জঙ্গিবাদ ও বাংলাদেশের সাফল্য
২১ এপ্রিল (২০১৯) ইস্টার সানডের দিন শ্রীলংকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গিবাদী হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার ধর্মীয় উগ্রবাদিতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং এ ধরনের হত্যার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
২৭ এপ্রিল ‘বঙ্গবন্ধু আন্তবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৯’-এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’ শ্রীলংকার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরীসহ তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে। ঘটনার দিন ব্রুনাইয়ে অবস্থানকালেও সন্ত্রাসবাদীর বিরুদ্ধে তাঁর দেওয়া বক্তব্য দেশ-বিদেশি মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে।
এর আগে চলতি বছর (২০১৯) ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে নামাজের সময় এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ৫১ জন নিরীহ ব্যক্তিকে হত্যা করা হলে সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা বর্ণবাদ ও ধর্মীয় উগ্রবাদিতার বিপক্ষে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হত্যাকাণ্ডের শিকার নিরীহ বিদেশিরা নিরপরাধ ছিলেন। সেই ঘটনাকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করার কৃতিত্বও তাঁর।
আসলে সারা পৃথিবীতে এই একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নতির যুগে এসেও ধর্মের সংস্কার মানুষকে উৎকট ও বীভৎস পশুতে পরিণত করেছে- আর তার মরণ ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শেখ হাসিনার মতো রাষ্ট্রনায়কের গুরুত্ব আজ অনস্বীকার্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্যতা, দূরদর্শিতা আর সঠিক নেতৃত্বগুণের জন্য আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত একজন রাজনীতিবিদ। দেশ পরিচালনায় তিনি সাহস ও কর্মদক্ষতায় অনন্য। আর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে তিনি বর্তমানে বিশ্বশান্তির দূত ও মানবপ্রেমী হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে(২০০৯-২০১৩) জঙ্গিবাদ দমনে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরই গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ জঙ্গিমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
শেখ হাসিনার দেখানো পথ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মত জঙ্গিবাদের রসাতলে পতিত না হয় যেন, সেই প্রত্যয় নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে এদেশের সকল মন্ত্রণালয়। মানবসম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা প্রদান, উদ্ধার অভিযান বা তৎপরতা, অপরাধদমন, অপরাধী শনাক্তকরণ, জল ও স্থল সীমান্ত নিরাপত্তা, চোরাচালান রোধ, প্রবাস ও অভিবাসন সম্পর্কিত নীতিমালা বা চুক্তি প্রণয়ন, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধ, মাদকদ্রব্য চোরাচালান রোধ, মানবপাচার রোধ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। নাগরিকের জন্য একটি নিরাপদ, সুন্দর, সুখী ও শান্তিপূর্ণ আবাসভূমি নির্মাণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রনায়ক নিরলস ও বদ্ধপরিকর।
২.
বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে(২০০৯-২০১৩) জঙ্গিবাদ দমনে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিসহ উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম গ্রহণ ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে সভাপতি করে ১৭ (সতের) সদস্যের জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার কমিটি গঠন করা হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ও তাঁর নেতৃত্বেই আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন ২০১৪ (আইনটির মেয়াদ ৫ বছর বৃদ্ধি) করা হয়েছে।
মোবাইল কোর্ট (সংশোধন) আইন ও বিধিমালা প্রক্রিয়াধীন আছে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন-এর বিধিমালা ২০১৪ প্রণীত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশে ১ লাখ ৬১ হাজার ৩শ ৩ জন জনবল ছিল। বর্তমানে তা ২ লাখ ৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে নারী পুলিশ সদস্য ছিল মাত্র ২৫২০ জন। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৭৬৭ জন।
পুলিশবাহিনীতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৫০ হাজার পদ সৃজনের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর পর্যায়ক্রমে ৫০ হাজার পদ সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও পুলিশ পরিদর্শক পদকে ২য় শ্রেণী থেকে ১ম শ্রেণীতে এবং উপ-পুলিশ পরিদর্শককে ৩য় থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীতকরণ এবং পুলিশের নতুন নতুন উইং সৃষ্টি হয়েছে। যেমন, এ বাহিনীতে শিল্পাঞ্চল পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ, পিবিআই, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ, ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার এসপিবিএনসহ মোট ১০টি নতুন ইউনিট তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ পুলিশের কর্মরত থাকার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ৭টি ফর্মড পুলিশ ইউনিটে ১২১১ জন পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন। এরমধ্যে ১৬০ জন নারী সদস্য। নতুন ২টি র্যাব ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। র্যাবের জন্য ২টি হেলিকপ্টার ক্রয় করা হয়েছে। পুলিশের জন্য ২টি হেলিকপ্টার টিওএন্ডইতে অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম চলমান।
বর্তমান সরকারের আমলেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে(সিআইডি) এলআইসি শাখা গঠন করা হয়। বিশেষ অপরাধ তদন্তের জন্য গঠন করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই)। ডিএমপি-এর কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম(সিটিটিসি) ইউনিটের অভিযানে আসে একের পর এক সাফল্য। নব্য জেএমবি’র শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার কিংবা নিহত হয়। আলোচিত মামলাগুলোর তদন্তও সফলভাবে শেষ করেছে পুলিশ। এতে কমেছে জঙ্গি তৎপরতা। একইসঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধ, হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই ও দস্যুতার হারও কমেছে অনেকখানি। বিশেষত বন ও জলদস্যু এবং সর্বহারাদের আত্মসমর্পণ দেশের অন্যতম অবদান যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
অন্যদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাজকে গতিশীল করতে শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আগে ওই সরকারের সংসদ অধিবেশনের শেষে এসে ৫ গ্রামের বেশি ইয়াবা পাওয়া গেলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮’ পাস করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য শনাক্তকরণ এবং অধিদপ্তরকে ৩টি পিকআপ, দুটি মাইক্রোবাস, ২৯ ধরনের যন্ত্রপাতি ও ১৫০টি কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্থা ‘কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি(কৈকা) ও বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
৩.
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গি দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করায় জঙ্গি দমনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সবসময়ই তৎপর রাখা হচ্ছে। জঙ্গিসদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বিচারে ফাঁসি হয়েছে কয়েকজন দুর্ধর্ষ জঙ্গি সদস্যদের। জঙ্গিদের অনলাইন তৎপরতা রোধে এখন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে নিশ্চিন্তে কাজ করছেন কর্মকর্তারা।
পাশাপাশি ফেসবুক, গুগলসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম এবং স্মার্টফোন অ্যাপ নির্মাতাদের সঙ্গে এদেশের পুলিশ প্রশাসনের সখ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলে দ্রুত সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া যায়। আসলে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে এলিট ফোর্স র্যাব, বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটসহ পুলিশের সকল ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থাকে জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও কার্যক্রম জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।’ এদেশের মানুষ ধর্মীয় উগ্রবাদিতা ও তাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করে। দেশের অগ্রগতি ও নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বড় ধরনের অন্তরায়। এই অন্তরায় দূর করার জন্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ‘পুলিশ’ ও ‘র্যাব’ বাহিনীর সফল অভিযানে শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গি নেতাসহ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গ্রেপ্তার ও নিহত হয় এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলা-বারুদ উদ্ধার করা হয়।
