ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বিএনপি কি নাকের বদল নড়ুন পেল?

বিভুরঞ্জন সরকার | প্রকাশিত: ১০:০৭ এএম, ০৫ মে ২০১৯

৩০ এপ্রিল দুপুরে ফোন করেছিলাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমানকে। তিনি আমার পরিচিত। একাধিকবার তার বাসায় গিয়েছি। কথা বলেছি। তিনি আমাকে পছন্দ করেন। আমিও তাকে পছন্দ করি। সজ্জন ব্যক্তি। কথা বলেন খোলামেলা। মুখে হাসি লেগে থাকে সারাক্ষণ। সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন। এখন একটি বড় দলের বড় নেতা। অথচ তার মধ্যে কোনো অহংবোধ নেই। সংস্কারমুক্ত মানুষ বলেই মনে হয়। যে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করা যায়। জবাবও পাওয়া যায়। রাজনীতির কূটকচালে খুব পারদর্শী বলে মনে হয় না।

ফোন করে কুশল বিনিময়ের পর জানতে চাইলাম, মির্জা ফখরুল ইসলাম কি শপথ নেবেন না?
তিনি বললেন, সবাই নিলে তিনি নেবেন না কেন? চারজন তো নাকি তারেক রহমানের নির্দেশেই শপথ নিয়েছেন। তারেক সাহেব কি দুই রকম নির্দেশ দিয়েছেন?
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক উল্টো আমাকেই প্রশ্ন করেন।

আমি বলি, টেলিভিশনে দেখলাম, প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলছেন, তিনি শপথ নিচ্ছেন না। সময় বাড়ানোর জন্য স্পিকারের কাছে কোনো চিঠিও তিনি দেননি। এটা নাকি তিনি দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করছেন।

আমার কথা শুনে জেনারেল মাহবুব একটু কিছু ভাবলেন। তারপর বললেন, আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত শপথ না নেওয়া, সংসদে না যাওয়া। বিএনপির চার এমপির শপথ গ্রহণের বিষয়টি স্থায়ী কমিটি অবহিত নয়। হঠাৎ করে তারেক রহমান কেন তাদের শপথ গ্রহণের নির্দেশ দিলেন, সেটাও আমি বুঝতে পারছি না। আমি এই সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছি। আমি এটা মানতে রাজি নই। সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। আবার তিনি যদি তার ওপর অর্পিত ক্ষমতা বলে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তা হলে দলের মহাসচিব কেন শপথ নেবেন না?

আমি বলি, এ প্রশ্নের জবাব তো আমি আপনার কাছে জানতে চাই। কারণ আপনি দলের একজন নীতিনির্ধারক। আপনাদের মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই দলে?

জেনারেল মাহবুব বলেন, ভাই আমাদের কথা আমরা বলি। কিন্তু দল চলে দলের মতো। কখন কার কোন নির্দেশ দলের জন্য অবশ্য মান্য তা বুঝতে পারি না। তার কণ্ঠে কিছুটা বেদনা, কিছুটা বুঝিবা হতাশা ঝরে পড়ে।

আমি জানতে চাই, তাহলে এ বিষয়ে আমি কি লিখবো? তিনি জবাব দেন, আপনার যা খুশি লিখে দেন। আমার কিছু বলার নেই। দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত তাদের অজ্ঞাতে খারিজ হয়ে গেলে আর কি কথা বলার থাকতে পারে।

জেনারেল মাহবুব বয়সে আমার চেয়ে বড়। তাকে দুলাভাই বলি। কারণ তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভগ্নিপতি। আলমগীর ভাই আমাদের অগ্রজ। বহুদিন থেকে তাকে চিনি। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারপরও আমরা তাকে বড় ভাইয়ের মতো মানতাম। তার দুলাভাই জেনারেল মাহবুব তাই আমারও দুলাভাই। জেনারেল মাহবুবকে আমি দুলাভাই বললে তিনি খুশি হন বলেই মনে হয়। দুলা ভাইকে আর বিব্রত না করে একদিন বাসায় যাওয়ার কথা বলে ফোন ছাড়লাম।

তারপর ফোন করলাম বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। তিনি ফোন ধরবেন কিনা তা নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। কারণ আমার নতুন নম্বর তার কাছে থাকার কথা নয়। তার নতুন নম্বরও আমার কাছে ছিল না । কিন্তু তিনি আমাকে অবাক করে একবারেই ফোন ধরলেন। আমি আমার নাম বলতেই উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বললেন, এতোদিন পর এই বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়লো? আমি ভূমিকা না বাড়িয়ে সরাসরি জানতে চাইলাম, আপনি কি সংসদে যাচ্ছেন?

তিনিও সরাসরি জবাব দিলেন, প্রশ্নই আসে না। আমি দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কৌশলগত কারণে সংসদে যাবো না।
চারজন যে শপথ নিলেন? তারাও তো বললেন ওটা তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত। আপনার ব্যাপারে ভিন্ন সিদ্ধান্ত কেন? বিষয়টা জটিল হয়ে গেল না? আমি জানতে চাই।

মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা একটি জটিল সময় পার করছি। দলগতভাবে যেমন আমরা কঠিন সময় অতিক্রম করছি, জাতীয়ভাবেও তাই। এখন খুব সহজ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয় কি করে? তবে চিন্তার কিছু নেই। তাড়াতাড়ি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। রাতের শেষে দিন আসেই।

আলমগীর ভাই আরো বিস্তারিত কথা বলার জন্য একদিন বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। বললেন, বাসায় গেলে তিনি খুব খুশি হবেন।

বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে আমার কাছে শুধু এটুকুই পরিষ্কার হলো যে, বিএনপি নামক দলটি এখন চলছে আসলে আল্লাহরওয়াস্তে। দলের চেয়ারপারসন জেলে এক বছরের বেশি সময় ধরে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে ‘পলাতক' আসামি হয়ে বসবাস করছেন আর স্কাইপিতে দল চালাচ্ছেন। বড় বড় নেতারা লিপ সার্ভিস দিচ্ছেন। কথা বলছেন, কাজ করছেন না।

বিএনপির ছয় এমপির শপথ গ্রহণ নিয়ে দলের ভেতর যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা বিএনপিকে একেবারেই টালমাটাল অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। একজন এমপিকে শপথ নেওয়ার জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হলো। চারজন একসঙ্গে শপথ নিতে গেলে তাদের শপথ গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হলো। বহিষ্কৃত এমপিকে নাকি এখন আবার দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। দলের মহাসচিবকে সংসদের বাইরে রেখে পাঁচজনকে সংসদে পাঠিয়ে কি লাভ হলো বিএনপির তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানামুখী আলেচনা।

বিএনপির সংসদে যাওয়া সরকারের জন্য স্বস্তির। কিন্তু বিএনপি তো বেহাল অবস্থায়। সংসদে যারা যাবে তাদের প্রতি থুতু ছিটানোর কথা বিএনপির যেসব নেতা বলেছেন, যেসব নেতা সংসদমুখী নেতাদের বেইমান বলে অভিহিত করেছেন, এখন এমপিরা যদি উল্টো তাদের প্রতি থুতু নিক্ষেপ করতে চান, তাহলে দলের মধ্যে কি অস্থিরতা দেখা দেবে না? বিএনপির এখন সেই নাকের বদল নড়ুন পাওয়ার অবস্থা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আশা করেছেন, খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলছে? রাজনীতিতে সব ঠিক করার জাদুর কাঠি এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। বিএনপির হাতে সেই জাদুর কাঠি যাবে কীভাবে? খালেদা জিয়া জামিন পেয়ে লন্ডন যেতে পারেন কিন্তু আন্দোলন করে সরকারকে চাপে ফেলার সুযোগ আবার কবে তৈরি হবে সেটা বলার মতো রাজনৈতিক জ্যোতিষী আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন