ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

পদোন্নতি ও জনপ্রত্যাশা

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৮:৫৫ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

জনপ্রশাসনে পদোন্নতি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার দিনগত রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। যাতে উপ-সচিব হলেন ২৫৬ কর্মকর্তা। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

উপ-সচিব পদে পদোন্নতির মাধ্যমে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জনপ্রশাসনে তিন স্তরে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলো। এর আগে গত ২৯ আগস্ট ১৬৩ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৫৪ কর্মকর্তাকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।

তবে উপ-সচিব পদে এর আগে বড় ধরনের পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি। ওই সময় ৪২৪ জন কর্মকর্তা উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। উপ-সচিব থেকে উপরের পদগুলো সরকারের পদ হিসেবে গণ্য করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, পদোন্নতির পর এখন উপ-সচিবের সংখ্যা হলো এক হাজার ৭৯০ জন। উপ-সচিবের নিয়মিত পদ এক হাজার ৬টি। প্রশাসনে উপ-সচিব পদে এমনিতেই নিয়মিত পদের চেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মকর্তা রয়েছেন। তার উপর আবার নতুন করে পদোন্নতি দেয়া হলো। এতে প্রশাসনে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।

পদোন্নতিপ্রাপ্তদের অনেককেই আগের পদে (ইনসিটু) কাজ করতে হবে। স্থায়ী পদ না থাকলেও পদোন্নতি দেয়ায় পিড়ামিড প্রশাসন থেকে এখন মাথাভারী প্রশাসনে রূপ নিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন দেয়া হবে উপরের পদের জন্য আর তিনি কাজ করবেন নিচের পদে- এই অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। আর উপযুক্তদের পদায়ন করা হবে- এটাও তাদের অধিকার। এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

শুধু পদোন্নতিই শেষ কথা নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের উচিত তাদের দায়িত্ব পালনকালে জনগণের কল্যাণকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া। তাদের রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থেকে জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগদানের সময় কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো। এর ফলে সরকারি প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

জনকল্যাণমূলক নানা ধরনের প্রকল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অথচ সরকারি কর্মকর্তারা দেশের সেবক। জনগণের অর্থ থেকেই তাদের বেতন-ভাতা ও যাবতীয় খরচ মেটানো হয়। তাই সরকারি কর্মচারীদের তাদের দায়িত্ব পালনকালে সর্বদা নিরপেক্ষ হতে হবে। দেশে এমন একটি সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে প্রতিটি সরকারি কর্মকর্তা দেশপ্রেম, ত্যাগ ও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে পারেন। তাদের অবশ্যই ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যান-ধারণা বিসর্জন দিতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে জনকল্যাণে কাজ করতে হবে- এ লক্ষ্য থেকে তাদের এতটুকু বিচ্যুত হলে চলবে না।

জনগণের দ্বারপ্রান্তে সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, দ্রব্যমূল্য, ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন অনেকাংশে নির্ভর করে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ের ওপর। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ দায়িত্বের মধ্যে থেকে কাজ করলে কোনো সমস্যা হয় না। সীমা অতিক্রম করলেই দেখা দেয় সমস্যা। এছাড়া প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণেও অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সময়মতো বাস্তবায়িত হয় না। এমনকি অনেক সময় উন্নয়ন বরাদ্দ ফেরত আসার ঘটনাও ঘটে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সবার আগে দেশের স্বার্থকে স্থান দিলে যে কেনো সংকট উত্তরণ সহজ হয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে জনপ্রত্যাশার এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে।

এইচআর/পিআর