২০১৬ সালের হোলি আর্টিজান হামলার পর এ পর্যন্ত যতগুলো অপারেশন পরিচালিত হয়েছে তার সবগুলো থেকেই জঙ্গিগোষ্ঠী আঘাত হানার পূর্বে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে জঙ্গি আস্তানাসমূহ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। জঙ্গি দমনে শেখ হাসিনা সরকার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ফলে বর্তমানে জঙ্গি তৎপরতা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এবং জঙ্গি দমনে এ সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। উপরন্তু জনগণের নিরাপত্তা এবং দেশের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উদ্যোগে ‘কতিপয় বিষয়ে জঙ্গিবাদীদের অপব্যাখ্যা এবং পবিত্র কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত ও হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা’- শীর্ষক প্রকাশিত পুস্তিকা এখন সকলের হাতে।
অন্যদিকে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হওয়ায় ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৭টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গিবাদের অর্থায়নে জড়িতদের কার্যকরভাবে দমনের লক্ষ্যে সরকার সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ (সংশোধনী-২০১৩) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ প্রণয়ন করেছে। সরকারের আন্তরিকতা এবং গৃহীত নানা পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।
জনগণের প্রত্যাশা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, জঙ্গি হিসেবে এযাবৎ যতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই ৪টি সংগঠনের। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলো হচ্ছে: জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ওরফে আনসার আল ইসলাম ও হিযবুত তাহরির। জেএমবি গঠিত হয়েছে জামায়াতের প্রাক্তন সদস্যদের নিয়ে।
আল-কায়েদার অনুসারী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে শিবিরের মানুষ। হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে সরাসরি জামায়াতের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া না গেলেও দল দুটির মধ্যে মতাদর্শগত মিল রয়েছে; এরা ওয়াহাবী ধারার জিহাদি। গবেষকরা জানিয়েছেন, বিদেশি অর্থ ছাড়াও জামায়াতী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মুনাফার ৪০ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর বিনিয়োগ হচ্ছে জঙ্গি চাষাবাদে। এদের নিষিদ্ধ করে নির্মূল করা হলে বন্ধ হবে জঙ্গিবাদ। আর জঙ্গিবাদের বিলোপের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিজয়।
তবে জঙ্গি সদস্যরা এখনও নানা কৌশলে সক্রিয়। এমন বাস্তবতায় জঙ্গিরা আইনের আশ্রয় নিয়ে জামিনে মুক্ত হলে সরকারকে অবশ্যই ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। একথা সত্য দীর্ঘ নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য বিশ্নেষণ, প্রযুক্তিগত ও স্থানীয় তদন্তের পর জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত জঙ্গি সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতেও গ্রেফতার হয় অনেক জঙ্গি।
এরপরও তাদের অনেকে জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে যুক্ত হচ্ছে। এতে জঙ্গি কার্যক্রম পুরোপুরি নির্মূল করা যাচ্ছে না। জামিন পাওয়া সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। আর এসব জঙ্গির জামিনে উদ্বিগ্ন আমরা সাধারণ জনগণ।
৪.
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথম থেকেই জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপোসহীন অবস্থানে রয়েছেন এবং নিরলসভাবে কাজ করছেন। তাঁর নির্দেশনা ও কর্ম তৎপরতার কারণেই সারাদেশে একযোগে বোমা বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন সময়ে নাশকতা সৃষ্টিকারী জঙ্গি সংগঠনসমূহের শীর্ষ সারির নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্নস্তরের নেতা কর্মীদেরকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
আটককৃতদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে, কেউ কেউ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে এবং বেশকিছু মামলা এখনো বিচারাধীন। তবে, যে সকল জঙ্গি এখনো আত্মগোপন করে আছে তাদের তৎপরতা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। পুলিশ ও র্যাবের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযানের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতা কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে বার বার ব্যর্থ হয়েছে এবং বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক হয়েছে।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির হামলার পর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সহায়তায় একের পর এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গিসদস্যদের নির্মূল করা হচ্ছে। এসব অভিযানের কারণে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে জনজীবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ফিরে এসেছে। তবে জঙ্গিবাদ উত্থানের কিছু কারণ রয়েছে সেগুলো বন্ধ না হলে জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল হবে না।
অন্যদিকে মনে রাখা দরকার জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর যে সাফল্য, যে অর্জন, সেটা অকল্পনীয়। বিশ্বের বহু দেশ এটা করতে পারেনি। ১৭ কোটি মানুষের দেশে জঙ্গিসদস্য এবং তাদের আস্তানা খুঁজে বের করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মেধাবী ও চৌকস অফিসাররা যে অপারেশনগুলো করছেন, তা বিরল ঘটনা। তাদের কাজের প্রধান উৎসাহদাতা হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]
এইচআর/পিআর