ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

গরমে স্বাস্থ্যরক্ষায় যা করবেন-

ডা. পলাশ বসু | প্রকাশিত: ১০:৩০ এএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

বৈশাখে মানেই প্রকৃতিতে রুদ্ররূপ। তাপমাত্রা বাড়তে থাকে হুহু করে। ফলে অল্পতেই শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা বাইরে থাকেন, শ্রমজীবী মানুষ তাদের ভোগান্তি বাড়ে। এ সময়ে শরীর থেকে যেহেতু প্রচুর পানি বের হয়ে যায় ফলে পিপাসা লাগে প্রচুর। পানির সাথে লবণও বের হয়ে যায় বেশি মাত্রায়। ফলে শরীরে ক্লান্তি আসে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। অল্পতেই অস্থির লাগে।

এ অবস্থায় পিপাসা মিটাতে আমরা ফুটপাথজুড়ে থাকা দোকানগুলো হতে কথিত ফিল্টার নামক জারে ভরা পানি চালান করে দিই পেটে। অথবা এখন লেবু, বরফ দেয়া পানি মিশিয়ে রাস্তার ধারে ফিল্টারে বিক্রি হচ্ছে। গরমে এমন ঠাণ্ডা পানি যেন অমৃতসম। এক গ্লাস খাওয়ার পরেই মনে হয় যেন-আহ! কি শান্তি।

কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন এ পানি পান করার আগে একটিবারের জন্য? এ পানি সত্যিই কি পরিষ্কার? সুপেয়? জীবাণুমুক্ত? হয়ত ভাবেননি। অথবা ভাবলেও তেমন পাত্তা দেননি। অথচ এ পানিই কিন্তু হতে পারে আপনার আমার জন্য চরম ফাঁদ। ভয়াবহ শারীরিক অসুস্থতার জন্য এ পানিই হতে পারে একমাত্র দায়ী।

আমরা জানি, রাস্তার ধারে যে পানি বিক্রি হচ্ছে সেটা আসলে জীবাণুমুক্ত নয়। সরাসরি ওয়াসার পানি জারে ভরে বিক্রি হচ্ছে। তার উপর ঠাণ্ডা পানি খাওয়ার আশায় যে বরফ দেয়া পানি আপনি খাচ্ছেন লেবু সহযোগে সে বরফ কিন্তু তৈরি হচ্ছে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। কারণ আদতে এ বরফগুলো তৈরি করা হয় মাছের আড়তে ব্যবহারে উদ্দেশ্যে।

মাছকে পচনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। ফলে সে বরফ যে আর বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি হবে না সেটা বুঝতে তো আর কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে সেই বরফই ব্যবহার করা হচ্ছে, ফুটপাতে আমাদের খাওয়ার পানিকে ঠাণ্ডা করার জন্য। আর আমি, আপনি বা আমরা অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে সেই পানিই পান করছি। এটা একটা ভয়াবহ ব্যাপার আমাদের শরীরের জন্য। রাস্তার কথা না হয় বাদ দিন। এই যে, লাচ্চি, ফালুদা, বা নানা রকম জুস আমরা খাচ্ছি কথিত ভালো মানের হোটেলে বসে সে পানিও কি খাওয়ার উপযোগী? সে প্রশ্ন কি কখনো করেছেন?

এমন বিদ্যমান বাস্তবতায় তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে নিজের প্রয়োজনেই। না হলে টাইফয়েড, কলেরা, ডায়রিয়া, জন্ডিস , পেটের অসুখ প্রভৃতি রোগের জীবাণু সহজেই আমাদের শরীরে জায়গা করে নিতে পারে। কারণ এমন গরম আবহাওয়ায় জীবাণুর বংশবিস্তার হয় খুব দ্রুত। ফলে সহজেই পরিবেশে তা ছড়িয়ে পড়ে।

আর বায়ু, পানি বা খাবারের মাধ্যমে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এ কারণে বাইরে বের হয়ে পানি খেতে হলে বাসা থেকে সাথে করে নিয়ে যাওয়া পানি পান করুন। না হলে নিদেনপক্ষে পয়সা খরচ করে হলেও ভালো কোম্পানির বোতলজাত পানি কিনে খান।

এ কথাগুলো কেন বলছি জানেন? বলছি এ কারণে যে, আইসিডিডিআরবি’র বরাতে পত্রিকায় দেখলাম এখন সেখানে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০ জন করে ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাহলে সব মিলিয়ে ডায়রিয়ার রোগীর সে সংখ্যা আরো বেশি হবে নিশ্চয়। কারণ অন্যান্য হাসপাতালের পরিসংখ্যান তো আমরা জানি না। আবার জানি না বাসায় থেকে কতজন স্যালাইন আর মোড়ের দোকানীর কাছ থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে সুস্থ হচ্ছেন।

গরমে তাই সুস্থ থাকার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলুন। যেমন প্রথমেই বলি পানি ফুটিয়ে খান। রাস্তার ধারের পানি খাবেন না। এবং এ পানি দিয়েই জুস, ফালুদা, লাচ্চি এসব খাবার তৈরি হচ্ছে। ফলে এসব খেতে গেলে খাবার আগে দুবার ভাবুন। খাবার খাওয়ার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। সেই সাথে প্রতিবার বাথরুম ব্যবহার করার পরে দু’হাত অবশ্যই সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

খোলা খাবার খাবেন না। বাসায় রাখা খাবার ফ্রিজে বেশিদিন রাখবেন না। ফ্রিজ থেকে বের করে তা অবশ্যই ভালো করে গরম করে খাবেন। দু’ঘণ্টার বেশি বাইরে রাখা খাবার গরম না করে খাবেন না। শিশুদেরকে এ সময় তেলেভাজা জিনিস, ফাস্ট ফুড এসব না দিয়ে তেল, মসলা কম দিয়ে খাবার রান্না করে দিন। কারণ অতিরিক্ত গরমে তেল, মসলাদার খাবার বা ফাস্ট ফুড হজমে সমস্যা হতে পারে।

গরমে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করুন। যদি মাথা ঝিমঝিম করে, চোখে ঝাপসা দেখেন অথবা রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কাউকে দেখেন তাহলে বুঝবেন এটা হিট স্ট্রোকজনিত কারণে হয়েছে। তাড়াতাড়ি তাকে ছায়ায় নিয়ে যান। শরীরে জামা কাপড় খুলে দিন। ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। প্রয়োজনে ৯৯৯ নং এ কল করে সাহায্য চাইতে পারেন।

গরমে তাই সাবধানে থাকুন। অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে না থাকাই ভালো। খাবার দাবার গ্রহণে সতর্ক হোন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন। যত্রতত্র পানি পান করার ব্যাপারে সাবধান হোন।

জুস, লাচ্চি, চটপটি, ফুচকা—এসব বাইরে তৈরি খাবার না খেয়ে প্রয়োজনে ঘরেই বানিয়ে খান। আর বানাতে না পারলে কী আর করবেন! না খেয়েই থাকুন তাহলে। কারণ তাতে অন্তত সুস্থ থাকবেন। টাকা খরচ করে অযথা জীবাণুকে আমন্ত্রণ জানানোর দরকার কী, বলুন?

লেখক : চিকিৎসক ও শিক্ষক। সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ।

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন