ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

কলঙ্কমোচন হলো জাতির

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৯:১৬ এএম, ১২ এপ্রিল ২০২০

এটা খুবই স্বস্তির বিষয় যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। গত রাত ১২টা ১ মিনিটে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরফলে দেশ কলঙ্কমোচনের পথে এগিয়ে গেল আরেকধাপ। এখনো কয়েকজন খুনি পলাতক রয়েছে। তাদের দেশে এনে ফাঁসি কার্যকর করার মধ্য দিয়েই জাতি পুরোপুরি দায়মুক্ত হতে পারে।

গত ৬ এপ্রিল দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর থেকে গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদকে। দীর্ঘ দিন ধরে বিদেশে পলাতক থাকা মাজেদ গ্রেফতার হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় সপরিবারে হত্যার শিকার হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি ছিলেন আবদুল মাজেদ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করেন।

১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনিদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়।

১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ নানা কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

অন্যদিকে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় দেন। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বজায় রাখেন। কিন্তু অপর বিচারক এ বি এম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।

পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে ৫ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন।

২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ৫ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়।

পরে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মর্মমূলে আঘাত করে খুনিরা। এ ধরনের ঘৃণ্য খুনির শাস্তি তাই আইনের শাসনের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি। আত্মস্বীকৃত ঘৃণ্য খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি নামক কালো আইন হয়েছিল। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া নানাভাবে খুনিদের পুরস্কৃত করেন। বাঙালি জাতির জন্য যা অত্যন্ত কলঙ্কজনক অধ্যায়। অবশেষে ঘাতকের দিন শেষ হয়ে আসে। একে একে সবাইকে নিয়ে আসা হয় আইনের আওতায়। শুধু বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করলেই হবে না। যারা খুনিদের বাঁচার জন্য কালো আইন করেছে, পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। সুশাসনের জন্য যা অত্যন্ত জরুরি।

এইচআর/বিএ/পিআর