ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বুদ্ধিজীবীর সংকট ও ভাঁড়ের দৌরাত্ম্য

মোহাম্মদ নূরুল হক | প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সাধারণত বুদ্ধিজীবীর কাজ— সমাজ-সংস্কৃতি-জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকে ক্ষমতাসীন দলের জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের গঠনমূলক সমালোচনা করা। জাতীয় সংকট শনাক্ত করে তা মোকাবিলার উপায় বাতলে দেওয়া। একই সঙ্গে নাগরিকদের স্ব-স্ব অধিকার ভোগের লক্ষ্যে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করাও। কিন্তু দেশের বুদ্ধিজীবী, বিশেষত কলাম লেখকদের কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর কোনোটিরই সাক্ষ্য পাওয়া যায় না। পরিবর্তে দেখা মেলে ভাঁড়ামি ও তোষামোদির দৌরাত্ম্যের।

অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী ও কলাম লেখক হয় ক্ষমতাসীনদের তোষামোদিতে ব্যস্ত থাকেন, নয়তো নিন্দায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন। তাদের বেশিরভাগেরই রচনায় ক্ষমতাসীন কিংবা বিরোধী দল— কারও কর্মকাণ্ডেরই কোনো গঠনমূলক সমালোচনা পাওয়া যায় না। পরামর্শও না। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও এ অভিযোগ অসত্য নয়।

বুদ্ধিজীবীর দায়িত্ব যেখানে শাসকগোষ্ঠীর ভুল ধরিয়ে দেওয়া, ভাঁড়ের কাজ সেখানে মনোরঞ্জন করা। এই প্রথা আদিকাল থেকেই চলে এসেছে। উভয়ের চিন্তা-বুদ্ধি-জ্ঞান কিংবা চাতুর্য-তোষামোদিই সমাজে তাদের স্ব-স্ব আসন ও অবস্থান নির্ধারণ করে দেয়। প্রথমজন সাধারণত শাসক শ্রেণির রোষানলে পড়েন আর দ্বিতীয়জন হন বাহবার পাত্র। প্রথমজনের কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ ভাগ্যে জোটে কারাবরণ, দ্বিতীয় জনের জন্য বরাদ্দ থাকে পদ-পদবি পুরস্কার। এ ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীরা শাসক শ্রেণির চক্ষুশূলের কারণ হলেও জনগণের বন্ধুতে পরিণত হন।

বিপরীতে ভাঁড়রা ক্ষমতাবানদের প্রিয়ভাজন হলেও জনগণের কাছে পরিহাসের পাত্র ছাড়া আর কিছুই নন। এসব কার্যকারণ সম্পর্ক ও ফল বিষয়ে ভাঁড়রা কিছুটা ওয়াকিবহাল হলেও তথা-বুদ্ধিজীবীদের বসবাস প্রায় অন্ধকারেই। ফলে তারা জানেন না, কখন শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হয়, কখন জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হয় দেশমাতৃকার সেবায়-শাসক শ্রেণির সহযোগিতায়।

বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যে জিনিসটি এখন প্রকট, সেটি চিন্তার দারিদ্র্য, মননের দৈন্য। তারা উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত বিষয়ে চিন্তা করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। ভুল সময়ে ভুল বিষয়ে কথা বলছেন। জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য শাসক শ্রেণিকে যখন প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দায়িত্ব বুদ্ধিজীবীদের, তখন তারা হয় স্তুতিসর্বস্ব রম্যরচনা লিখছেন, না হয় নিন্দায় আকীর্ণ গদ্য কার্টুন লিখে সংবাদপত্রের পাতার পর পাতা ভরাচ্ছেন। স্পেসের পর স্পেস নষ্ট করছেন অনলাইন নিউজপোর্টালগুলোর। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করছে। ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দলগুলো স্তুতি কিংবা নিন্দা করতে গিয়ে বুদ্ধিজীবী-কলামিস্টরা যেসব কর্মকাণ্ড করছেন, সেগুলো মোটামুটি এ রকম।

১. বুদ্ধিজীবীর ছদ্মবেশে ভাঁড়রা উপ-সম্পাদকীয়, নিবন্ধ বা কলামের নামে রম্যরচনা-গদ্য কার্টুন রচনা করছেন।

২. এসব রম্যরচনা-গদ্য কার্টুনে কোনো সংকট শনাক্তি কিংবা তার সমাধানের চেয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনার পাশাপাশি নিজেকেই রচনাটির মূল বিষয়ে পরিণত করছেন।

৩. প্রশংসার পরিবর্তে স্তুতি, সমালোচনার পরিবর্তে নিন্দাচর্চায় ব্যস্ত থাকছেন।

দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সংস্কৃতি ও শিক্ষা-খাতের বিভিন্ন অসঙ্গতি শনাক্ত করে, এর সমাধানের উপায় বাতলে দেওয়া দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীর নৈতিক দায়িত্ব। নাগরিক দায়িত্বও। শাসকগোষ্ঠী যখন ক্ষমতার মদমত্ততায় জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে, তখন সেই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয় লেখক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক-কলামিস্টদেরই। কিন্তু তারা যদি সুবিধাবাদী অবস্থানে থাকেন, অর্থনৈতিক সুবিধা নেওয়ার বিনিময়ে নীরবতা পালন করেন, উত্তরকালে ইতিহাস তাদের কখনোই ক্ষমা করে না।

