ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বইমেলার পূর্বাভাস

তুষার আবদুল্লাহ | প্রকাশিত: ১০:১৭ এএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

আমি ঘ্রাণ পেয়ে গেছি। যতোটুকু উদোরে, মস্তিষ্কে নিয়ে নেয়া যায় নিয়ে নিয়েছি। টাটকা বইটি চর্যা ও রণ্টি বেশ কিছুক্ষণ নাকের কাছে ধরে রেখেছিলাম। কাগজ ও কালির কি মধুর সুঘ্রাণ!

২৯ জানুয়ারিতেই টাটকা বইয়ের স্বাদ নেয়া সদ্য প্রসবিত সন্তান কোলে তোলে নেয়ার অভিজ্ঞতার মতোই। শরীরে মেলা মাঠের ধুলোও মেখে নিয়েছি মনের মতো করে। ধুলোতে স্নান করতে গিয়ে দেখলাম মেলা মাঠের নকশা এবার খানিক বদলে গেছে। মুগ্ধ হয়েছি রমনা কালী মন্দিরের প্রবেশ দ্বার দিয়ে ঢুকে মেলা মাঠের উত্তর প্রান্তে স্পষ্ট স্বাধীনতা স্তম্ভটি দেখতে পেয়ে।

এবার স্তম্ভটি টিনের বেড়াতে আড়াল করে দেয়া হয়নি। স্বাধীনতা স্তম্ভ এবং তার জলাধার এবার মেলার অংশ। জলাধারের পাশের সারি সারি কংক্রিটের বেঞ্চি হবে পাঠক, লেখক, প্রকাশকের আড্ডার কেন্দ্র। স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দে কিছুটা শৃঙ্খলা এলেও পুরোটা আসেনি।

রমনা কালি মন্দির গেইট দিয়ে প্রবেশ মাত্র স্টল বরাদ্দ না দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উত্তর পশ্চিম দিকের খালি জায়গাটি মেলার অংশ করে নেয়া যেতো। এতে স্বাধীনতা স্তম্ভ রয়ে যেত মেলার মাঝখানে। আর গেইট দিয়ে প্রবেশ করে দর্শনার্থীরা খানিকটা উন্মুক্ত জায়গা পেতেন। একটু ধাতস্থ হয়ে নিয়ে বেছে নিতে পারতেন, কোন দিক দিয়ে শুরু করবেন মেলার সফর।

তবে দুই সারির স্টলের মাঝের পথ এবার বেশ প্রশস্ত রাখা হয়েছে। দর্শনাথীদের চলাচল সহজ হবে। শিশু চত্বরের প্রতি বাংলা একাডেমি এবং নকশাকারদের আরো যত্নবান হওয়া দরকার। এই চত্বরটির জন্য আরো খোলামেলা হওয়া প্রয়োজন। শিশু-কিশোররা যেন অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দের সঙ্গে স্টলে স্টলে ঘুরে বেড়াতে পারে। ভিড় যেন ওদের বিরক্তির কারণ হয়ে না ওঠে।

নতুন মহাপরিচালক এসেছেন। তিনিও যে তাঁর পূর্বসূরীদের মতো মেলা আয়োজনে নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়ছেন, তা দূর থেকেও অনুমান করতে পারি। স্টল, প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া নিয়ে প্রকাশকদের নানা পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়েই মহাপরিচালক, সচিবের ঘাম ঝরে মেলা শুরুর আগেই।

আমাদের প্রকাশকরা দৃশ্যত আন্তর্জাতিক উঠোনে পা রাখার তাড়না এবং প্রকাশনাকে শিল্পে রূপ দেয়ার রূপকার দাবি করলেও, তারা যে এখনো পেশাদার হয়ে উঠতে পারেননি, তা নিয়ে বিতর্কের প্রয়োজন নেই। তারা নিজেরাও এ কথা মৃদুস্বরে স্বীকার করে নেন।

তবে প্রকাশনায় যে নতুনদের ভিড় বাড়ছে, তারা পেশাদারিত্বের সাক্ষর রাখতে শুরু করেছেন। বইয়ের গুণগত মান, পাঠকের রুচি ও বইকে পণ্য হিসেবে তারা রাখছেন বিবেচনায়। পূর্বসূরীদের তৈরি করে দেয়া পথের উপযোগিতা বাড়াচ্ছেন নবাগতরা।

মেলায় বানের জলের মতো বই প্রকাশ হবে। আধিপত্য থাকবে মওসুমী প্রকাশক ও লেখকদের। তারই মধ্যে প্রকৃত সৃজনশীল প্রকাশককে পাঠকের কাছে পৌঁছতে হবে। পাঠককেও খুঁজে নিতে হবে তার প্রত্যাশিত বইটি। সস্তা প্রচারে বিমোহিত হয়ে ঠকলে চলবে না। ভেসে যাওয়া যাবে না জনপ্রিয়তার কালো জলে।

প্রতিবারই পাঠকদের ঠকতে দেখি। বিশেষ করে শিশু-কিশোর পাঠকদের। অভিভাবকরা তাদের মর্জি মতো সন্তানকে বই কিনে দেন। একটা বাজেট থাকে, সেই বাজেটে কিনে নেন যেমন খুশি বই। টিভি সিরিয়াল, কার্টুন আর সিলেবাসের বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত বই কেনার প্রবণতা আছে। এধরনের বই শিশু কিশোরদের আনন্দ দেয় না মোটেও।

প্রতিমেলাতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেখি প্রতিষ্ঠানের পাঠাগারের জন্য ফর্দ হাতে দৌড় ঝাঁপ করে বই কিনছেন। তাদের সঙ্গে মওসুমী প্রকাশকদের আড়ালের চুক্তি আছে। বড় কমিশনের বিনিময়ে যেমন তেমন বই কিনে ফিরে যান তারা। শিক্ষকদের ব্যক্তিগত লাভে ছাড় দিয়ে সংখ্যায় কম হলেও গুণগত বই কেনায় দয়ালু হওয়া দরকার।

শুক্রবার শুরু হলেও বইমেলা মেজাজ পাবে হয়তো পরের শুক্রবার। মুখরতা পেতে সময় নেবে সপ্তাহখানেক। মেলার সার্থকতা নির্ভর করে দর্শনার্থীদের সহজ প্রবেশ-প্রস্থানে। প্রবেশ-প্রস্থান দুর্ভোগের হবেনা বলে এখন পর্যন্ত পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। তার সঙ্গে যোগ হোক নিরাপত্তা। তাহলেই প্রাণের বইমেলা হয়ে উঠবে আনন্দমুখর।
লেখক : বার্তা প্রধান, সময় টিভি।

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন