আনন্দময় শৈশবের প্রথম ধাপ
আমাদের জাতীয় সংগীতের একটা লাইন হচ্ছে, ‘মা, তোর মুখের বানী আমার কানে লাগে সুধার মতো।’ সত্যি সত্যি কিছু কথা আছে যেগুলো মনে হয় কানের ভেতর সুধা বর্ষণ হচ্ছে। যেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের বাচ্চাদের জন্য তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না, সেদিন আমার সেরকম মনে হয়েছে। আমাদের শিক্ষানীতিতে আমরা এই প্রস্তাবটি রেখেছিলাম কিন্তু কেউ মনে হয় এতোদিন সেদিকে ঘুরেও তাকায়নি। কীভাবে কীভাবে এই দেশে সবাই ধরে নিয়েছে লেখাপড়া মানে হচ্ছে পরীক্ষা। কাজেই পুরো লেখাপড়াটাই হয়ে গেছে পরীক্ষা কেন্দ্রিক, কাজেই পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়ার জন্যে দুধের বাচ্চাদের ওপর পর্যন্ত কী ভয়াবহ চাপ। প্রাইভেট এবং কোচিংয়ের সে কী রমরমা ব্যবসা। কাজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি শিক্ষানীতির হারিয়ে যাওয়া একটি প্রস্তাব এবং আমাদের মনের কথাটি বলেন, সেটি আমাদের কানে সুধার মতো লাগতেই পারে।
তবে আমি ভয়াবহ ভাবে ঘর পোড়া গরু, সিদুঁরে মেঘ দেখতে হয় না, এমনিতেই ভয় পাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় এই দেশের ছেলেমেয়েদের কী ভয়ংকর এক ধরনের কষ্টের ভিতর দিয়ে যেতে হয় সেটি দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় না। তাই বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় অবলীলায় অত্যন্ত নিম্নমানের ভর্তি পরীক্ষা নামে এক ধরনের প্রহসন করেই যাচ্ছেন, হয়তো তার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চোখে ছাত্রছাত্রীদের কষ্টটুকু ধরা পড়ে না।
কিন্তু আমাদের মাননীয় রাষ্ট্রপতির চোখে সেটি ঠিকই ধরা পড়েছিল। তিনি ব্যথিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে বলেছিলেন। তার সেই বক্তব্যটিও আমার কানে সুধা বর্ষণ করেছিল। কিন্তু তারপর কয়েক বছর কেটে গিয়েছে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আরেকটি এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে, দেখতে দেখতে পরীক্ষাটি শেষ হয়ে যাবে এবং কোচিং ব্যবসায়ীরা এই পরীক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের নিয়ে টানাটানি কাড়াকাড়ি শুরু করে দেবে। অথচ যদি আগে থেকে পরিকল্পনা করা থাকতো তাহলে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে একটি দিন ভর্তি পরীক্ষার জন্যে আলাদা রুটিন করে রাখা যেতো।
এইচএসসি এর অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষার মতোই তারা সেই একই কেন্দ্রে একই রোল নম্বরে পরীক্ষা দিতে পারতো। পার্থক্য হতো প্রশ্নপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মিলে সেই প্রশ্নপত্র করতেন। সেই ভর্তি পরীক্ষার নম্বরটি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করতে পারতো। যেহেতু মূল এইচএসসি পরীক্ষার শেষে এই পরীক্ষা নেয়া হতো তাই ছেলে মেয়েদের জন্য ব্যাপারটি হতো সবচেয়ে সহজ এবং স্বাভাবিক। অবশ্যই এর জন্যে আরো কিছু খুঁটিনাটি বিষয় ঠিক করে নিতে হতো। কিন্তু সেটি মোটেও বড় সমস্যা নয়। আমরা এখন এর থেকে শতগুণ বেশি জটিল সমস্যা সমাধান করতে শিখে গেছি। হ্যা, মেনে নিচ্ছি কোচিং ব্যবসায়ীরা মাতম করতে করতে আমাদের অভিশাপ দিতো। কিন্তু আমি বুকে থাবা দিয়ে বলতে পারি তাদের অভিশাপ থেকে লক্ষগুণ বেশি পেতাম আশীর্বাদ, পরীক্ষার্থী ছেলে মেয়েদের আশীর্বাদ, তাদের বাবা মায়ের আশীর্বাদ। যাই হোক সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি এখনো একটা দিবাস্বপ্নই রয়ে গেছে, এটি পূরণ হবার আগেই তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেওয়ার বিষয়টি এসেছে এবং আমি আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।
আমি জানি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেওয়ার ঘোষণাটি শুনে এই দেশের অসংখ্য বাবা মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। যেহেতু তারা জানেন লেখাপড়া মানেই হচ্ছে পরীক্ষা, তাই তারা ধরেই নিয়েছেন পরীক্ষা তুলে দেওয়ার অর্থই হচ্ছে লেখাপড়া তুলে দেওয়া। তারা প্রায় নিশ্চিত হয়ে ভাবছেন এই জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার এবং এখন এই দেশে অশিক্ষিত এবং মূর্খ একটা জাতি গড়ে উঠবে। পরীক্ষার ব্যাপারটি নিয়ে যাদের প্রায় মৌলবাদীদের মতো বিশ্বাস, তাদের বিশ্বাস টলানো সম্ভব নয়। কাজেই আমি সেই চেষ্টা করব না। তবে যারা স্বাভাবিক মানুষের মতো চিন্তা করতে পারেন তাদেরকে পরীক্ষা তুলে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
প্রথমত বিষয়টি হুট করে নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। এই দেশের শিক্ষানীতি কমিটিতে দেশের অনেক শিক্ষাবিদ ছিলেন তারা সবাই অনেক চিন্তা ভাবনা করে এই প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর অনেক শিক্ষাবিদ শিক্ষা গবেষকরা লেখালেখি করেছেন এবং তারা সবাই বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই দেশে বেশ কিছু শিশুবান্ধব স্কুল আছে, সেই স্কুলগুলোতে অনেক ভালো লেখাপড়া হয় এবং তারা অনেক দিন থেকেই ছোট ক্লাশগুলো থেকে পরীক্ষা তুলে দিয়েছেন সে জন্যে লখাপড়ার কোনো ক্ষতি হয়নি। বাচ্চাগুলো একধরনের আনন্দ নিয়ে নিজের মত করে লেখাপড়া করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে একটি ঘোষণা এসেছিল, তারা বলেছিলেন ছাত্রছাত্রীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে সেটি ঠিক করার পর পরীক্ষা তুলে দেওয়া হবে। ঘোষণাটি পড়ে আমি যথেষ্ট দুর্ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলাম, মূল্যায়ন মানে কী আরেক ধরনের পরীক্ষা? পরীক্ষা শব্দটি না বলে মূল্যায়ন শব্দটি ব্যবহার করে আবার নূতন করে বাচ্চা ছেলে মেয়েদের ওপর যন্ত্রণা চাপিয়ে দেয়া হবে? মূল্যায়নের জন্য প্রাইভেট আর কোচিং শুরু হবে? বাবা মা ভালো মূল্যায়নের জন্য ছেলে মেয়েদের ওপর চাপ দেওয়া শুরু করবেন? মূল্যায়নের জন্য গাইড বই বের হয়ে যাবে?
আমার ধারণা ব্যাপারটা আরো অনেক সহজভাবে দেখা সম্ভব। আমরা ধরে নেই ছেলে মেয়েদের আনুষ্ঠানিক লেখা পড়া শুরু হবে চতুর্থ শ্রেণি থেকে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত আমরা ছেলে মেয়েদের প্রস্তুত করব যেন তারা চতুর্থ শ্রেণি থেকে ঠিকভাবে লেখা পড়া শুরু করতে পারে।
ঠিক ভাবে লেখাপড়া শুরু করার জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি দরকার সেটাও আমরা আলোচনা করতে পারি। একেবারে কমনসেন্স থেকে আমরা বলতে পারি:
(ক) ছেলে মেয়েদের স্বচ্ছন্দে বাংলা পড়া শিখে যেতে হবে। তারা যেন যে কোনো বাংলা বই পড়তে পারে।
(খ) ছেলে মেয়েদের বাংলা লেখা শিখে যেতে হবে। হাতের লেখা দেখতে খুব ভালো না হতে পারে, বানান সবসময় শুদ্ধ না হতে পারে, কিন্তু লিখতে যেন সমস্যা না হয়।
(গ) ছেলে-মেয়েদের দুটি সংখ্যা যোগ বিয়োগ এবং গুন করা ভালোভাবে শিখে যেতে হবে। ছোট খাটো ভাগ করা শিখতে হবে। তবে যন্ত্রের মতো যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ করলে হবে না; এ বিষয়গুলো আসলে কী বোঝায় সেটি জানতে হবে।
