ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং নিয়ে লন্ডন কাণ্ড!

তানভীর আহমেদ | প্রকাশিত: ০৯:৪০ এএম, ২১ মে ২০১৯

শিক্ষার মান নিয়ে গবেষণা করে, লন্ডনভিত্তিক এমন একটি প্রতিষ্ঠান এশিয়া অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চমানের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান, গবেষণা, জ্ঞান আদান-প্রদান এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি- এই চারটি মৌলিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত জরিপে নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়সহ শ্রীলঙ্কার ‘ইউনিভার্সিটি অব কলম্বো’র নাম থাকলেও ছিল না প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। টাইমস হাইয়ার এডুকেশন নামে লন্ডনভিত্তিক এই প্রকাশনাটি ২০১৯ সালের যে তালিকা দিয়েছে, সেখানে এশিয়ার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অনুমোদিত ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটিও স্থান পায়নি এই তালিকায়।

দুই সপ্তাহ ধরে এই সংবাদটি নিয়ে সারা দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীলরা নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেই সকল ব্যাখ্যা দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে আলোচনায় যাচ্ছি না। গত ১৭ মে লন্ডনে বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ৪৫ হাজার ডলার আর্থিক অনুদান দিয়ে জরিপকারী সংস্থার সাথে নিবন্ধনের ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার পর থেকে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

পাঠকদের একটু জানিয়ে রাখি, লন্ডনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ঢাকা ইউনির্ভাসিটি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে'র পক্ষ থেকে প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও তার সাথে যুক্তরাজ্য সফরকারী শিক্ষক প্রতিনিধি দলকে একটি মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমি সেই অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলাম। ইতিপূর্বে এই সংগঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, ডিন ও সম্মানিত শিক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সেই সূত্র ধরেই শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের উপস্থিতি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

আলোচনার প্রাসঙ্গিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক র‌্যাংকিং বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে শিবলী রুবাইয়াতুল র‌্যাংকিং করতে গেলে যে সকল প্রতিষ্ঠান আর্থিক নিবন্ধন নিয়ে থাকে সেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। স্বাভাবিক ভাবেই যে সময় টাইমস হাইয়ার এডুকেশন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে ঠিক সেই সময় ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে তালিকাভুক্তির বিষয়টি আলোচনায় নতুন খোরাকের জন্ম দেয়। যদিও প্রফেসর শিবলী টাইমস হাইয়ার এডুকেশনের কথা বলেননি, তিনি বলেছেন, এএসিএসবি এবং ইকুইন্স নামে দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইউকে'র প্রেসনোটে টাইমস হাইয়ার এডুকেশনের নাম দেওয়া না থাকলেও বাংলাদেশের কয়েকটি খবরের কাগজে তার বক্তব্যটিতে টাইমস হাইয়ার এডুকেশন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ৪৫ হাজার ডলার দাবি করার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যেটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। তবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের এই বিষয়টি মনে করাটাই স্বাভাবিক যে প্রফেসর শিবলী টাইমস হাইয়ার এডুকেশনের তালিকা নিয়েই মন্তব্য করেছেন। যদিও আরেকটু সতর্ক হলে পাঠকের বিভ্রান্তি আমরা দূর করতে পারতাম। তাৎক্ষণিক ভাবে প্রফেসর শিবলীর সাথে যোগাযোগ করতে না পারা বা এএএসিএসবি এবং ইকুইনসের আর্থিক নিবন্ধনের বিষয়টি এবং টাইমস হাইয়ার এডুকেশনের সাথে যোগাযোগ করে তথ্য যাচাই করতে না পারা ছিল আমাদের সীমাবদ্ধতা।

টাইমস হায়ার এডুকেশনের তালিকা নিয়ে যেহেতু নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তাই আমি ম্যাগাজিনটির সম্পাদক জন গ্রিলের সাথে যোগাযোগ করি। গ্রিল আমাকে বললেন, তাদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আর্থিক লেনদেনের কোন কথা হয়নি। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির চিফ নলেজ অফিসার ফিল বেটি আমাকে একটি ইমেইল বার্তায় জানান, তারা সম্পূর্ণ অলাভজনক স্বেচ্ছাশ্রম ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথা অনুযায়ী প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই নিজস্ব উদ্যোগে টাইমস হায়ার এডুকেশনের ওয়েব সাইটে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য জমা দিতে হয়। সেই তথ্যেের ভিত্তিতে নিজস্ব গবেষণা ও তথ সংগ্রহের পর টাইমস হায়ার এডুকেশন তাদের তালিকা প্রকাশ করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যথা সময়ে তাদের তথ্য জমা দেয়নি বলে তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আসেনি। ২০১৯ সালের জন্য তথ্য চাওয়া হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। হতাশাজনক কথা এই যে আগামী ২০২০ সালের তালিকার জন্য তথ্য সংগ্রহ শেষ। আগামী সেপ্টেম্বরে টাইমস হায়ার এডুকেশন ২০২০ সালের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাসহ প্রকাশনাটি বের করবে। সেখানেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থাকবে না। টাইমস হায়ার এডুকেশন কর্তৃপক্ষ বার বার তাগাদা দিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই ইমেইলের জবাব দেয়নি এবং সংস্থাটির ওয়েব সাইটেও তথ্য আপডেট করেনি।

প্রফেসর শিবলী আমাদের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর ইউরোপ সফরে চলে যাওয়ায় তার সাথে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবুও আমি তার সাথে টেলিফোনে কথা বলেছি। তার বক্তব্যটি পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেটি তুলে ধরছি- ‘আমি মূলত এএসিএসবি এবং ইকুইন্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ‘বিজনেস স্কুল’ নিয়ে কাজ করছি। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বমানের র‌্যাংকিং করে। আমরা যদি সেখানে যুক্ত হতে পারি তাহলে সেটা তো আমাদের গর্বের বিষয়।

অথচ যেটা নিয়ে কথা বললাম না, সেটা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে! আমি ওই অনুষ্ঠানে মূলত এএসিএসবি এবং ইকুইন্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছিলাম। তাদের সঙ্গে কাজ করতে হলে প্রথমে ৩০ হাজার ডলার দিয়ে এর সদস্য হতে হয়। এরপর প্রতি বছর ১৫ হাজার ডলার দিতে হয়। সে হিসেবে আমি এক বছরে ৪৫ হাজার ডলারের কথা বলেছি। এটার সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে তা খুবই ভালো হবে। ইতোমধ্যে তাদের সিঙ্গাপুর অফিসেও আমি ঘুরে এসেছি।’

এখন বিভ্রান্তির জায়গাটি হলো এএসিএসবি এবং ইকুইন্স সম্প্রতি তাদের জরিপ প্রকাশ করেনি। টাইমস হাইয়ার এডুকেশন নামে লন্ডনভিত্তিক প্রকাশনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করার পর লন্ডনে প্রফেসর শিবলী'র এধরনের বক্তব্য সাধারণ পাঠকদের বিভ্রান্ত করেছে। এএসিএসবি এবং ইকুইন্স শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করতে ৪৫ হাজার ডলার নিবন্ধন ফি নেয় কিনা বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সেই অ্যাপ্রোচ করেছিল কিনা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদৌ সেটি প্রয়োজন রয়েছে কিনা সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ বা পরবর্তী অনুসন্ধানের বিষয়।

তবে এএসিএসবি এবং ইকুইন্সের সাথে প্রফেসর শিবলীর আলোচনার ফলাফল দিয়ে টাইমস হাইয়ার এডুকেশনের তালিকার জবাব দেওয়াটাই ছিল ভুল। কারণ অনুষ্ঠানে আগত সাবেক অ্যালামনাইরা সম্প্রতি টাইমস হাইয়ার এডুকেশনের তালিকার ব্যাখ্যাই প্রফেসর শিবলীর কাছে চেয়েছিলেন। কারণ এই তালিকা প্রকাশের পরই দেশে বিদেশে প্রতিক্রিয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইউকের ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসেবে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, যা কিছু সেদিনের আলোচনায় এসেছে সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা প্রেসনোট ইস্যু করেছি, যেই তথ্য দেশে বিদেশে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আশা করছি, প্রফেসর শিবলী ইউরোপ সফর শেষে দেশে ফিরে এএসিএসবি এবং ইকুইন্সের ৪৫ হাজার ডলার নিবন্ধন ফি দিয়ে তালিকা প্রকাশের বিস্তারিত জানালে বিষয়টি আগ্রহীদের কাছে আরো স্বচ্ছ হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক। একাত্তর টেলিভিশনের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি অ্যালামনাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন