ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

কিডনী রোগ, ভেজা চোখ ও লাল টিস্যু পেপার

ডা. শুভার্থী কর | প্রকাশিত: ১০:৪১ এএম, ১৪ মার্চ ২০১৯

গেল বছরের একদিন আমি রোগীদের সাথে তাদের রোগ নিয়ে কাউন্সেলিং করছিলাম। এক পর্যায়ে একটি ছেলে তার বাবাকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসলো। তার বাবার দুইটি কিডনীই বিকল হয়ে পড়েছে। জানালাম যে, কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট বা জীবনভর ডায়ালাইসিস এর বাইরে আর কোন চিকিৎসা অবশিষ্ট নেই।

কথার ফাঁকে খেয়াল করলাম হুইল চেয়ারের হাতল ধরা সন্তানটি নীরবে লাল টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুছছিল যেন তার বাবার কাছে ধরা না পড়ে যায়। ছেলেটি কাঁদছিল কারণ বাবার চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য তার নেই। আমি যখনই কাউন্সেলিং করি, ওই অসহায় ছলছল দুটি চোখ আমার সামনে হাজির হয়। সত্যি বলতে কী এ দৃশ্য থেকে বের হতে পারি না।

কিডনীর অগুণতি রোগ থাকলেও রোগের চরিত্র, ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা বিবেচনা করলে ক্রনিক কিডনী ডিজিজ বা সিকেডিকে সবার আগে বিবেচনায় নিতে হয়। এই সিকেডি এর পঞ্চম ধাপ হল ডায়ালাইসিস বা কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট। আমরা পত্র-পত্রিকায় দুইটি কিডনী বিকল, সাহায্যের প্রয়োজন- এ ধরনের যত আবেদন দেখি তাদের প্রায় সবাই সিকেডি-৫ বা পঞ্চম স্তরের সিকেডিতে আক্রান্ত। এদের জন্য ডায়ালাইসিস বা কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট এর বিকল্প নেই।

গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশের ৭০-৮০ ভাগ সিকেডি-৫ অর্থাভাবে বা সুযোগের অভাবে ডায়ালাইসিস নিতে পারে না। এদের ভাগ্যে কী ঘটে তা সহজেই অনুমেয়। যারা কষ্ট করে ডায়ালাইসিস শুরু করে, তাদের একটা অংশ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক তা সহজেই অনুমান করা যায়।

সিকেডি এর প্রধানতম কারণ ডায়াবেটিস। দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দা হিসেবে আমাদের দেশের মানুষের ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিস জনিত কিডনী রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। আমরা যদি আমাদের দেশের কিডনী রোগের প্রকোপ কমাতে চাই, তাহলে ডায়াবেটিসের সেবার দিকে নজর দিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার প্রথম দিন থেকেই নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রস্রাবের আমিষ পরীক্ষা ও রক্তের Serum Creatinine (ক্রিয়েটিনিন) পরীক্ষা করাতে হবে।

দ্বিতীয়ত উচ্চরক্তচাপ নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক মিথ কাজ করে। সিকেডি’র দ্বিতীয় প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ। এ বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণ জনসচেতনতামূলক কাজ করতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ এর ওষুধের দাম যেন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে, সে দিকটাও খেয়াল রাখা দরকার। চল্লিশ বছর বয়সের নিচে যদি কারো উচ্চরক্তচাপ হয়, এবং তার যদি উচ্চরক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস না থাকে, তাহলে পুংখানুপুঙ্খ ভাবে কিডনীর পরীক্ষা করাতে হবে।

জিএন বা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস নিয়ে আমাদের দেশে খুব কম আলোচনা দেখা যায়। আমাদের এমবিবিএস কারিকুলামে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন আছে। জিএন বা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস থেকেও মানুষের কিডনী ফেইল্যুর হয়। আমাদের জেনারেল প্র্যাক্টিশনার সহ সকল স্তরে জিএন নিয়ে আলোচনা ও রিফ্রেশার্স কোর্স করার প্রয়োজন রয়েছে।

তার মানে সিকেডি বা কিডনী ফেইল্যুর সর্বাংশে না হলেও বহুলাংশে চিকিৎসাযোগ্য বা প্রতিরোধযোগ্য। পায়ের সামান্য ফোলা থাকলেও প্রস্রাবের আমিষ ও Serum Creatinine (ক্রিয়েটিনিন) পরীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগটি ধরা পড়লে চিকিৎসার একটা উপায় থেকে যায়।

আজ ১৪ই মার্চ, বিশ্ব কিডনী দিবস। প্রতি বছর মার্চ মাসের ২য় বৃহস্পতিবারে এ দিবস পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য কিডনী স্বাস্থ্যসেবা-সবার জন্য সবখানে। সারা দুনিয়াতেই চিকিৎসা সেবা ব্যয়বহুল। কিডনী চিকিৎসার বেলায়ও একই বক্তব্য প্রযোজ্য।

কিডনী চিকিৎসা সেবায় ধনী দেশ এর সাথে স্বল্পোন্নত ও অনুন্নত দেশগুলোতে মারাত্মক বৈষম্য বিরাজ করছে। এ বাস্তবতায় এবারের স্লোগান স্বল্পোন্নত দেশের কিডনী রোগীর জন্য আশার বাণী নিয়ে আসুক- এটাই কামনা করি।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।
[email protected]

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন