দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক
নিরাপদ পণ্য ও খাদ্যের মান নির্ণয়ে ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষকে দুই মাসের মধ্যে হটলাইন চালুর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ভোক্তারা ০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮ নম্বরে যোগাযোগ করে অভিযোগ জানাতে পারবেন। পাশাপাশি ৯৯৯ এবং ৩৩৩ নম্বরে কল করেও অভিযোগ জানানো যাবে। এ তিন নম্বরে ছুটির দিনসহ (শুক্র ও শনিবার) সপ্তাহের সাতদিন ২৪ ঘণ্টা হটলাইন চালুর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে ভোক্তারা সব সময় অভিযোগ জানাতে পারেন।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) ৪০৬ পণ্য ছাড়াও বাজারে প্রচলিত অন্য পণ্যের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে দেশব্যাপী সারা বছর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া মানহীন ৫২ পণ্যের মধ্যে পুনঃপরীক্ষায় উত্তীর্ণ পণ্যগুলোসহ বাজারের সব পণ্যের মান সব সময় পরীক্ষার (র্যান্ডম টেস্টিং) নির্দেশনাও দিয়েছেন আদালত। মানহীন পণ্যের বিষয়ে গত রোববার (১৬ জুন) শুনানি করে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় বাজারে থাকা নিম্নমানের ৫২ পণ্যের বিষয়ে শুনানিতে এ আদেশ দেন আদালত। এ আদেশ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও অভিনন্দনযোগ্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সত্যি বলতে কি খাদ্যে ভেজাল এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে ভেজালের ভিড়ে আসল চেনাই দায়।
খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটি গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত হলেও এ বিষয়ে আইন প্রয়োগে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। মাঝেমধ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। যৎসামান্য জরিমানা করা হয়। ব্যস, ওই পর্যন্তই। কিছুদিন পরই আবার শুরু হয় ভেজালের সমারোহ।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া ১৪ বছরের কারাদদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা প্রয়োগ করার কোন নজির নেই। অথচ খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি এখন ওপেনসিক্রেট। খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের মান ও বাজার নিয়ন্ত্রণে ৭টি মন্ত্রণালয় কাজ করে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এখানে এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজমান। কার কোন্ দায়িত্ব, কে কিভাবে পালন করবে সেটা নিরূপণ করতেই সময় চলে যায়। আমাদের ভোক্তা অধিকার অধিদফতর আছে। দেশে ভোক্তা অধিকার আইনও আছে। কিন্তু কোথাও এই আইনের তেমন প্রয়োগ হতে দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে তাদের তৎপরতা চোখে পড়লেও তা পর্যাপ্ত নয়।
খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও তা সন্তোষজনক নয়। আমাদের দেশে দূরারোগ্য রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ভেজালমিশ্রিত খাবার খাওয়া। খাদ্যে ভেজাল করা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এই ভয়ানক অপরাধীদের তেমন কোনো শাস্তিই হয় না। ভেজালের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে যে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব এ ব্যাপারে সবাই একমত।
কাজেই প্রয়োজনে নতুন আইন করে হলেও দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করতে হবে ভেজাল বন্ধে। খাদ্যে ভেজালের বিষয়টিকে হালকা করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।
এইচআর/এমকেএইচ