ধন্য হোক হৃদয় ধন্য হোক জন্ম
ক্লাসের বিষয়ের নাম" আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য " ১০-১২ বছরের বাচ্চারা এ ক্লাসে মনোযোগী হবে ভাবাটাও বোকামি। যাই হোক এটা ভেবে নিয়েই তাদেরকে বললাম একটু মনোযোগী হতে। বাচ্চারা পাল্লা দিয়ে অমনোযোগী হয়ে উঠলো।
একে তো ইতিহাস তার উপরে ছুটির আগের ঘণ্টা, একেবারে সোনায় সোহাগা। একটু অসহায় বোধ করলাম। ভাবছি পরীক্ষার জন্য হয়তো এরা দু একটা প্রশ্ন ঠিক মুখস্থ করবে কিন্তু আদৌ কি কিছু জানবে! কীভাবেই বা জানতে আগ্রহী করবো?
বললাম আমরা কি স্বাধীন? উত্তর এল-হ্যাঁ আবার বললাম-কীভাবে? উত্তর-যুদ্ধ হয়েছিল! মুক্তিযুদ্ধ। যাক, কিছুটা মনোযোগ আনা গেল ভেবে ততক্ষণে আমি আনন্দিত। এবার বললাম যুদ্ধে কত লোক শহীদ হয়েছিল কেউ বলতে পারবে? আবার সে আগের অবস্থা। কে শোনে আমার কথা।
বললাম, কেউ কি জান না? দু ’একজন এবার উত্তর দেয়া শুরু করলো। প্রথম বেঞ্চের একজন বলল ৩০ লাখ। কিন্তু আর একজনের তাতে প্রবল আপত্তি। যাহ! এত নাহ। বললাম হ্যাঁ, এতই! সত্যি! এত! সে যুদ্ধের গল্প বলবো, তাতেও এত হৈ চৈ ? এত মানুষ প্রাণ দিল আমাদের জন্য, শুনবে না?
এবার কিন্তু সব চুপ। ছোট ছোট চোখে অপরাধবোধ। মনে হচ্ছে আমার কথায় মনোযোগী হয়ে তারা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাচ্ছে। এখন নিজেরাই বিভিন্ন প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে। ছুটির সময় হয়ে এল। প্রসঙ্গের বাইরে বাচ্চাগুলো একটা কথাও বলেনি। তারা বুঝতে চেষ্টা করলো এ দেশ স্বাধীন এত সহজে হয়নি। তাদের এ পতাকা এত সহজে আসেনি।
ক্লাস শেষ হলো। বাচ্চারাও আবার তাদের মতো। খুব তাড়াতাড়ি ভুলেও যাবে ক্লাসের এ আলোচনা। সিলেবাসের পড়াও খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে। কিন্তু ইতিহাস তো এত সহজে শেষ হয় না। বাচ্চারা ভুলে যাবে, আমরা বড়রা আবার মনে করিয়ে দেব আমাদের ইতিহাস। দায়িত্ব আমাদের।
ত্রিশ লাখ সংখাটা কতটা বিশাল, কত ত্যাগের; মননে মগজে বপন করার দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের। কেউ বোঝায়নি বলেই হয়তো জাতীয় সংগীতকে অন্য গানের সাথে সহজেই তুলনা করে ফেলি, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ালে সহজভাবে নেই না, বলি কি দরকার! অযথাই।
তারামন বিবি, ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীদের বাচ্চারা ভুলে যাবে বা চিনবে না, চেনানোর দায়িত্ব আমাদের বড়দের। আমাদের সন্তান কৃতজ্ঞ থাকুক দেশের প্রতি, রক্তের প্রতি। হৃদয় আমার ধন্য হোক, ধন্য হোক।
এইচআর/পিআর