ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বেপরোয়া যান আর কত প্রাণ নেবে?

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ১০:০৭ এএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বেপরোয়া যান আর কত প্রাণ নেবে- এই প্রশ্ন এখন ভুক্তভোগীদের। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর আশা করা গিয়েছিল এবার সড়কে হয়তো শৃঙ্খলা ফিরবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। অবস্থা তথৈবচ। এর উত্তরণ জরুরি। দুর্ঘটনা রোধে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ।

এবার রাজধানীর উত্তরায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ফাইজা তাহসিনা সূচি (১০) নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে উত্তরা রাজউক এলাকার ১০ নম্বর ব্রিজের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফাইজা তাহসিনা সূচি দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ফাইজা দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক ফাইজুল ইসলামের মেয়ে। দুর্ঘটনার পর গুরুতর আহতাবস্থায় সূচিকে উদ্ধার করে উত্তরার বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা দেন। রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের ১০ নম্বর ব্রিজের সামনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার গাড়িটি ছিল শ্যুটিংয়ের মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ ১৩-৪১৫৭)। ঘাতক মাইক্রোবাসটি জনতার সাহায্যে আটক করা হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু একটি পরিবারে গভীর শোক, ক্ষত সৃষ্টি করে না, আর্থিকভাবেও পঙ্গু করে ফেলে ওই পরিবারকে। কোন কোন দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি প্রাণ হারান। তখন ওই পরিবারের যে কী অবস্থা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করে তাদের পরিবারের অবস্থা আরও করুণ, আরও শোচনীয়।

এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বছরে গড়ে বাংলাদেশের জিডিপির শতকরা দেড় ভাগ নষ্ট হয়, যার পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বিগত ১৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৫ হাজার মানুষ। আর দুর্ঘটনাজনিত মামলা হয়েছে প্রায় ৭৭ হাজার। এসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এখন অন্যতম জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সঙ্গতকারণেই এই সমস্যা থেকে মানুষজনকে মুক্ত রাখার সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা জরুরি।

দুর্ঘটনার কারণগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলেই কমবেশি জানেন। এর মধ্যে রয়েছে- দেশে সড়ক অবকাঠামো এবং স্থলভাগের আয়তন অনুপাতে জনসংখ্যার চাপ বেশি। সড়কের তুলনায় মোটরযানের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। একই সড়কে চলছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, রিকশাসহ নানা রকম মিশ্র যানবাহন। উপরন্তু সড়ক ও মহাসড়কগুলো ত্রুটিপূর্ণ। দেশব্যাপী মহাসড়কের অনেক স্থানেই রয়েছে বিপজ্জনক বাঁক। এসব বাঁকের কারণে প্রায়শই সেসব জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে।

প্রতিবার দুর্ঘটনার পর পরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদন কোনদিন আলোর মুখ দেখে না। আর সঙ্গত কারণেই দোষীদের শাস্তিও হয় না। সমাজের উঁচু স্তর থেকে নিচু শ্রেণির মানুষ- যারাই দুর্ঘটনার শিকার হন না কেন কোন একটি ঘটনার বিচার হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত মেলা ভার। আর বিচারহীন, প্রতিকারহীন অবস্থায় কোন কিছু চলতে থাকলে সেটির পুনরাবৃত্তিও তো ঘটবেই। প্রশ্ন হচ্ছে, কত প্রাণ গেলে, মৃত্যুর মিছিল কত দীর্ঘ হলে তবে থামবে এই হত্যাযজ্ঞ?

সড়ক দুর্ঘটনা হয় না এমন দেশ নেই। কিন্তু দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতি যত কমিয়ে আনা যায় সেটিই লক্ষ্য হওয়া উচিত। ভাল যান, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক, সড়ক ব্যবস্থা উন্নতকরণ, সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিক ও যুগোপযোগী করার বিষয়গুলো তো রয়েছেই। এর সঙ্গে দুর্ঘটনায় পতিতদের ত্বরিত চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় আইনি জটিলতার কারণে আহতদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হয়। এ সমস্যাটি সমাধানেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন