ব্রেক্সিট আতঙ্কে ব্রিটেনের ব্যবসায়ীরা
> বিনিয়োগে যাচ্ছে না নতুন ব্যবসায়ীরা
> ব্রেক্সিটের প্রভাবে কমেছে পাউন্ডের দাম
> কমতে পারে বাংলাদেশের রফতানি আয়
> চাকরি হারাচ্ছেন অনেক শ্রমিক
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এখন মাত্র সময়ের ব্যাপার। এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ইউরোপের সব ব্যবসায়ী। বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাবে ৩১ অক্টোবর রাত ১১টায়। কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট হয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে ব্রিটেনকে সঙ্গে সঙ্গেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাস্টমস ইউনিয়ন এবং একক বাজার থেকে বের হয়ে যেতে হবে। আর এই সমঝোতার আওতায়ই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো চুক্তি ছাড়া ইইউ ত্যাগ করলে বিদেশি কোম্পানি কিংবা শিল্প-কারখানায় কর্মরত বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবাধ ব্যবসা-বাণিজ্য হারাবে এবং চরম সংকট দেখা দেবে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানি এবং এমনকি বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী ওষুধপত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে। তাছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা তো অচল হয়ে পড়বেই।
২০১৬ সালের ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্তের পর থেকে পুরো ইউরোপের সঙ্গে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশি ব্রিটিশরাও। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে ব্রিটেনে প্রায় সাড়ে চার লাখ ব্রিটিশ বাংলাদেশির বসবাস। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নেই এমন বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিও ব্রিটেনে বসবাস করেন। এর বাইরে আছেন দেশটিতে বসবাসের বৈধতাহীন বাংলাদেশিরাও। সবমিলে মোটামুটি ছয় লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন যুক্তরাজ্যে।
ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার আগেই যুক্তরাজ্যের অভিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে। বড় কোম্পানিগুলো ব্রিটেন থেকে তাদের প্রধান কার্যালয় সরিয়ে নিচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। গত তিন বছরে ব্রিটেনের বহু প্রতিষ্ঠান তাদের আকার সীমিত করে এনেছে। এরই মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন অনেক ব্রিটিশ বাংলাদেশি।
ব্রিটেনের সবচেয়ে সফল বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের একজন ইকবাল আহমেদ। ব্রিটেনে তিনি সবচেয়ে বেশি চিংড়ি আমদানি করেন, আবার একই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি চিংড়ি রফতানি করেন। ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য সানডে টাইমস’ ব্রিটেনের শীর্ষ ধনীদের যে তালিকা করে একবার সেই তালিকায় তার নামও উঠেছিল। ইকবাল আহমেদের সীমার্ক গ্রুপের ব্যবসা এখন বিস্তৃত ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশে। কিন্তু ব্রেক্সিটকে ঘিরে গত তিন বছর ধরে যে অনিশ্চয়তা, সে কারণে এখন তিনি ব্রিটেন থেকে তার ব্যবসার একটা বড় অংশ নিয়ে যাচ্ছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতে, ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত নেয়ায় যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এই দুই বছরের মধ্যে দুই শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়নে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে এমনটা হতো না বলেই মনে করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গণভোটের পর প্রতি সপ্তাহে দেশটির উৎপাদন কমেছে ১০০ কোটি ডলার এবং সপ্তাহের হিসাবে তা দাঁড়ায় ৬০ লাখ ডলার।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে ব্রিটেনে নতুন বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। আর যার বেশির ভাগই চলে গেছে ফ্রান্স ও জার্মানিতে।
অন্যদিকে ব্রিটেনের প্রায় ৯০ শতাংশ নিত্যপণ্য ইউরোপ থেকে আমদানি করতে হয়। ইউরোর সঙ্গে পাউন্ডের দামের তারতম্য কমায় সেই নিত্যপণ্যের বাজারে কয়েক দফা দাম বেড়েছে। আর এর প্রভাবে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশেও কমছে পাউন্ডের দাম। যার প্রভাব পরছে প্রবাসী ইউরোপবাসীদের ওপর।
আমদানিকারক ও মানি ট্রান্সফার ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সমীক্ষার ফলাফল বলছে, ইউরোর থেকে পাউন্ডের দাম বেশ খানিকটা বেশি ছিল। সেই দাম অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে। ফলে ইউরোর সঙ্গে পাউন্ডের বিনিময় মূল্যের ব্যবধানও কমে গেছে। ২০১৬ সালে যেখানে ১০০ ইউরোর বিনিময় মূল্য ৭০ ব্রিটিশ পাউন্ডের সমান ছিল, ২০১৯ সালে এসে সেই ১০০ ইউরো ৮৯ ব্রিটিশ পাউন্ডের সমান হয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাউন্ডের দাম কমে যাওয়ায় ব্রিটেনের শেয়ার মার্কেট থেকে শুরু করে ব্যবসার প্রতিটি ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়বে। তাছাড়া যারা ইউরোপ থেকে পণ্য এনে ব্রিটেনে ব্যবসা করে তাদেরও বেশি মূল্য দিয়ে পণ্য কিনতে হবে। যার ফলে ব্রিটেনে পণ্যের দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় থাকবে না ব্যবসায়ীদের।
বিএ/পিআর