টেলিভিশন সংবাদমাধ্যমের দুর্দিন
২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘টেলিভিশন সাংবাদিকতা’ নামের বইটির ভূমিকায় লিখেছিলাম, ‘সময় এখন টেলিভিশন সাংবাদিকতার। সাহসী ও আলোচিত পেশা বলা যায় এটিকে। তরুণ-তরুণীরা নিজেদের মেলে ধরার জন্য ঝুঁকছেন এই পেশায়। তুলে আনছেন তৃণমূল থেকে আলোচিত নানা প্রতিবেদন।’ এক বছরের ব্যবধানে বর্তমান সরকার নতুনভাবে দায়িত্ব নেয়ার পর এখন বলতে হচ্ছে, এই ভূমিকা বদলানোর সময় এসেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অস্থিরতা, দলকানা মনোভাব থেকে শুরু করে নানা কারণে চরম দুঃসময় পার করছে টেলিভিশন সাংবাদিকতা।
বিষয়টি যে উদ্যোগের সেটি দেখা গেলো ব্রুনাই সফর শেষে ২৬ এপ্রিল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে প্রাজ্ঞ সাংবাদিকরা সেই উদ্যোগের বিষয়টি এবং একই সঙ্গে চরম দুর্দিনের কথাটি তুলে ধরেন। তবে আতঙ্ক এই যে, এখনো নাকি অনেকগুলো নতুন টেলিভিশন লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এটির ভালো দিকটি বলতে চাইলেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, টেলিভিশনের মালিকরা হয়তো ভালো আছেন। নানা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু কর্মচারীরা। মাসের পর মাস বেতনহীনই থাকছেন।
শুধু টেলিভিশন সাংবাদিকতা বললে ভুল হবে পুরো গণমাধ্যমই এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে এই সমস্যা আরো বাড়ছে। এর কারণ সংবাদ মাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা চলে যাচ্ছে। মানুষ প্রকৃত ঘটনা জানতে চায়। অনেক সময় এমনও হয়ে থাকে, কোনো একটি সংবাদ প্রচার হচ্ছে, কিন্তু মাঝপথে সেটি বন্ধ হয়ে গেলো মানে এর কোনো ফলোআপ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতজনেরা বা অনেকে জানতে চান ওই সংবাদ নেই কেনো। এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেন না সংবাদকর্মীরা। কেনো সংবাদমাধ্যমগুলো প্রকৃত ঘটনা জানাতে পারছে না তার কোনো জবাব নেই কারো কাছে।
সে কারণে ইন্টারনেটের সুবাদে মানুষ এখন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ওপর। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির লোক ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে। যা অনেক সময় কতোটা মারাত্মক আকার ধারণ করে তার উদাহরণ আমাদের দেশেই রয়েছে ‘সাঈদীর চাঁদে যাওয়ার’ মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে।
দেশে ৩২টি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। সেখানে কাজ করেন হাজার হাজার হাজার কর্মী। হলফ করে বলা যাবে তাদের বেশিরভাগই আজ অসুখী। প্রতিনিয়ত তাদের মাঝে টেনশন কাজ করে। এই বুঝি চাকরি হারাতে হলো। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের গ্রুপিং, যেহেতু বেসরকারি চাকরি সে কারণে মালিক পক্ষের সুনজরে থাকা চেষ্টা করতে গিয়ে সহকর্মীদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল, স্বজনপ্রীতি, বিশেষভাবে সুবিধা নেয়া, কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকা, সর্বোপরি মালিকের এমন আচরণ ‘পোষালে থাকো না পোষালে চলে যাও’সহ বিভিন্ন সময়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও চলে। এসব কারণে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে সুনীলের কবিতার মতো নিখিলেশকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করে, ‘আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ, একি মানুষজন্ম?...প্রতি সন্ধ্যাবেলা আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা করে রক্ত।’ সত্যিই তাই।
কিছুদিন আগে লাইসেন্সের শর্ত না মেনে চ্যানেল নাইনের সংবাদ সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আরো কয়েকটি টিভি চ্যানেল সে পথে হাঁটছে বলে শোনা যাচ্ছে। ছাঁটাই চলছে কোনো কোনো টিভিতে। কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে নিয়মিত বেতন নেই। মাসের পর মাস বেতন না হওয়ায় অনেকে ঢাকা শহর থেকে পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সন্তান নিয়ে কষ্ট আর কতোটা সহ্য করা যায়। তাছাড়া বাসাভাড়া সময়মতো দিতে না পারলে কেই বা থাকতে দেবে। যে কয়েকটি চ্যানেল কর্মী নিচ্ছেন তারা চেষ্টা করছে কতোটা কমদামে কর্মী নেয়া যায়। কোনো রকমে হাতে ‘বুম’ ধরিয়ে দিলেই হলো। ঢাকা শহরে কীভাবে সে জীবনযাত্রা ব্যয় করছে তার হিসেব নেই। স্লোগান একটাই, ‘ইচ্ছে হলে চাকরি করো, না হলে নেই।’
এসব কারণে কমে যাচ্ছে মেধাবী সাংবাদিকের সংখ্যা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে টেলিভিশন সাংবাদিকতায় আসা তরুণের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। এতো এতো সাংবাদিক সংগঠন হচ্ছে, বড় বড় নেতা তৈরি হচ্ছে কিন্তু সংবাদ কর্মীদের রুটি রুজির প্রশ্নে কোনো অগ্রগতি নেই। বরং তাদের অনেকের লেখা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই মন্তব্যে হতাশার চিত্রই ফুটে উঠছে। তার মানে কোথাও কোনো সুখবর নেই। মাথায় কতো কতো প্রশ্ন আসে কিন্তু কারো কাছেই জবাব নেই। সারাবিশ্বে ছাঁটাই একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি হবেই। কিন্তু বাংলাদেশে যে সংবাদকর্মীরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন বা মজুরির দাবিতে আন্দোলনের খবর ঘটাও করে প্রকাশ করেন তাদের নিজের ঘরে যে খাবার জোটে না তা দেখার কেউ নেই।
গার্মেন্টসেও কর্মী ছাঁটাই নীতিমালা আছে। শ্রম আইন আছে। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো নীতিমালা নেই। যখন যাকে ইচ্ছে ছাঁটাই করো। মালিকপক্ষের পছন্দ না হলেই তাকে টেক্সট মেসেজ করে জানিয়ে দাও ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আপনার আর অফিসে আসার দরকার নেই।’
একজন মানুষের চাকরি হারানো মানে শুধু কিন্তু তার চাকরি হারানো নয়, তার সামাজিক মর্যাদা, দৈনন্দিন চলাফেরা সর্বোপরি একটি পরিবার যেন পতনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
টেলিভিশন শিল্পের দুর্দিনের আরো একটি কারণ হলো বিজ্ঞাপন কমে যাওয়া। যে হারে গণমাধ্যমের অনুমোদন দেয়া হয়েছে সে হারে কিন্তু বিজ্ঞাপনের বাজার বাড়েনি। আগে বিজ্ঞাপন অফিসে আসতো আর এখন বিজ্ঞাপনের জন্য নানা তদ্বির লাগে। এছাড়া আগেই বলেছি সংবাদ মাধ্যমগুলো ধীরে ধীরে তার চরিত্র হারাচ্ছে। মনে হতে পারে সরকারি চাপের কারণে তারা সেন্সরশীপে যাচ্ছে কিন্তু সেলফ সেন্সরশীপের কারণে জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। বাস্তবতা হচ্ছে যতোনা না সরকারি চাপ তার চেয়ে বেশি সাংবাদিকদের দলীয় প্রীতি।
কোনো কোনো সাংবাদিক সরকারের তোষণনীতির কারণে নিজেদের অর্থনীতিকভাবে সমৃদ্ধ করছে। দেশে-বিদেশে গাড়ি বাড়ির মালিক হচ্ছেন। আর নিজের টেলিভিশনে নিজের আত্মীয় পরিজনের গুণগানের পাশাপাশি সরকারের লেজুড়বৃত্তি করছে। সে কারণে কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেলের লোকদের দেখলে জনগণ এখন ‘দালাল, দালাল’ বলে চিৎকার করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল হয়, ‘সাংবাদিকরা দালালি ছাড়ুন, দালালরা সাংবাদিকতা ছাড়ুন।’
সাংবাদিকরা এখন নির্ভর হয়ে পড়েছেন দৈনন্দিন সংবাদ মানে ডে’জ ইভেন্ট বা প্রেস রিলিজের ওপর। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নেই বললেই চলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংবাদিক ‘ম্যানেজ’ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সংবাদমাধ্যমকে যে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে যেটি অন্য স্তম্ভগুলোর চেয়ে বেশি শক্তিশালী হওয়ার কথা সেটি অনেকটাই কাগজে কলমে রয়ে গেছে। অসি এখন মসির চেয়ে শক্তিশালী।
