মিডিয়ার মেয়েদের দুর্নামের জন্য এই মিথিলারাই দায়ী
নারীর সবকিছুকে অন্ধের মতো সমর্থন নারীবাদ নয়। বরং অন্ধত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অযৌক্তিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম, মানবিকতার জন্য লড়াই; যে লড়াই নারী পুরুষকে সমান মর্যাদায় চিন্তা করে, মানুষ হিসেবে একই সরলরেখায় দাঁড় করায়- তা নারীবাদ।
এখানে নারীবাদিতার কিছু বালখিল্য আবদার রয়েছে। আপনি নারীবাদী তো নারীর সবকিছুই সমর্থন করতে হবে। নারীর ঘুষ, দুর্নীতি, হত্যা, খুন, প্রতারণা, অপকৌশল, নির্যাতন, অত্যাচার, যৌন অনাচার, বিকারগ্রস্ততা, বিকৃতি, অন্যায়, অপরাধ- সবই। কারণ, সে নারী।
একাত্তর টেলিভিশনের এক টকশো’তে গিয়েছিলাম। নারী পুরুষ সম্পর্ক-নৈতিকতা-অনৈতিকতা নিয়ে আলাপ। সাফ বলেছি, নৈতিকতার কোন নারী-পুরুষ নেই। জেন্ডার নেই। লিঙ্গ নেই। নৈতিকতা নৈতিকতাই। এর সঙ্গে বেড়ে ওঠা, বড় হওয়া, পরিবার, সংস্কৃতি, রুচি, আদর্শ, মানস গঠন, মূল্যবোধ জড়িয়ে আছে এমন অনেক কিছুই।
অনেকেই বলেন, নারীর যা ইচ্ছা তাই করার অধিকার- নারী স্বাধীনতা। ভুল। যারা বলেন, তারা আসলে নারীকে মানুষই মনে করেন না। ‘যাচ্ছেতাই’ করার অধিকার কারোই থাকা উচিত নয়। না পুরুষের, না নারীর। কোন মানুষ যা ইচ্ছা তাই করবে এমনটা কাম্য নয়। ব্যক্তি তো সমাজ, রাষ্ট্রের বাইরে নয়। ফলে তার এই ‘যাচ্ছেতাই’ সমাজ, রাষ্ট্রে কোন বিরূপ প্রভাব ফেলছে বা ফেলবে কিনা, সেটিও তো ভাবার বিষয়।
দেখলাম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে মিথিলার প্রেম-বিয়ে নিয়ে তোলপাড়। প্রেম বিয়ে কোনটিই অন্যায় নয়, অপরাধ নয়। প্রেম হতেই পারে, বিয়ে করতেই পারে যে কেউ। এক প্রেম কেন, একাধিক প্রেম। এক বিয়ে কেন, একাধিক বিয়ে। কিন্তু তাই বলে একই সময় অনেক অনেক অনেকের সঙ্গে নয় নিশ্চয়ই। আমার শারীরিক সম্পর্কেও কোনো আপত্তি নেই। তাই বলে অনেকের সঙ্গে নয় নিশ্চয়ই- একই সময়ে। ‘কমিটমেন্ট’ বলে একটি শব্দ রয়েছে। যে কোনো সম্পর্কের সবচেয়ে নান্দনিক, নৈতিক আর মূল্যবান বিষয় সেটি। কমিটমেন্ট না থাকলে কোনো সম্পর্কই শেষাবধি সম্পর্ক নয়, আর যাই হোক সেটি।
তাহসান-মিথিলার ডিভোর্সে অনেকে মন খারাপ করলেও আমি আনন্দিত হয়েছি। কেননা, কখনও কখনও একত্রবাস দুঃসহবাসও হতে পারে। ঝগড়া, গালাগালি, চুলোচুলি, মারামারির চেয়ে দুজন মানুষের সম্মানজনক বিচ্ছেদ অনেক কল্যাণকর। বিচ্ছেদের পর মিথিলা-তাহসান বা তাহসান-মিথিলা কেউ কারো নয়। যে কারো নতুন করে সম্পর্ক, প্রেম হতেই পারে। আবার নাও পারে।
কিন্তু বিয়ের আগে ও পরে ব্যান্ড গায়ক জন কবিরের সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন , নির্মাতা ইফতেখার আহমেদ ফাহমির সঙ্গে সম্পর্ক, ভারতীয় নির্মাতা সৃজিত মূখ্যার্জির সঙ্গে সম্পর্ক- মিথিলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেই, করাটাই স্বাভাবিক। একগামিতা কেবল পুরুষের জন্য নয়, নারীর জন্যেও প্রযোজ্য। আজ একজনের সঙ্গে সম্পর্ক, কাল অন্যের সঙ্গে; এমন যদি নিয়মিত হতে থাকে তবে বুঝতে হবে এটি সম্পর্ক নয়, প্রেম নয়, ভালোবাসা নয়- অন্য। একের পর এক সম্পর্ক করে বেড়ালে, সম্পর্কে জড়ালে সেই পুরুষকে যদি ভালো চোখে দেখা না হয়, লম্পট দুশ্চরিত্র বলা হয়, তাহলে নারীর ক্ষেত্রেও তা-ই নিশ্চয়ই।
পুরুষের দ্বিচারিতা, ত্রিচারিতা, চর্তুচারিতা যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে নারীর জন্য তা গ্রহণযোগ্য কেন হবে? বরং ‘তথাকথিত’ নারী স্বাধীনতায়, নারীবাদে বিশ্বাসীরা এই পুরুষতান্ত্রিকতাকে দুধ কলা দিয়ে পুষতেই নারীর এমন বহুগামীতাকে সমর্থন করেন।
মিথিলার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে শয্যামুহূর্ত, চুম্বনরত ছবি, অন্তরঙ্গ মুহূর্ত যে বা যারা ছড়িয়ে দিয়েছেন, ভাইরাল করেছেন তারা নিঃসন্দেহে শঠ, প্রতারক। আইনের ভাষায় ক্রিমিনাল। সন্দেহ নেই। আইনের আওতায় আনাও উচিত তাদের । কিন্তু মনে রাখতে হবে, মানুষ হিসেবে, ব্যক্তি হিসেবে আমি যেই হই, যত মেধাবী, যত খ্যতিমান, আমার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। রয়েছে নিজের প্রতি, তেমনি অন্যের প্রতিও। মিথিলা কি সেই দায়িত্ব পালন করেছেন?
মিডিয়ায় আসা, আসতে চাওয়া শত শত মেয়েদের প্রতি লোকের যে নেতিবাচক, তীর্যক মনোভঙ্গি একজন মিথিলা কি তা আরও উস্কে দেননি?
মিথিলা, কী বলবেন আপনি?
লেখক : সম্পাদক, আজ সারাবেলা। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মিডিয়াওয়াচ। পরিচালক, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন। সদস্য, ফেমিনিস্ট ডটকম, যুক্তরাষ্ট্র।
এইচআর/এমকেএইচ