বিশ্বের দেশে দেশে হচ্ছে এবং হয়েছে তা সম্পর্কে তো আমরা জানি। সেই গবেষণাগারগুলো কি বন্ধ হয়ে গেছে? সেখানেও কি করোনা আতঙ্কে জনমানব শূন্যতা বিরাজ করছে? তা নাহলে কেন তারা এই জীবাণুর আকৃতি-প্রকৃতি-বৈশিষ্ট্য-জীবনচক্র সম্পর্কে অবগত হয়েও তার প্রতিষেধক বা নির্মূলের জন্য ভ্যাকসিন বা ওষুধ সারা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে না?

লেখক : সংসদ সদস্য, রবীন্দ্র গবেষক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও প্রাবন্ধিক।

এইচআর/বিএ/পিআর