তারুণ্যের বিসিএস সংকট : আমাদের করণীয়
বেশ অনেক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের সাফল্যের গল্প নিয়ে প্রায় একইরকম বেশকিছু খবর চোখে পড়ছে। ভাবছিলাম, ছাত্রজীবন থেকেই দেখি যারা সরকারি কর্ম কমিশনের অধীনে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান, তাদের সফলতার গল্পই শুধু পত্রপত্রিকায় গুরুত্ব দিয়ে প্রচারিত হয়। এমনকি যারা প্রফেশনাল ক্যাডারগুলোতে সফল, তাদের কথাও নয়। নতুন করে এ ধারাটি আরো বেশি মাত্রায় যোগ হয়েছে ইদানীং, বিশেষ করে কোটা আন্দোলনের পর থেকে। আমার শিক্ষক, সহকর্মী বা বন্ধুরা প্রায়ই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, এই একটিই কি আমাদের সব জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য? তা তো নয়। আরো অনেক পেশায়ই অসংখ্য ছেলে-মেয়ে ভীষণ ভালো করছে, দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করছে, দেশের নাম উজ্জ্বল করছে; সর্বোপরি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এর মধ্যে কয়েকটির নাম না নিলেই নয়। প্রথমত. যারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন, চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, ক্ষুদ্র-বৃহৎ উদ্যোক্তারা বা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে সফলতার সাথে যারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং এনজিওর মাধ্যমে প্রান্তিক জনমানুষের জীবন উন্নয়নের কাজ করছেন। দ্বিতীয়. দেশের বাইরে নামকরা সব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন দেশের জন্য কাজ করবেন বলে বা দেশ নিয়ে গবেষণার কাজ করছেন এবং বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে যারা দেশকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে যাচ্ছেন- এরা সবাই সফল। কিন্তু তাদের গল্প কি আমরা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে সেভাবে পাই যাতে ওইসব পেশায়ও আমাদের ছেলে-মেয়েরা আগ্রহী হয়? শুধু আমাদের দেশে কেন, সারা বিশ্বেই প্রশাসন ও ক্ষমতা সবসময়ই প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু। তাই বলে একটি সমাজে যখন শুধুই ক্ষমতার প্রচার প্রসার পায় তখনই সামাজিক অবক্ষয় নিশ্চিত হয়, কেননা এতে নিরীহরাও ক্ষমতা লোভী হয়ে উঠতে বাধ্য! রাজনীতির ক্ষেত্রই তার প্রমাণ।
অবশ্যই সরকারি কর্ম কমিশনে দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ বেশি, ক্ষমতাও বেশি। এখানে কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় সরকারের কাছাকাছি থেকে জনসাধারণের উপকার করা বা আত্ম-উন্নয়নের নিশ্চিত সুযোগও বেশি। তাই বলে বিসিএস বা সরকারি অন্য চাকরিতে কোয়ালিফাই করেই যে সবাই দেশ সেবা করার কাজটি সঠিকভাবে করছেন তা যেমন নয়, তেমনি এমন অনেকেই আছেন যারা সত্যিই দেশের কাজে অন্যায়ের সাথে আপস করেন না। দুর্নীতি যেমন করছেন অনেকে, তেমনি অনেক ছেলে-মেয়ে ক্ষমতার মোহেই সরকারি চাকরির প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। সবাই যে দেশ সেবা করার জন্যই সরকারি কাজ করছেন তাও কিন্তু নয়। বরং চাকরির নিশ্চয়তা, সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ, সামাজিক মর্যাদা আর সম্প্রতি যোগ হওয়া বাড়তি সুযোগ-সুবিধাই এটিকে বেশ আকর্ষণীয় করেছে তরুণ প্রজন্মের কাছে। সেটিও খুব দোষের কিছু নয়। মানতেই হবে বিষয়টি তাই-ই হওয়া উচিত এবং এটি সরকারের একটি সফলতা বলা চলে। এর অর্থ হলো, সরকার দেশের প্রশাসনে কাজ করার জন্য তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। এর উল্টো চিত্রও কিন্তু আছে। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তরুণ সমাজের মধ্যে বিসিএস নিয়ে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তাকে পুঁজি করে দেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে খুব অদ্ভুত কিছু প্রচারণা করেছে।একটি উদাহরণ দিচ্ছি; একটি পত্রিকা এমআইটির (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) এক গ্র্যাজুয়েটের সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেছে তিনি দেশে ফিরে বিসিএস দিয়ে দেশের সেবা করতে চান! এ বক্তব্যের সত্যতা যাচাই না করে শুধু খালি চোখে, যা দেখা যায় তা হলো দেশের যেসব ছেলেমেয়ে বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে চাইছিল তারা কি এটিই ভাববে না যে এমআইটিতে পড়েও যদি বিসিএসই দিতে হয় তাহলে আর দেশের বাইরে পড়তে গিয়ে কি হবে? দেশ সেবা করার কি আর কোনো উপায় নেই? যারা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ও পোস্টডক করে দেশে ফিরে শিক্ষকতাসহ অন্য বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন তারা কি দেশের সেবা করছেন না? আমি জানি না আমাদের দেশে ক'জন ওরকম নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে বিসিএসে বসেছেন। আদৌ সেটা প্রয়োজন হয়েছিল কিনা? দায়িত্বশীল মিডিয়ার কাজ কিন্তু তরুণ সমাজকে সঠিক পথ দেখানো, নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন নয়।
ঠিক একইভাবে সফলতার গল্প বলতে এদেশে যুগে যুগে সরকারি প্রশাসনে চাকরি পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েই এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেককেই শুনতে হয়, আপনি কি বিসিএসে কোয়ালিফাই করেননি? তারও বেশি হতাশার বিষয় হলো, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষে ওই ব্যাচের মাস্টার্স এর ক্লাসে ছাত্র উপস্থিতির সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় অর্ধেকে! যদিও অ্যাটেনডেন্স মার্কসের জন্য এখন অনেক ছাত্র-ছাত্রী ক্লাসে উপস্থিত হয়, কিন্তু নিয়মিত ক্লাস করা সেসব ছাত্রদের পরীক্ষার খাতায় পারফরম্যান্স দেখলে রীতিমতো কষ্ট হয়। বিসিএসের প্রস্তুতি যেহেতু সম্পূর্ণ আলাদা, স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের খুব সমস্যা হয় দুই ধারার পড়াশোনা একই সাথে চালিয়ে যেতে। কিন্তু আমরা যারা পড়াই তাদের জন্য এ অবস্থা মেনে নেওয়া যে কি ভীষণ চ্যালেন্জিং, সেটা কি বলে বোঝানো যাবে? একজন শিক্ষক নিয়মিত পড়াচ্ছেন, ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকছে, তবুও ক্লাসে যা পড়ছে পরীক্ষায় খাতায় সেসবের কিছুই লিখতে পারছে না। কেননা, বাড়িতে তারা অন্য কিছু পড়ছে! মাস্টার ডিগ্রির এর উদ্দেশ্য হলো একটি বিষয়ে স্পেশালাইজেশন বা বিশেষ ট্রেনিং। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময় কিছুতেই এই ডিগ্রির প্রতি সুবিচার করা সম্ভব নয়। অস্বীকার করার উপায় নেই উচ্চশিক্ষার নিম্নমানের জন্য শিক্ষার্থীদের এই টানাপোড়েন অনেকাংশে দায়ী। যত দক্ষ শিক্ষকই হন, শিক্ষক দিয়ে শুধুই শিক্ষকতা হয়, শেখার কাজ হয় না। সে কাজটি শিক্ষার্থীকেই করতে হয়। এতে ছাত্রদের না হচ্ছে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা, না হচ্ছে অন্যান্য ধরনের প্রতিযোগিতামূলক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিং। অনেক ভালো ছাত্ররা শুধু বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য ভালো করে একটা থিসিসের কাজ করে না; অথচ এরাই হতে পারতো ভালো শিক্ষক বা গবেষক। আমার নিজেরই এরকম অনেক ছাত্র আছে। এমন অনেক বিষয় বা বিভাগ রয়েছে, যেখানে ছাত্ররা অনার্সের প্রথম বছর থেকেই বিসিএসের জন্যই পড়ে, আর ক্লাসে পাসের জন্য যতখানি দরকার ততখানি পড়ে নেয়! এ অবস্থার একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আবশ্যক। কিন্তু সবাই তো বিসিএসে কোয়ালিফাই করে না, হতাশার মাত্রাটি তখন কোথায় পৌঁছে? একই সাথে বেসরকারি নিয়োগদাতাদের উষ্মা, ‘তারা যথেষ্ট যোগ্য প্রার্থী পাচ্ছেন না’ (প্রথম আলো, ২৩ জুন, ২০১৯)। একই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে দেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতক পাস তরুণ-তরুণী বেকার। সর্বশেষ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ের প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ব্রুনেইয়ের জনসংখ্যার থেকে বেশি।’
শিক্ষিত বেকারত্বের হার যখন এমন, তখন বিসিএসের মতো সীমিত সুযোগের গল্পে সীমাবদ্ধ থাকলে তরুণ প্রজন্মকে ভুল পথে পরিচালিত করা হয়। একই সাথে প্রত্যেকটি ছাত্রের আলাদা ও স্বকীয় যেসব যোগ্যতা ও গুণাবলি রয়েছে তাকে অস্বীকার করা হয়। আমার মনে হয় সমাজে বেকারত্ব বা তরুণদের হতাশা রোধে আমাদের আরো অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। প্রতিটি ছেলে-মেয়ে যেন নিজের মেধা, সামর্থ্য ও যোগ্যতা সম্পর্কে অবহিত হয় এবং সেই অনুযায়ী নিজের পেশা পছন্দ করে নিজেকে তৈরি করে সে ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য অবশ্যই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার-ক্লাব নামে কাউন্সেলিংয়ের জন্য একটি বিভাগ রাখা প্রয়োজন, যারা এ ধরনের মূল্যায়নে ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করবে। বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি রয়েছে বলেই তাদের ছাত্র-ছাত্রীরা বরাবরই চাকরির বাজারে এগিয়ে, কেননা তারা নিজের স্বকীয়তা বুঝে সেই অনুযায়ী পরামর্শের মাধ্যমে ক্যারিয়ার খুঁজে নেয়। সবাইকে সরকারি চাকুরে হতে হবে বা সেটাই সবচেয়ে বেশি ভালো- এরকম বার্তা যদি দায়িত্বশীল সূত্রগুলো দিতেই থাকে, তাহলে এর প্রভাবটি সবচেয়ে বেশি পড়ে সমাজের মধ্যবিত্ত অংশের ওপর; যারা শুধু মেধার জোরেই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। তারাই মেধা যাচাইয়ের পরীক্ষায় সাহসের সাথে নামে সবার আগে। ব্যর্থ হলে সবার আগে তারাই হতাশ হয় যেহেতু তাদের বিকল্প সফলতার পথগুলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে সীমাবদ্ধ। তাই সবাইকেই সফল বলুন, সব পেশাকেই সবার দৃষ্টিগোচর করুন। প্রতিটি পেশার সফল ছেলে-মেয়েদের খুঁজে নিয়ে তরুণ প্রজন্মকে তাদের গল্প শোনান ও প্রতিটি পেশার সম্ভাবনার কথা প্রচার করুন। সব পেশার প্রতি শ্রদ্ধা ও আগ্রহ তৈরি করুন। একেবারে ক্ষমতাধর প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা শিক্ষক এবং চূড়ান্ত সফল উদ্যোক্তার চেয়েও যারা প্রারম্ভিক অবস্থানে রয়েছেন তাদের গল্পই তরুণদের বেশি অনুপ্রাণিত করবে, কেননা শুরু থেকে এ পর্যায়ে পৌঁছানো তাদের জন্য সহজ। প্রতিটি পেশায় ভালো করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার শোনান। ব্যর্থতার গল্প ও বিকল্প পেশায় সফলতার উপায়ও প্রকাশ করুন।
শুধু মিডিয়া নয়, বাবা-মায়েদেরও নিজেদের ইচ্ছা সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। অনেক ছাত্রকে দেখেছি শিক্ষক হওয়ার ভীষণ ইচ্ছা, কিন্তু পরিবারের ইচ্ছায় সরকারি চাকরির জন্য ক্লাসের পড়া ছেড়ে বিসিএসের জন্য পড়ছে। সবাই যদি প্রশাসনিক কর্মকর্তাই হন, তাহলে আমরা অন্যান্য পেশায় জিনিয়াস বা ট্যালেন্ট কোথায় পাবো? সবচেয়ে বড় ভূমিকা যারা রাখতে পারেন তারা হলেন বেসরকারি নিয়োগকর্তারা যারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির নিশ্চয়তা, স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, কাজের সঠিক বিবরণ, পর্যাপ্ত ট্রেইনিং, বেতন-বোনাস নিয়মিতকরণ, জরুরি ছুটি সহজীকরণ ও কাজের সঠিক সময় নির্ধারণসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিলে তরুণরা বেসরকারি খাতে চাকরির প্রতি আস্থা রাখতে পারতো। সেই সাথে সরকারকেও বেসরকারি খাতে চাকরির নিশ্চয়তা বৃদ্ধি ও কর্মকর্তা অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের জন্য উদ্যোক্তাদের চাপ দিতে হবে। বেকারত্ব রোধে সরকারের অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি তরুণদের প্রয়োজন ও প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী যেমন দৃঢ়ভাবে সব ধরনের কোটা তুলে দিয়েছেন, তেমনি সরকারি কর্ম কমিশনের নিয়োগ বোর্ডে কর্তাব্যক্তি বিশেষে যেসব দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কথা শোনা যায় সেসব ও সরকারকে শক্ত হাতে নির্মূল করতে হবে। অন্যদিকে শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যা কমানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি বিভাগে শিক্ষক সংখ্যার আনুপাতিক হরে ছাত্রসংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা বাদে অন্য সব পেশায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো স্নাতক ডিগ্রিই গৃহীত হবে। এবং যারা শুধু ওই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে চায় তারাই মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হবে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে। গ্রাজুয়েশনের পর যেহেতু সব ধরনের সুযোগই খোলা থাকে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের খুব দেরি হয়ে যায় না, তখনই বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। অযথা মাস্টার্সের চাপ নেয়ার তো দরকার নেই।পেশাগত কারণে প্রফেশনাল মাস্টার্স প্রয়োজনে পরেও করা যায়। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতেও তাই-ই হয় এবং চার বছরের অনার্স কোর্স চালুর উদ্দেশ্যও মূলত সেটিই। যত কম সময়ে তরুণ সমাজকে শ্রমবাজারে যুক্ত করা যায় ততই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ে। যে কারণে সেসব দেশ উচ্চশিক্ষাকে খণ্ডকালীন ও অনলাইন করার ওপর জোর দিচ্ছে; যেন তরুণরা কাজের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে স্নাতকোত্তর শিক্ষা, চালিয়ে যেতে পারে। এতে তাদের পড়ার সময় ও কাজের সামর্থ্য- দুটোরই যথাযথ ব্যবহার সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা, এ ব্যবস্থায় ছাত্রজীবন শেষ হয়ে যাওয়ার পরে স্বল্প-দীর্ঘ বেকারত্ব যে হতাশা তৈরি তা অনেকাংশেই রোধকরা সম্ভব। সেই সাথে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ক্লাবের মাধ্যমে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বেসরকারি নিয়োগদাতাদের সাথে লিয়াজোঁ তৈরি করতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়োগের জন্য। তাদের চাহিদা অনুযায়ী ছাত্রদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নিশ্চিতের জন্য কারিক্যুলামের সমন্বয় সাধন করতে হবে ও প্রতিটি কোর্সের বাস্তবিক প্রয়োগ সম্পর্কে ছাত্রদের অবহিত করতে হবে। সর্বোপরি, এমন একটি জাতীয় সংকট মোকাবিলায় বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সরকার, বেসরকারি খাত এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে এখন থেকেই একযোগে কাজ করতে হবে। কেননা, তারুণ্যের হতাশা তাদের কর্মক্ষমতা হ্রাসের জন্য বিশেষভাবে দায়ী।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/পিআর