(ঘ) সহজ ইংরেজি বাক্য শুনে সেটার অর্থ বোঝা শিখতে হবে। ছোট খাটো বাক্য ইংরেজিতে পড়া এবং লেখা শিখতে হবে।
যদি এই চারটি দক্ষতা মোটামুটি শিখে যায় তাহলে সেগুলো ব্যবহার করে বাচ্চারা কিছু কবিতা ছড়া মুখস্ত করে সেগুলো আবৃত্তি করা শিখে যাবে, তাদের বয়সের উপযোগী অনেকগুলো বই পড়ে ফেলতে পারবে, এক থেকে দশ কিংবা বারো পর্যন্ত নামতা মুখস্ত করে ফেলতে পারবে যেন পরে চট করে বড় বড় গুণ ভাগ করে ফেরতে পারে। নিজের মতো করে গল্প কবিতা লিখতে পারবে। চিঠি লিখতে পারবে। তাদের শ্রেণির জন্যে নির্ধারিত সমাজপাঠ বা বিজ্ঞান জাতীয় বইগুলো পড়ে ফেলতে পারবে। ক্লাশ শিক্ষকেরা বাচ্চাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতে পারেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার কথা বলতে পারেন, এক ধর্মের ছেলে মেয়েদের অন্য ধর্মের ছেলেমেয়েদের সাম্মান করা শেখাতে পারেন। পুরুষ এবং মহিলারা যে সবাই সব ধরনের কাজ করতে পরে সেটা মাথায় মাঝে ঢুকিয়ে দিতে পারেন। বাচ্চারা ক্লাশে আনন্দ করার জন্য ছবি আঁকতে পারে, হাতের কাজ করতে পারে, গান গাইতে পারে, নাচতে পারে, বিজ্ঞানের ছোট খাটো প্রজেক্ট কিংবা এক্সপেরিমেন্ট করতে পারে। এই বয়সী ছেলেমেয়েদের শরীরে যে প্রচণ্ড প্রাণশক্তি থাকে সেই প্রাণশক্তি ব্যবহার করার জন্য ছোটছুটি করে খেলতে পারে। এর বেশি আমরা আর কী চাইতে পারি?
ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যখন পরীক্ষা শব্দটি বানান পর্যন্ত করতে পারে না তখন থেকে তাদের পরীক্ষার ভয় দেখিয়ে আমরা লেখাপড়া শিখাতে চেষ্টা করে এসেছি। ফলাফল খুব ভালো হয়নি। যতবার যত ধরনের জরিপ নেয়া হয়েছে আমরা দেখেছি তাদের যে বয়সে যেটা শেখার দরকার তারা সেটা শিখতে পারেনি। যত উঁচু ক্লাশে উঠেছে অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। কাজেই আমাদের নিশ্চিত ভাবেই পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসার সময় এসেছে।
সাধারণ ভাবে পরীক্ষা বলতে আমরা যে ভয়ংকর বিষয়টি বোঝাই সেটা অবশ্যই নেয়া হবে না, কিন্তু এই ছেলেমেয়েদের কী পুরোপুরি নিজেদের উপর ছেড়ে দেওয়া হবে? তাদের কী কোনো ধরনের মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে? মূল্যায়ন শব্দটি ব্যবহার করতে আমার তা হয় তবে ছেলেমেয়েরা যখন যেটা শেখার কথা সেটি শিখছে কিনা সেটা অবশ্যই নজরে রাখতে হবে। সেটা বোঝার জন্য কোনো একটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষকেরা যদি টের পান কোনো একটা শিশু পিছিয়ে পড়েছে, তাকে আলাদাভাবে একটু সাহায্য করতে হবে, যদি দেখা যায় কোনো একটা শিশু এগিয়ে গেছে, তার মনের ক্ষুধা মেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
সবাই পাশাপাশি বসে একসাথে শিখবে, কারো সাথে কারো কোনো প্রতিযোগিতা নেই। আমাদের সত্যিকারের জীবনে আমরা যখন সত্যিকারের কাজ করি তখন কিন্তু আমরা কখনোই একজনের সাথে আরেকজন প্রতিযোগিতা করিনা। সবাই মিলেমিশে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে কাজ করি। যে যেটা ভালো করতে পারে তাকে সেই কাজটা করতে দিই। তাহলে কেন একটা ছোট শিশুকে প্রতিযোগিতা করে একজন আরেকজনকে হারিয়ে দিতে শিখাব? অবশ্যই প্রতিযোগিতা হবে। কিন্তু সবসময়ই সেটা হবে নিজের সাথে, আগেরবার যেটুকু করেছি এবারে তার থেকে একটু খানি ভালো করার চেষ্টা।
প্রতিযোগিতায় হেরে গেলে মন খারাপ হয়, শুধু মাত্র নিজের কাছে হেরে গেলে কখনো মন খারাপ হয় না। যেহেতু ছোট শিশুদের আনন্দময় একটি শৈশব উপহার দেওয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, আমরা তাহলে আরো একটি বিষয়ের কথা বলতে পারি। বাচ্চাদের গণিত শেখানোর জন্যে আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডের পদ্ধতিটি ব্যবহার করা যায় কিনা, সেটি নিয়ে এই মুহূর্তে একটি পাইলট প্রজেক্টের কাজ চলছে। যদি পাইলট প্রজেক্টটি ভালোভাবে শেষ হয় তাহলে শিশুদের নূতনভাবে এবং যথেষ্ট আনন্দের সাথে গণিতের সাথে পরিচয় করানোর একটা পরীক্ষিত পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।
প্রজেক্টের অংশ হিসেবে সারা দেশ থেকে অনেক প্রাইমারি শিক্ষক এসে ট্রেনিং নিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের একাধিক গ্রুপের সাথে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে। তাদের কাছে আমি সম্পূর্ণ নতুন একটা বিষয় জানতে পেরেছি। সেটি হচ্ছে সারা দেশে হুবহু ব্যঙের ছাতার মতো অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন গজিয়ে উঠছে। একটা ছোট বিল্ডিং এবং একটি চটকদার ইংরেজি নাম সম্বল নিয়ে সেই স্কুলগুলি চলছে। আমাদের ছেলেমেয়েদের বাবা মায়েরা দেশের সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে সরিয়ে এই কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে ছেলেমেয়েদের দিতে শুরু করেছেন। এর মূল কারণ সরকারী প্রাইমারী স্কুল গুলোতে ক্লাশের সময় অনেক দীর্ঘ এবং মোটেও ছোট শিমুদের বয়সের উপযোগী নয়। এটি একটি খুবই গুরুতর বিষয়। ছোট বাচ্চাদের স্কুল জীবনের শুরুতেই আমরা যদি তাদেরকে দীর্ঘ ক্লান্তিকর এবং আনন্দহীন জীবনে ঠেলে দিই তাহলে কেমন করে হবে? আমার ধারণা বিষয়টি নিশ্চয়ই বিবেচনা করানো দরকার। বেশি পড়ানোই ভালো নয়। শিক্ষায় বাজেট নেই, স্কুলগুলোতে শিক্ষকের অভাব, তারপরও যদি আমরা শিশুদের অহেতুক পড়াশোনা করানোর নামে ক্লাশে আটকে রাখি তাহলে কেমন করে হবে?
এই দেশে যখন সৃজনশীল পদ্ধতি শুরু হয়েছিল আমি তখন খুব আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু এখন বেশিরভাগ সময়েই দীর্ঘ নি:শ্বাস ফেলতে হয় কারণ সৃজনশীল প্রশ্নের গাইড বই বের হয়েছে এবং পরীক্ষায় সেখান থেকে প্রশ্ন আসছে। আগে শিশুরা শুধু বই মুখস্ত করতো এখন তার সাথে সৃজনশীল গাইড বই মুখস্ত করে। এর চাইতে হৃদয় বিদারক ব্যাপার আর কী হতে পারে? অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সমস্যার খুব কার্যকর সমাধান আছে এবং আমি নিজের কানে সেই সমাধান নিয়ে আলোচনা হতে শুনেছি, কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হতে দেখছি না।
শুধু যে গাইড বইয়ের প্রশ্ন দিয়ে ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তা নয়, ছেলে-মেয়েদের বোঝানো হয়েছে পরীক্ষার খাতায় সবকিছু বেশি বেশি করে লিখতে হবে। কাজেই ছেলেমেযেদের কাছে পরক্ষিাটি একটি আতংক। আমি বুঝে পাই না কেন ছাত্র ছাত্রীদের আমাদের প্রতিপক্ষ মনে করে লেখাপড়া শেখানোর নামে তাদেরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছি? তাদের দিক থেকে কেন একটিবার পুরো ব্যাপারটি বিবেচনা করি না?
ক্লাশ থ্রি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেওয়ার উদ্যোগটি নি:সন্দেহে অনেক বড় একটা উদ্যোগ, ভাগ্যিস এটি স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এসেছে। তার মুখ থেকে উচ্চারিত না হওয়া পর্যন্ত এই দেশে কিছু হয় না। কাজেই আমরা আশা করে আছি আমাদের দেশের শিশুদের শৈশবটি হয়তো প্রথমাবারের মতো একটু আনন্দময় হবে।
একটা শিশুকেই যদি আমরা আনন্দময় শৈশব উপহার দিতে না পারি তাহলে আমাদের বেঁচে থেকে কী লাভ?
লেখক: অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
এইচআর/এমএস