মহাকাল স্বৈরশাসকদের পাশাপাশি এই তোষামোদকারী ও সুবিধাবাদী চরিত্রের লেখক-বুদ্ধিজীবীদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়। এই আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক সংকট ও এর সমাধান প্রসঙ্গে যে নিবন্ধ-কলাম লিখিত হবে, তার ভাষা-গদ্যভঙ্গিও হতে হবে বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ভারবাহী বিষয়ের লিখিত নিবন্ধ হওয়া উচিত তথ্যসমৃদ্ধ। একই সঙ্গে তত্ত্ব-তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণও থাকা প্রয়োজন। গদ্যভঙ্গিও বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে ভারবাহী হওয়া উচিত। অথচ এসময়ের কলামিস্টদের জনগুরুত্বপূর্ণ ভারবাহী বিষয়ে লিখিত নিবন্ধের ভাষাভঙ্গি হয়ে পড়েছে চটুল, যা বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবনে প্রায় বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় পাঠককে।

শুধু যে তারা ভাষাভঙ্গিকেই চটুল করে তোলেন তা নয়, বিষয় বর্ণনা-ব্যাখ্যাকেও রম্য রচনায় পর্যবসিত করেন। এসময় রম্য-ব্যঙ্গ রচনাকে কলাম-নিবন্ধ হিসেবে সংবাদপত্রগুলো উপ-সম্পাদকীয়-নিবন্ধ বিভাগে প্রকাশ করছে। এমন প্রকাশ-প্রচারণার সুযোগ পেয়ে এই রম্য লেখকরাও কলামিস্ট-বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে একই আসনে বসার সুযোগ দাবি করেন। বিষয়টি রম্য লেখকদের জন্য আত্মশ্লাঘার হলেও প্রকৃত চিন্তক-কলামিস্ট-বুদ্ধিজীবীদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে।

এসব রচনা এতটাই রম্য বা গদ্য কার্টুন বা ব্যঙ্গধর্মী হয় যে, তাতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো সংকট শনাক্তির চিহ্ন থাকে না। বরং সংকট শনাক্তির চেয়ে এসব রচনার নির্দিষ্ট বিষয়ের আলোচনার চেয়ে লেখক নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনাকেই মুখ্য করে তোলেন। পাশাপাশি নিজেকেই করে তোলেন ওই রচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এরফলে কোনো সংকট সমাধানের সূত্র না জেনে পাঠক কেবল লেখকের আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুরই শুনতে পায়।

এসব রম্যরচনাকারীদের লেখায় তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও কোনো ভালো কাজের প্রশংসার রেশমাত্র পাওয়া যায় না। সাক্ষাৎ মেলে না গঠনমূলক সমালোচনার ছিটেফোঁটাও। বিপরীতে মেলে তোষামোদি-স্তুতি কিংবা নিন্দায় আকীর্ণ পাতার পর পাতা। এ কারণে এসব রম্যরচনা কিংবা ব্যঙ্গগদ্য পড়ে জাতি কোনো দিক-নির্দেশনা পায় না। আর ক্ষমতাসীন কিংবা বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকও এসব রচনাকে গ্রাহ্য করেন না। অনেক সময়ই তারা রম্যরচনাকে বিনোদনের উপকরণ মনে করেন। সে কারণে রসিয়ে রসিয়ে পাঠ করেন বটে, কিন্তু সেই পাঠ থেকে সমাজ পরিবর্তনের কিংবা সংকট সমাধানের কোনো উপকরণ গ্রহণ করেন না।

সমাজে বহুযুগ ধরে পচন ধরেছে। সেই পচন এখন মহামারি আকার ধারণ করে। এর প্রধান শিকার লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরা। এই বুদ্ধিজীবীদের চিন্তার ধার নেই, কল্পনার প্রাখর্য নেই। মননের গভীরতা কিংবা মনীষার কান্তিও নেই। আজকের বুদ্ধিজীবীরা চিন্তার দারিদ্র্যে ভুগছেন। হয়ে পড়েছেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। বিপরীতে ভাঁড়রা দখল করছেন তাদের স্থান। এই ভাঁড়রা নিজেদের ভাবেন জাতির উদ্ধারকর্তা, শাসকদের পরামর্শক। কিন্তু যে পদ্ধতিতে শাসকদের দোষ-ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করতে হয়, পরামর্শ দিতে হয় রাষ্ট্রপরিচালনার, সেটি তাদের জানা নেই। তাই তারা হাস্যরস সৃষ্টির মাধ্যমে ভাঁড়ামির আশ্রয় নেন। আর এই ভাঁড়দের দৌরাত্ম্যে মননশীল লেখকরা প্রায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন। কারণ বিষয় যখন জ্ঞানচর্চা কিংবা নাগরিক অধিকার প্রশ্নে প্রয়োজনীয় সংকট নিরূপণ ও সমাধানের পথ খোঁজা, সেখানে ভাঁড়দের রসিকতার সঙ্গে চিন্তাশীলতা তর্কে জড়াবেন না—এটাই স্বাভাবিক।

তবে, তর্কে না জড়ালেও ডেঙ্গু নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের লুকোচুরি, ছেলেধরার গুজব, ছেলেধরা সন্দেহে সাধারণ মানুষকে গণপিটুনিতে হত্যা, বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতির পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটে দেশ যখন প্রায় বিপাকে তখন বুদ্ধিজীবীদের উচিত ছিল শাসকশ্রেণীসহ সমাজের সামনে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা। কিন্তু বুদ্ধিজীবীরা সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি। একদল সরকারের সবকাজকেই ভালো বলে স্তুতি করেছে, আরেক দল সবকাজেরই ছিদ্রান্বেষণ করেছে। এরফলে দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সেই শূন্যতার ভেতর ঢুকে পড়েছে ভাঁড়রা। তারাই এখন ভাঁড়ামিপূর্ণ-প্রলাপসর্বস্ব রচনাকে কলাম-নিবন্ধ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।

শুধু তাই নয়, এই ভাঁড়দের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে সদ্য স্কুলের গণ্ডি পার হওয়া প্রায় কিশোরটিও নাম লেখাচ্ছে। তাদের একেকজনের লেখা দেখলে মনে হয়, তারা সর্বশাস্ত্রবিশারদ। একই ব্যক্তি পাড়ার ডাংগুলি থেকে শুরু করে বিশ্বক্রিকেট, গ্রাম্য শালিস থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারব্যবস্থাপনা, গ্রামের মুদি দোকানদারের হালখাতা থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব, গ্রাম্য কবিরাজের সর্বরোগের চিকিৎসা থেকে শুরু করে এফআরসিএস ডাক্তারের চিকিৎসা পদ্ধতির ভুলত্রুটি, সব বিষয়েই লিখছেন এই ভাঁড়রা। তাদের লেখা থেকে বাদ যাচ্ছে না, নাচ-গান-সাহিত্য-চলচ্চিত্র-রাজনীতি-অপরাধ-সংবাদবিশ্লেষণও। এতে তারা যেমন সমাজে হাসির পাত্র হচ্ছেন, তেমনি সত্যিকারের চিন্তক-লেখক-কলামিস্ট-সাংবাদিক সম্পর্কেও লোকের মনে এমন একটি বিদ্রূপাত্মক প্রমূতি আঁকা হয়ে যাচ্ছে, যা বহুকালের চেষ্টায়ও হয়তো মুছে ফেলা সম্ভব হবে না।

এখন দেখতে হবে এর জন্য দায়ী কারা? যারা ভাঁড়ামিসর্বস্ব রচনা লেখেন, তারা না কি এসব রচনা যারা প্রকাশ-প্রচার করেন, তারা? গভীরভাবে চিন্তা করলে দ্বিতীয়পক্ষেরই দোষ দিতে হয় বেশি। দৈনিক-অনলাইন নিউজ পোর্টালের উপ-সম্পাদকীয়-নিবন্ধ-কলাম-অভিমতের পাতার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ওপরই এর বারোআনা দোষ বর্তায়। কারণ লেখা নির্বাচন ও সম্পাদনার দায়িত্ব তারাই পালন করেন। বিষয়টি অনেকটা আম-দুধের জুসের মধ্যে কলমিশাকের ঝোল মিশিয়ে খাওয়ার মতো। কিন্তু এই সত্য না ভাঁড়লেখকরা উলব্ধি করতে পারেন, না সংশ্লিষ্ট পাতার দায়িত্বপ্রাপ্তরা বোঝেন।

অথচ গণমাধ্যমের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদেরই উচিত—যে রচনা রম্যপাতায় ছাপানোর উপযুক্ত, সেটি উপ-সম্পাদকীয়-নিবন্ধ-কলাম-অভিমত বিভাগে না ছাপানো। আর লেখা প্রকাশের আগে এর গুণাগুণ ও গুরুত্ব বিচার করা। এরপরই প্রকাশের জন্য নির্বাচন করে সম্পাদনায় হাত দেওয়া। বর্তমানে যেভাবে উপ-সম্পাকীয়-নিবন্ধ-কলাম-অভিমত বিভাগে রম্যরচনা কিংবা গদ্যকার্টুন প্রকাশিত হয়ে চলেছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই ভাঁড় ও চিন্তকের পার্থক্য ঘুচে যাবে। লোকে লেখক-চিন্তক-কলামিস্ট দেখলে তাকে ভাঁড় বলেই ঠাওরাবে। ভবিষ্যতে চিন্তক-লেখকের মর্যাদা রক্ষা করতে চাইলে এখনই সচেতন হতে হবে গণমাধ্যমগুলোকে। নাহলে ইতিহাসে এই সময়ের গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে একটি পরিহাসপূর্ণ অধ্যায় রচিত হবে। এরজন্যও দায়ী থাকবে খোদ গণমাধ্যম।

লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।

এইচআর/এমকেএইচ

আরও পড়ুন