গেলো এক দশকে ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে অনলাইন সাংবাদিকতার। এখন মানুষ ফেসবুকে লাইভ দেখে, ইউটিউবে ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা দেখে। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ দেখে মজা পায়। দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞাপন। নানা খাতে বিজ্ঞাপন কমে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে টেলিভিশন খাত। সংবাদপত্রও যে ভালো অবস্থানে রয়েছে তেমনটি নয়। সংসদে দেয়া তথ্যমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন দৈনিক পত্রিকা রয়েছে এক হাজার ২৪৮টি, এর মধ্যে ঢাকায় ৫০২টি এবং সারাদেশে ৭৪৬টি।
এছাড়া সারাদেশে সাপ্তাহিক পত্রিকা রয়েছে, এক হাজার ১৯২টি, মাসিক ৪১৪টি। এর বাইরে ২ হাজার ২১৭টি অনলাইন মিডিয়া রয়েছে। আরো আছে, অনলাইন পত্রিকা, অনলাইন টেলিভিশন এবং রেডিও। অথচ হিসেব নিলে দেখা যাবে হাতেগোনা কয়েকটি সংবাদমাধ্যম নিয়মিত বেতনভাতা পরিশোধ করছে। অনেক শীর্ষস্থানীয় দৈনিকও লোকবল ছাঁটাই করছে। এখাতে যেটি বিশেষ সমস্যা মনে হয়, অপেশাদার লোকজনের কারণে টেকসই বিনিয়োগ হচ্ছে না। এই অপেশাদার সাংবাদিকরা হয়তো কোনো বিত্তবানকে স্বপ্ন দেখিয়ে বিনিয়োগে নামান, স্বপ্ন দেখান এই পত্রিকা দেশের বহুল প্রচারিত পত্রিকাগুলোকে ছাপিয়ে যাবে।
মালিকপক্ষ বেশি টাকা দিয়ে ভালো ভালো সাংবাদিক দিয়ে আসেন। কিন্তু বাস্তবে সেই পত্রিকা নির্দিষ্ট কোনো চরিত্র দাঁড় করাতে পারে না। ফলে জনপ্রিয় হতে পারে না। লাভের মুখ দেখে না। ছয়মাস, এক বছর পর মালিকপক্ষ মুখ ফিরিয়ে নেয়। এতে সমস্যায় পড়েন সাংবাদিকরা। সম্পাদক বা অন্য কর্তাব্যক্তিরা হয়তো কিছু সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু সাধারণ কর্মীদের ভাগ্যের শিঁকে ছিঁড়ে না।
সংবাদপত্র শিল্পের এমন দুর্দিন আমরা দেখেছি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও। তখন সেনাপ্রধান মইন উ আহমদ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন, ‘বর্তমান সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং অতীতের মতো গণমাধ্যমের ব্যাপারে স্পর্শকাতর নয়।’ কিন্তু সে সময় দুর্নীতির অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়েছিল এনটিভি, আরটিভি ও আমার দেশ পত্রিকার মালিক মোসাদ্দেক আলী ফালু, এনটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমান বাপ্পী, দৈনিক যুগান্তরের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুল, জনকণ্ঠের মালিক সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ, দৈনিক দিনকালের মালিক তারেক রহমান, দৈনিক ইনডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার মালিক সালমান এফ রহমান, চ্যানেল ওয়ানের এমডি গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, দৈনিক খবরপত্রের মালিক হাফিজ ইব্রাহিম, টিভি চ্যানেল সিএসবির অংশীদার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, চ্যানেল এসএর এমডি সৈয়দ সামাদুল হকসহ অনেককে।
এক নামকরা সম্পাদক নিজের পত্রিকায় লিখে জানিয়েছিলেন, পত্রিকা চালাতে গিয়ে তাঁর অসহায়ত্বের কথা। সেই সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস মন্তব্য করেছিলেন, ‘বর্তমান জরুরি অবস্থার মাঝে সাংবাদিকরা গণমাধ্যমের ওপর যে আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তা দূর করার চেষ্ঠা করছেন। তবে কিছু কিছু সাংবাদিক ও সম্পাদক মাত্রাতিরিক্ত আগ্রাসী মনোভাব এবং রাজনৈতিকভাবে নিজেদের আনুগত্য দেখিয়ে ক্ষমতাসীনদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। যা পুরো শিল্পের ওপর প্রভাব ফেলে।’
