ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ড. কামালের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড!

প্রভাষ আমিন | প্রকাশিত: ১০:১৫ এএম, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। নির্বাচনের পর ঐক্যফ্রন্টের ভাঙ্গনের নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। গড়তে যতটা সময় লেগেছে, ভাঙ্গতে ততটা লাগেনি। দীর্ঘ ঐক্য প্রক্রিয়া, বৈঠক শেষে

গত বছরের ১৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র ৬ দিনের মাথায় ৫ জানুয়ারি গণফোরামের বর্ধিত সভায় সে ঐক্যের ধ্বংসের বীজ বপন করেন ড. কামাল নিজেই। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট মোট আটটি আসন পেয়েছিল। এরমধ্যে বিএনপি পেয়েছিল ৬টি, আর গণফোরাম দুটি। নির্বাচনের পরপরই ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচন চেয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু ফলাফলে বিএনপি ও গণফোরামের প্রতিক্রিয়া হয় বিপরিতমুখী। ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ফলাফলে রীতিমতো শোকের ছায়া নেমে আসে বিএনপি শিবিরে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় দলটি।

কিন্তু বিপরীত প্রতিক্রিয়া ছিলো গণফোরাম শিবিরে। তাদের জন্য এটা ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো ফল। ২৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সংসদে প্রতিনিধিত্ব পেলো গণফোরাম। ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত গণফোরামের বর্ধিত সভায় ছিলো উৎসবমুখর পরিবেশ। সে বর্থিত সভায় দলের প্রধান ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, ‘আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি, কিন্তু এমন নির্বাচনের মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমাদের দুই প্রার্থী যেভাবে সফল হয়েছেন তা তাদের বিরাট অর্জন। তাই তাদের সংসদে পাঠানোর বিষয়ে আমরা ইতিবাচকভাবে চিন্তাভাবনা করছি। আমাদের দুই সংসদ সদস্য শপথ নেয়ার পর সংসদে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারবেন’।

মজাটা হলো ড. কামাল হোসেন যাকে ‘বিরাট অর্জন’ ভেবে সেলিব্রেট করছেন, তা যে মোটেই গণফোরামের অর্জন নয় তা এতোদিন বোঝেননি বলেই গণফোরাম কখনো সংসদে যেতে পারেনি, ভবিষ্যতে নিজেদের যোগ্যতায় কখনো সংসদে যেতে পারবে, তেমন স্পষ্ট ভাবনা নেই।

এবার গণফোরাম ছিলো অনেকটাই বিএনপির আলোয় আলোকিত। সুলতান মনসুর নির্বাচিত হয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকে। কিন্তু তার এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অনেকেই আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদককে ভোট দিয়েছেন। সুলতান মনসুরের জয়ে ড. কামালের ক্যারিশমা বা গণফোরামের ভূমিকা নেই বললেই চলে। আর জয়ী অপর প্রার্থী মোকাব্বির খান তো ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছেন। লটারি জেতার মতো এমপি হয়েছেন। সিলেট-২ আসনে ধানের শীষও ছিলো না, নৌকাও ছিলো না। ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর মনোনয়নপত্র মাঝখানে ইলিয়াস আলীর সহানুভূতি ভোট জমা হয়েছে মোকাব্বিরের বাক্সে।

এই দুই ‘বিরাট অর্জন’কে সংসদে পাঠাতে ড. কামাল ইতিবাচক থাকলেও বিএনপির চাপে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন। তবে ড. কামাল তার মূল ইতিবাচক সিদ্ধান্ত থেকে বোধহয় সরে আসেননি। ওপরে ওপরে শপথের বিপক্ষে হলেও ভেতরে তিনি আসলে শপথের ব্যাপারে ইতিবাচকই। যদিও দল তাকে বহিষ্কার করেছে, তবুও শপথ নেয়ার পর সুলতান মনসুর বলেছিলেন, দলের শীর্ষ নেতা মানে ড. কামালকে জানিয়েই তিনি শপথ নিয়েছেন। একই সঙ্গে শপথ নেয়ার কথা থাকলেও মোকাব্বির খান সেদিন নেননি। তবে ভালো কৌশল বের করেছেন মোকাব্বির। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়ে তিনি এলাকায় একটি নাগরিক সভা করেছেন। সেখানে এলাকার মানুষ তাকে শপথ নিতে বলেছে।

২ এপ্রিল মোকাব্বির খানও শপথ নিয়েছেন। শপথ গ্রহণ শেষে তিনিও সুলতান মনসুরের মত বলেছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েই তিনি শপথ নিয়েছেন। অথচ গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু জানিয়ে দেন, মোকাব্বির খান দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়েছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে দলের প্যাড চুরির অভিযোগ আনা হয়।

তখন জানানো হয়, সুলতান মনসুর যেহেতু দলের প্রাথমিক সদস্য ছিলেন, তাই তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা গেছে। কিন্তু মোকাব্বির খান যেহেতু দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, তাই তাকে বহিষ্কার করতেও প্রেসিডিয়াম বৈঠক ডাকতে হবে। কিন্তু সেই বৈঠকের সময় আর আসেনি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদে যোগ দিয়েও বহাল তবিয়তেই ছিলেন।

শুধু ছিলেনই না, গত শুক্রবার গণফোরামের কাউন্সিলে একেবারে মঞ্চে হাজির তিনি। তাহলে শপথের ব্যাপারে গণফোরামের আসল অবস্থানটা কী? এতদিন যেটা ধারণা ছিল, সেটাই কি আসলে সত্যি? ড. কামাল হোসেনের অনুমতি নিয়েই কি সুলতান মনসুর আর মোকাব্বির খান শপথ নিতে গিয়েছিলেন? ড. কামাল কি একই সঙ্গে চোরকে চুরি করতে বলেন, আবার গৃহস্থকে সজাগ থাকতে বলেন?

এটা সবচেয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন গণফোরামের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। কাউন্সিলে মোকাব্বির খানের উপস্থিতির প্রতিবাদে দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, 'মোকাব্বির খান ড. কামাাল হোসেনের চেম্বারে গেলে বলেন গেটআউট, আর বাসায় গেলে বলেন, সংসদে যাও। এ ধরনের দ্বৈত নীতির দলে আমি থাকবো না।'

রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, 'দলের চাপে পড়ে কামাল হোসেন মোকাব্বিরকে চেম্বার থেকে বের করে দিয়েছিলেন। অথচ আজ তিনি মঞ্চে।' ৫ জানুয়ারি দলের বর্ধিত সভায় ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। আর আট বছর পর ২৬ এপ্রিল দলের বিশেষ কাউন্সিল বিক্ষোভে উত্তাল। মোকাব্বির খানের উপস্থিতি নিয়ে যতটা আলোচনা, ততটাই দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর অনুপস্থিতি নিয়ে। অনেকেই এই দুই ঘটনায় যোগসূত্র খুঁজছেন।

দল থেকে বলা হচ্ছে, মোস্তফা মহসিন মন্টু অসুস্থ। কিন্তু যতটুকু জেনেছি, তার অসুস্থতা শারীরিক নয়, অভিমানপ্রসুত। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, 'মোকাব্বির খানের ব্যাপারে বেশিরভাগ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি কিভাবে মঞ্চে বসলেন, তা ড. কামাল হোসেনই ভালো বলতে পারবেন। এ জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখিত ও জাতির কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।'

শোনা যাচ্ছে, মোস্তফা মহসিন মন্টু আর দলের সাধারণ সম্পাদক থাকছেন না। সেক্ষেত্রে গণফোরামে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। ভাঙ্গুক আর না ভাঙ্গুক, এই দলের অস্তিত্বটাই অর্থহীন। যে দলের সভাপতি মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেন, আর ২৬ বছর ধরে দলের পদ আঁকড়ে থাকেন। যে দলের সভাপতি দলের দুই সাংসদের শপথ নিয়ে একটা স্পষ্ট অবস্থান নিতে পারেন না; ২৬ বছর ধরে সেই দলের টিকে থাকাটাই বিস্ময়কর।

এইচআর/এমকেএইচ

আরও পড়ুন