ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

মোদীর নির্বাচনী ট্রেনে জইশ-ই জোশ!

প্রভাষ আমিন | প্রকাশিত: ০৯:৫৭ এএম, ০৪ মার্চ ২০১৯

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাদের মাটিতে আটকেপড়া ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ফেরত পাঠিয়েছেন। শান্তির বার্তা হিসেবেই ইমরান অভিনন্দনকে দ্রুত ফেরত পাঠিয়েছেন। মুখে যাই বলুন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও পাকিস্তানে একটি অভিনন্দন বার্তা পাঠাতে পারেন। তবে সেটা ইমরান খানের কাছে নয়, জইশ-ই-মোহাম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারের কাছে।

ভারত যখন আরেকটি নির্বাচনের সামনে, নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী ট্রেন যখন ক্রমশ গতি হারাচ্ছিল, তখনই জইশ-ই-মোহাম্মদ সেই ট্রেনে জোশ এনে দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী এখন চাইছেন, সেই জোশে ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে। তাই মুখে যাই বলুন পুলওয়ামা হামলার দায় স্বীকার করা জইশ-ই-মোহাম্মদকে মনে মনে হলেও ধন্যবাদ জানাবেন মোদী।

পাঁচ বছর আগে নরেন্দ্র মোদী যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন তাকে অপরাজেয় মনে হচ্ছিল। দুর্বল ও নেতৃত্বহীন কংগ্রেস আর বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের সামনে মোদীর নতুন বিজেপি যেন হিমালয় পর্বতমালা। কিন্তু পাঁচ বছরেই পাল্টে গেছে চাকা। শুরু হয়েছে উল্টো ঘোরা। হিমালয়কেও আর অজেয় মনে হচ্ছে না। একে একে পাঁচটি রাজ্যে বিজেপির ভরাডুবির পর বিজেপি শিবিরের দুর্বলতাগুলো সামনে চলে আসে।

তবে সম্প্রতি কলকাতায় বিজেপিবিরোধী মহাসমাবেশ সে দুর্বলতাকে আতঙ্কে বদলে দিয়েছে। মমতার ডাকা সে মহাসমাবেশে বিজেপি হটানোর লক্ষ্য নিয়ে অন্তত ২০টি দলের শীর্ষ নেতারা এক মঞ্চে উঠেছিলেন। ভারতের ইতিহাসে এমন ঐক্য বিরল। সে মহাসমাবেশ আসলে মোদীর মিথ ভেঙ্গে দিয়েছে। তাকে এখন আর অজেয় মনে হচ্ছে না।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি তিনশর বেশি আসন পেলেও ভোট পেয়েছিল ৩০ শতাংশ। তার মানে সর্বগ্রাসী বিজয়ের সময়ও ভারতে তাদের বিরুদ্ধে ৭০ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার ফায়দাই তুলেছেন নরেন্দ্র মোদী। সাথে ছিল কট্টর জাতীয়তাবাদ আর হিন্দুত্ববাদের ঝান্ডা। কিন্তু পাঁচ বছরে মোদী ম্যাজিক অনেকটাই ম্লান।

৩০ ভাগ ভোটের অনেকটাই কমে গেছে। আর বিরোধী ৭০ ভাগের পুরোটা না হলেও একটা বড় অংশও যদি মোদীর বিরুদ্ধে জোট বাঁধে, তাহলে মোদীর প্রত্যাবর্তন কঠিন হবে। এখন মোদীর বিরোধী জোটের নেতৃত্ব কে দেবেন- মমতা না মায়াবতী, রাহুল না প্রিয়াঙ্কা, নাইডু না যাদব; অপেক্ষা সেটার।

এই অবস্থায় মোদীর পুরোনো ম্যাজিকে কাজ হবে না, নতুন কোনো ম্যাজিক লাগবে। সেই ম্যাজিকটাই যেন এলো ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায়। আত্মঘাতী হামলায় ভারতের আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ সেনার মৃত্যু হয়। আর পাকিস্তানে লালিত জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকারের পর মোদী আবার কট্টর জাতীয়তাবাদ আর সাম্প্রদায়িকতার ঝান্ডা ওড়ানোর সুযোগ পেয়ে যান।

১২ দিনের মাথায় পাকিস্তানের বালাকোটে উড়ে গিয়ে জইশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেন মোদী। ভারতবাসীকে আশ্বস্ত করেন, ভারতের নেতৃত্ব ঠিক হাতেই আছে। ভারত দাবি করে বালাকোটের হামলায় ৩০০ জঙ্গী মারা গেছে। এ পর্যন্ত সবকিছু মোদীর নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু বালাকোটের হামলায় জঙ্গী নিধনের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি ভারত। পাকিস্তান হামলার কথা স্বীকার করলেও ৩০০ জন মারা যাওয়ার দাবি উড়িয়ে দেন।

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও বালাকোটে কারো মৃত্যুর খবরের সত্যতা মেলেনি। এরপরই মোদীর অবস্থান দুর্বল হতে থাকে। পরের দুদিনে তা আরো অবনতি ঘটে। বালাকোট হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ছোটখাটো আকাশযুদ্থ হয়। তাতে ভারতের দুটি আর পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে নরেন্দ্র মোদী বিপাকে পড়েন পাইলট অভিনন্দন বর্তমান প্যারাসুটে পাকিস্তানের মাটিতে অবতরণ করায়।

পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বিক্ষুব্ধ মানুষের হাত থেকে অভিনন্দনকে উদ্ধার করে। কিন্তু মোদী সরকার অভিনন্দন কার্ড খেলা শুরুর আগেই ইমরান খান তাকে ফিরিয়ে দেয়ায় মোদী আবার পিছিয়ে পড়েন। তবুও ফিরে আসা অভিনন্দনকেই তুরুপের তাস করতে চাইছেন মোদী। আলোচনার প্রস্তাব আর অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দিয়ে ইমরান মোদীর জোশে অনেকটাই পানি ঢেলে দিয়েছেন। তবে উত্তেজনা কমলেও এখনও পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি।

আমার ধারণা যুদ্ধ কেউই চান না। যুদ্ধ কারো জন্যই শুভ নয়। যুদ্ধ শুধু ধ্বংস আনে। তবু রাজনীতির হিসাব-নিকাশ যুদ্ধ ডেকে আনে। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে অস্থিতিশীল হবে দক্ষিণ এশিয়া, যার প্রভাব পড়বে সারাবিশ্বে।

একদম স্বার্থপরের মত ভাবলে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আঁচ লাগবে বাংলাদেশেও। আমরা চাই সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হোক।

এইচআর/এমকেএইচ