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে যে খারাপ সময় পার করছে তা সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও প্রকাশ পেয়েছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে চার ধাপ অবনমনের মধ্য দিয়ে সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের করা এই বার্ষিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৮০ দেশের মধ্যে ১৫০তম। ২০১৯ সালের ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স’ বলছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকারের প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে পিছিয়ে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, ‘গোপন অথবা প্রকাশ্য রাজনৈতিক বিরোধ যদি এভাবে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে থাকে, যেখানে সাংবাদিকরা পরিণত হন বলির পাঁঠায়, তাহলে বুঝতে হবে, গণতন্ত্র মহাঝুঁকির মধ্যে আছে।’ বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে কঠোর পথ বেছে নিয়েছে, তার শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদেরও।’ অবশ্য আমাদের তথ্যমন্ত্রী এই প্রতিবেদন মানতে রাজি নন। বিদ্যমান যে সংশয়, অস্থিরতা হতাশা তা আরো বাড়িয়ে দেয় প্রশাসনের উচ্চপদে থাকা কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সম্প্রতি (১২ এপ্রিল) বলেছেন, ‘কোন বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করা যাবে, কতটা প্রকাশ করা যাবে, সরাসরি সম্প্রচার কতটা করা যাবে, এ বিষয়গুলো সাংবাদিকদের একটা সেলফ-সেন্সরশিপের আওতায় আনা উচিত।’ আগেই বলেছি সেলফ সেন্সরশিপের কারণে সংবাদমাধ্যম জনগণের আস্থা হারায়। যেটি সাংবাদিকতা পেশার মূল শক্তি। যা অর্জন করতে হয় তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে, সর্বসাধারণের স্বার্থে সঠিক সংবাদ যথাসময়ে পরিবেশন করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু প্রশাসনের এমন বক্তব্য সাংবাদিকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে বৈকি! এমনিতে তথ্য প্রবাহ আইন, ৫৭ ধারার মতো আইন নিয়ে ভয়ে থাকেন সংবাদ কর্মীরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় সময় গর্ব করে বলেন, সেদিনও সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে অনেকগুলো টিভির লাইসেন্স দিয়েছেন। অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। একথা সত্য বটে। কিন্তু এই শিল্প যে ধুঁকে ধুঁকে চলছে সেটি দেখার দায়িত্বও কিন্তু সরকারের রয়েছে। সেটি দিক নির্দেশনা হতে পারে বা বিনিয়োগ বাড়াতে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করেও হতে পারে। তবে এই উদ্যোগটা নিতে হবে এই শিল্পের সাথে জড়িত কর্তা ব্যক্তিদের। ভুলতে হবে নিজেদের মধ্যে দলাদলি ও ভেদাভেদ। একসময় একতা ছিল বলেই সরকার অন্যায় করতে ভয় পেতো। আর এখন থোড়াই কেয়ার করে। সেই একতাটা জরুরি।
জরুরি এই খাততে বাঁচাতে সমস্যা চিহিৃত করে তার পুনরায় মেরামত করা। সেটা যতো দ্রুত হবে ততোই সেটা মঙ্গলজনক। কারণ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বলেন আর আদর্শিক লড়াই বলেন, ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তাটা আগে চাই। নীতিমালা প্রয়োজন টেলিভিশন শিল্পের জন্য। প্রয়োজন বেতন কাঠামোও। যাতে সেই হারানো গৌরব ফিরে আসে। নইলে ভাদ্র মাসে কুকুর পয়দার মতো টেলিভিশন চ্যানেল খুলে বসলে সেটিতে ব্যক্তির লাভ হলেও হতে পারে কিন্তু সামগ্রিক কোনো সুফল নেই। কুকুরের মতো রাস্তা-ঘাটে লাথি উষ্ঠা খেয়ে, গরম পানিতে গা ছিলে বেঁচে থাকার মধ্যে অন্তত একজন সাংবাদিকের কোনো সার্থকতা নেই।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।
[email protected]
এইচআর/জেআইএম