ডেঙ্গু জ্বর ছোটদের জন্যও বিপজ্জনক
ডেঙ্গু জ্বর ছোট বড় সবার জন্য হুমকিস্বরূপ। ডেঙ্গু এক ধরনের ভাইরাসজনিত জ্বর। এই জ্বর এডিস এজেপটি (Agepti) নামক এক ধরনের স্ত্রী মশার কামড়ে হয়। একজন রোগী থেকে অন্য রোগীতে এই জ্বর সংক্রমিত হয় না। এ বছর গতবারের তুলনায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি। এবার শিশুরাও অনেক বেশি পরিমাণে আক্রান্ত গত বছরের তুলনায়।
শিশু ও বড়দের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের কিছু উপসর্গ থাকে একই রকম। যেমন :
১) জ্বর ১০১ থেকে ১০৫ পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। জ্বর সাধারণত এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হতে পারে। আবার সব সময় উচ্চমাত্রার জ্বর নাও থাকতে পারে। জ্বর ভালো হবার পর থেকে ব্রণের মতো লালচে র্যাশ বের হতে পারে। র্যাশ অনেকের শরীরে ঘামাচি দানার মতোও হয়।
২) খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, অ্যাসিডিটিও থাকতে পারে। অনেকের বমির পরিমাণ বেশি হয়। খাবারে গন্ধ লাগে।
৩) পুরো দেহের হাড়ে বা জয়েন্টে জয়েন্টে ভয়ানক ব্যথা হয়। এই জ্বরের আরো একটি নাম হলো ব্রেক বোন ফিভার (Break Bone Fever)। হাড় ভেঙে যাবার মতো সারা শরীরে ব্যথা হয়।
৪) খুব দুর্বল লাগে। পানি শূন্যতা হতে পারে।
৫) ডেঙ্গু জ্বর ভয়ানক খারাপ পর্যায়ে চলে গেলে ব্লাড প্রেসার দ্রুত কমতে থাকে। রোগী শকে পর্যন্ত চলে যায়। হৃৎপিণ্ড, লিভার, কিডনি ফেইলর হয়ে রোগী মারাও যায়। ডেঙ্গু জ্বরের এই খারাপ অবস্থাকে বলে 'ডেঙ্গু শক সিনড্রোম'। এই অবস্থায় রক্তপাতও হয়। নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, মলের সাথে রক্ত, বমির সাথে রক্ত যেতে পারে।
৬) এই জ্বরে প্লেটিলেট (রক্তের জরুরি অংশ) দ্রুত কমে যায়। দেহের লবণ পানির অসামঞ্জস্য ঘটে। হৃৎপিণ্ড দ্রুত ওঠানামা করে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করণীয়
১) ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান দায়ী হলো এডিস মশা। এই মশা নোংরা পানি তে বাসা বাঁধে। তাই পুরানো যেসব জিনিসে পানি জমতে পারে, যেমন ফুলদানি, ফুলের টব, এসি ফ্রিজের পেছনের অংশ, বাধরুমে বালতি বা হাড়িতে, কমোডের আশেপাশের কোণাতে যেন পানি জমে না থাকে, সেই চেষ্টা করতে হবে। এই জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু মশা বাসা বাঁধে। গাড়ির যন্ত্রপাতিও খেয়াল রাখতে হবে। ময়লা পানি জমে থাকতে পারে। শিশুদের খেলনার মধ্যে যেন পানি জমে না থাকে।
২) বাসার চারপাশে মশাবিরোধী নেট, ঘরের কোণাতে মশানিরোধক যন্ত্র ব্যবহার করবেন। জানালার কার্নিশে অনেক সময় ময়লা ভাঙাচোরা জিনিসে যেন পানি জমে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩) পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। কমোডের আশেপাশের জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
৪) শিশুর জ্বর এর মাত্রা কমানোর জন্য বার বার ভেজা কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করতে হবে। তরল খাবার, ফলের রস বেশি করে খেতে হবে। জ্বরের মাত্রা বেশি হলে শিশুকে হাসপাতলে ভর্তি করতে হবে।
৫) প্লেটিলেটের মাত্রা কতোটা কমে গেছে তা নির্ণয় করতে হবে।
৬) দেহের কোথাও র্যাশ, ঘা হয়েছে কিনা, অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
৭) শিশুর নাক, মুখ, মল, বমি দিয়ে রক্ত যাচ্ছে কিনা, পর্যবেক্ষণ করবেন।
৮) অবস্থা খারাপ মনে হলে, শিশুকে বাসায় না রেখে, দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করান। অনেক সময় রক্তপাত হলে, রক্ত দিতে হয়। তাই অবস্থা আশঙ্কাজনক হবার পূর্বেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ছোট বা বড় কারো ক্ষেত্রেই ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার করা যাবে না। প্যারাসিট্যামল ব্যবহার করা নিরাপদ।
লেখক : চিকিৎসক
এসএইচএস/পিআর