ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

শুভ চেতনা উদয় হোক!

শাম্মী আক্তার | প্রকাশিত: ১০:১১ এএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

দুঃখ হচ্ছে ঐ সব মেয়েদের জন্য যারা বা যাদের পরিবার আহমদ শফীর মতাদর্শে বিশ্বাসী। বাংলাদেশে যেখানে ছেলে মেয়েরা সমান্তরালভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, পারিবারিক, সামাজিক, ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে সেখানে সেই দেশেরই কতিপয় জনগোষ্ঠীকে অন্ধ করে রাখতে চায় আহমদ শফীর মত মানুষেরা যাতে করে যুগের পর যুগ এই অন্ধ শ্রেণির মানুষেরা তার মতাদর্শের অনুসারী হয়।

পাশাপাশি আমরা এও শুনেছি তাদেরকে জন্ম নিরোধক ব্যবহারে চরমভাবে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। এ যেন বংশ পরম্পরায় অনুসারী বৃদ্ধি করার এক সূক্ষ্ম কৌশল! যদি আমরা শহরের মানুষের সাথে গ্রামের মানুষের জীবন মান তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে গ্রামের মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া বেশি জরুরি। নাহলে একজন দিনমজুর পরিবারের মেয়ে দিনমজুরই হবে এবং একজন অশিক্ষিত পরিবারের মেয়ে আজীবন অশিক্ষিত হয়ে অন্ধকারেই থেকে যাবে।

এর ফলে একদিকে যেমন এরা দারিদ্রের দুষ্ট চক্র থেকে মুক্তি পাবেনা তেমনি অন্ধকার জীবনের মধ্যেই ঘুরপাক খেয়ে শেষ হবে জীবন চক্র। এটা একদিকে যেমন পরিবারের জন্য অভিশাপ স্বরুপ তেমনি এই শ্রেণির মানুষ সমাজ এবং জাতির জন্য বোঝা স্বরূপ।

কিন্তু শুধু মাত্র একটা ম্যাজিকাল পাওয়ার এই অভিশাপ কে আশীর্বাদে রূপান্তর করতে পারে। সেটা হচ্ছে শিক্ষা। সকল সম্পদের সম্পদ হচ্ছে "শিক্ষা সম্পদ"। বাংলাদেশে অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সবাই এই সম্পদের গর্বিত অংশীদার হতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে একটা শ্রেণি কতিপয় জনগোষ্ঠীর চোখ বন্ধ করে তাদেরকে সম্পদ হীন করতে চায়, দাস বানাতে চায়, মানসিক ভাবে পঙ্গু করে রাখতে চায়। বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী যেখানে নারী সেখানে তাদেরকে অক্ষম, অথর্ব করে রাখা মানে হচ্ছে দেশটাকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া।
আহমদ শফী যদি দাবি করেতেন যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি তৎক্ষণাৎ মৃত্যুদণ্ড চায় বা যৌন নিপীড়নের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি তাহলে মনে হয় অনেক বেশি সমীচীন হতো।

আহমদ শফী যদি বলতেন যে আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত হোক এই দাবি জানাই। কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী পুরুষের অনুপাত সমান হলে দেখা যাবে যৌন নিপীড়ন শব্দটার আর অস্তিত্ব থাকবে না।

উনি যদি বলতেন আসুন আমরা পুরুষেরা সবাই মিলে আমাদের মেয়েদের জন্য, বোনদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করি যাতে করে সবাই সমানভাবে পরিবার গঠনে, সমাজ গঠনে, দেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। তাহলে কতোই না যুক্তিযুক্ত হতো!

উনি যদি বলতেন আসুন আমরা পুরুষরা নিজেদেরকে সংযত করি কারণ মেয়েদের দিকে কুরুচিপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকানো ব্যভিচারের শামিল সেজন্য আসুন আমরা আমাদের দৃষ্টি, মন সংযত করি, মানসিকতা উন্নত করি এবং মেয়েদের জন্য পরিবেশ নিরাপদ করি। তাহলে সেটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় হতো।

উনি যদি বলতেন যে শিক্ষাই হচ্ছে একমাত্র হাতিয়ার বা শক্তি যা মেয়েদেরকে স্বাবলম্বী করতে পারে এবং পরিবারের, সমাজের চিত্র দারুণ ভাবে পরিবর্তন করতে পারে। আসুন আমরা সবাই তাদের কে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য, নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্য সোচ্চার হয় তাহলে সেটা কতই না সুন্দর হতো!

