টেলিভিশনের মলিন ঈদ
ঈদ বিনোদনে দর্শকরা এবার কোথায় মজে থাকবেন, সেই পূর্বাভাস আগেই পাওয়া গেছে। ঈদের ছুটিতে রাজধানী-গ্রামে যেখানে যে থাকবেন, তিনি ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত থাকবেন। কোন নাটক, টেলিফিল্ম, ঈদ ধারাবাহিকের বদ্যি দিয়ে সেই জ্বর সারানোর উপায় নেই। তাই টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এবার আগেই হাত গুটিয়ে নিয়েছিল, তারা ঈদের নাটক, ধারাবাহিক, টেলিফিল্ম বানাবে না।
ঈদের ছুটিতে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা রয়েছে। এবং খেলার যে সূচি তাতে দেখা যাচ্ছে দর্শকরা যে সময়টায় বিনোদনের জন্য টেলিভিশনে চোখ রাখেন, তখন খেলা চলবে। টেলিভিশনের সবচেয়ে চাহিদার সর্বোচ্চ সময়টি, খেলারও চরম উত্তেজনাকর মুহূর্ত। তাই বিজ্ঞাপনদাতারা, যে টেলিভিশন খেলা দেখাবে সেখানেই তার পণ্যের বিজ্ঞাপন দেবে। নাটক, ধারাবাহিক বা টেলিফিল্মে বিজ্ঞাপন দিয়ে অপচয় করবে না।
এই বিবেচনায় নাটক উৎপাদন সাধারণ ঈদ উৎসবের তুলনায় চার আনা পরিমাণ হয়েছে হয়তো। তবে এই উৎপাদনটিও টেলিভিশনের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে হয়নি। হয়েছে বিজ্ঞাপন এজেন্সির হেঁসেলে। নাটকের বিষয়, লেখক, পরিচালক, পাত্র-পাত্রী নিয়ে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের কোন আপত্তি-অনাপত্তির সুযোগ নেই। এজেন্সি বিজ্ঞাপন যুক্ত করে নাটক, ধারাবাহিক, টেলিফিল্ম পাঠাবে, টেলিভিশন চ্যানেল অনুগত কর্মীর মতো সেটি প্রচার করবে।
অনুষ্ঠান নির্মাণ চ্যানেলের হাত ফসকে এজেন্সির কাছে এবারই প্রথম গেল না। এটি গত কয়েক বছরের বদঅভ্যাস। এই বদ অভ্যাসের ফলে টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান বিভাগ অকার্যকর হয়ে গেছে। প্রথম চ্যুতি শুরু হয় টেলিভিশনের অন্দর থেকেই। অনুষ্ঠান প্রধান , প্রযোজকদের চিন্তা ও রুচিকে উপেক্ষা করে, টেলিভিশন চ্যানেল মালিকেরা বিজ্ঞাপনের লোভে বিপণন বিভাগের রুচিকে প্রাধান্য দিতে থাকে। তাদের ফরমায়েস মতো নির্মাণে বাধ্য করা হতো অনুষ্ঠান বিভাগকে। সেটি যতো নিম্নরুচিরই হোক না কেন।
এই রুচিহীনতা কিন্তু বিজ্ঞাপন থেকে আয় বাড়াতে পারেনি। বরং বিজ্ঞাপনদাতারা বরাদ্দ কমিয়েছে। নির্মাণের খরচ কমানোয় সংগত ভাবেই অনুষ্ঠানের মানও নেমে গেছে। ধীরে ধীরে এজেন্সি গুলো তাদের পণ্যের নির্ভর নাটক, টেলিফিল্ম তৈরি শুরু করে নিজ উদ্যোগেই। সেই নির্মাণ চ্যানেল গুলো লুফে নিতে থাকে।
তবে সব নির্মাতা ও এজেন্সি যে টেলিভিশনের জন্য মুখিয়ে আছে তা নয়। কোন কোন এজেন্সিতো টেলিভিশনকে হিসেবের মধ্যেই রাখছে না এবার। বেশ কয়েকজন নির্মাতাও এবার ঈদে ইউটিউবে তাদের নাটক, ধারাবাহিক বা টেলিফিল্ম তুলে দেবেন। তারা বিশ্বাস করেন টেলিভিশনের চেয়ে ইউটিউবেই তারা বেশি দর্শক পাবেন। এই বিবেচনতাতেও এবারের ঈদ টেলিভিশনের জন্য আনন্দের হচ্ছে না।
লেখক : বার্তা প্রধান, সময় টিভি।
এইচআর/পিআর