উনি যদি বলতেন যে যেহেতু সব রকমের অসচ্ছলতা, অপুষ্টির কারণ হচ্ছে অশিক্ষা। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে সমাজের সমস্ত রকমের কুসংস্কার দূর করে মেয়েদেরকে শিক্ষিত করি, ছেলেদের মতো তাদেরকেও সম্পদে পরিণত করে তাদের আলোয় আলোকিত করি সমাজ ও দেশ। তাহলে সেটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় হতো।

উনি যদি বলতেন আসুন আমরা পুরুষদের উপর নজরদারি বাড়িয়ে দিই যাতে করে আমাদের মেয়েরা নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে। সেটা অনেক বেশি প্রশংসনীয় হতো।

উনি যদি বলতেন আসুন আমরা আমাদের মেয়েদের সর্বোচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করি যাতে করে খুব দ্রুতই সেই স্বর্ণালী সময় আসে যেখানে ছেলে মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে অনুপাত সমান থাকবে যেটা কিনা যৌন নিপীড়ন নির্মূল এর অন্যতম অনুঘটক হবে।

মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া মানে প্রাপ্ত বয়সে তাদের বিয়ে হওয়া, প্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়া মানে পুষ্ট সন্তান জন্ম দান করা, পুষ্ট সন্তান মানে তার বুদ্ধিবৃত্তিক, শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক ও আবেগীয় বৃদ্ধি ভালো আর একটা বুদ্ধিদীপ্ত শিশু একটি ভালো চক্রের সূচনাকারী। মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া মানে একটি স্বাবলম্বী পরিবারের সূত্রপাত হওয়া, মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া মানে একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সূত্রপাত হওয়া, মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া মানে একটি কর্মক্ষম পরিবারের সূত্রপাত হওয়া, , মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া মানে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের বিনাশ হওয়া, মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া মানে পরিবারের সৌন্দর্য বর্ধন হওয়া। আশা করি সবার সঠিক উপলব্ধি হবে এবং শুভ চেতনার উদয় হবে এবং বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে।

জাতিসংঘের ১৯৩ টি দেশ স্বাক্ষরিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সমূহের (এসডিজি) মধ্যে অন্যতম ৪ নং লক্ষ্যে স্পষ্টভাবে নারী শিক্ষার কথা বলা হয়েছে তা হলো ; সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে ন্যায্য ও মানসম্মত শিক্ষা এবং সবার জন্য আজীবন শেখার সুযোগ সৃষ্টি করা যা কিনা ১. সব দেশ থেকে সব ধরনের দারিদ্র্য দূরীকরণ, ৩. স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করা এবং সব বয়সী মানুষের জন্য সমৃদ্ধ জীবনের প্রণোদনা প্রদান, ৫. লিঙ্গসমতা অর্জন এবং কন্যাশিশু ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, ৬. সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশন সহজলভ্য করা এবং এর টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, ও ৮. সবার জন্য মানসম্মত কাজ ও উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি লক্ষ্য সমূহের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

সুখের বিষয় যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংবিধানের ১০ ও ২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী "জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ" এবং রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী- পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর"। কারণ বাংলাদেশ ও বাঙালি শিক্ষার অমৃত স্বাদ পেয়েছে এবং এ জাতি বিশ্বাস করে শিক্ষার ক্ষেত্রে যে জাতি যত সাফল্য অর্জন করবে, সে জাতি জীবন - জীবিকার মানোন্নয়নে ও মানবিক গুণাবলী বিকাশে ততটাই অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি লাভ করবে।

আমরা আশাবাদী, আমরা নিশ্চিন্ত কারণ আমরা জানি কোন কিছুই শিক্ষানুরাগী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দমাতে পারবে না বরং এগুলো তার গতিকে আরও বেশি বেগবান করবে।
জয় হোক শিক্ষার, জয় হোক সকল নারীর।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
[email protected]

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন