ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

হৃদরোগ থেকে বাঁচতে হলে

ডা. পলাশ বসু | প্রকাশিত: ১০:১০ এএম, ০৫ অক্টোবর ২০১৮

প্রতি বছরের মতো এবারও ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হলো বিশ্ব হার্ট দিবস। এ বছর এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো My Heart, Your Heart . এর অর্থ হচ্ছে সমমনা মানুষদের একতাবদ্ধ করে তাদের মধ্যে হৃদরোগ সম্বন্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা। কারণ একমাত্র সচেতনতাই পারে মরণঘাতী এ রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করতে।

বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর যত মানুষ মারা যায় তার ৩১ শতাংশই মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। দিন দিন এর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল অবধি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ মারা যাবে। কিন্তু আমরা সকলে মিলে যদি সচেতন হই তাহলে সহজেই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক অনেক কমিয়ে আনা সম্ভবপর হতে পারে।

আমাদের দেশেও এ রোগের প্রকোপ দিনকে দিন বাড়ছেই। এখন দেখা যাচ্ছে, অল্প বয়সী মানুষও হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সাধারণত দেখা যেতো, ৬০ বছরের উপরে যাদের বয়স তারাই হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হতো। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে এ বয়স ছিলো ৫০ এর কোঠায়। তার মানে হচ্ছে, উন্নত বিশ্বের চেয়ে আমাদের দেশের মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার বয়স ১০ বছর কম।

এখন দেখা যাচ্ছে, ২৫-৩০ বছর বয়সের তরুণেরাও হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, হার্ট অ্যাটাক হলে মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বেঁচে গেলেও ওষুধ খেয়ে যেতে সারা জীবনের জন্য। আবার অনেক বেশি সচেতনও থাকতে হয়। এতে আর্থিক ঝুঁকি বাড়ে। মানসিক উদ্বিগ্নতাও বাড়ে। এ কারণেই বলেছি, সচেতনতা যদি আগে থেকেই আমাদের ভেতরে তৈরি করা যায় তাহলে কিন্তু সহজেই এ রোগ প্রতিরোধ করাও সহজতর হয়।

তাই আসুন সবার আগে আমাদের জীবনযাপনের বিদ্যমান ব্যবস্থা পাল্টে ফেলি। এটা কষ্টকর কিংবা ক্লান্তিকর কোনো ব্যাপারও নয়। প্রয়োজন শুধু নিজের সদিচ্ছা এবং আগ্রহ। তাহলেই ৮০ ভাগ কাজ হয়ে যাবে। যেমন, আজ থেকেই আমরা শুরু করতে পারি আমাদের অস্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস বদলে ফেলাটা।

হৃদরোগ থেকে বাঁচতে হলে ফাস্ট ফুড, তেল, অতিরিক্তি চর্বি জাতীয় খাবার, কোল্ড ড্রিংকস আমরা নিজে খাবো না। পরিবারের জন্যও কিনবো না। ৩৫ বছর বয়সের পরে লাল মাংস (খাসি, গরুর মাংস) খাওয়া একদম কমিয়ে দিব। কলিজা, মগজ ভুনা খাব না। খাবার খাওয়ার সময় পাতে আর লবণ নিব না।

মাছ, শাকসব্জি সবসময়ই বেশি বেশি খেতে হবে। ভাত বেশি খেলে তার পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। তাহলে মেদ-ভুঁড়ি কমবে। পরিবর্তে শসা, গাজর, টমেটোর সালাদ খেয়ে পেট ভরান। সালাদে অবশ্যই লবণ মাখাবেন না।

এছাড়া কেক, পেস্ট্রি, চিপস আুসন এড়িয়ে চলি। মিষ্টি জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব বাদ দিতে হবে। যাদের চা, কফি বেশি খাওয়ার অভ্যাস তারা তাতে চিনি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কনডেন্সড মিল্ক বাদ দিয়ে গরুর দুধ ব্যবহার করুন। অথবা চিনিবিহীন শুধু লাল চা, কফি খান।

এর সাথে প্রতিদিন ৩০ মিনিট অন্তত হাঁটতে হবে। প্রতিদিন না পারলেও সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট হাঁটার অ্যভাস গড়ে তুলতে হবে। যারা বলেন কাজের চাপে তারা হাঁটার সময় পান না তাদের উদ্দেশ্যে বলি, আপনি অল্প দূরত্ব হেঁটেই যান।

অফিস থেকে ফেরার সময়ে ১ কিমি দূরে গাড়ি থেকে নেমে পড়ুন। এরপরে হেঁটেই বাসায় ফিরুন। কী কষ্ট হবে তাতে? শরীর ফিট রাখার জন্য এতটুকু কষ্ট তো করাই যায়! তাই না? অফিসে যতটা পারেন লিফ্ট এড়িয়ে চলুন। হেঁটেই উঠুন। নামার সময় ৫/৭ তলা হলে অবশ্যই হেঁটে নামবেন।

ব্লাড প্রেশার অন্তত ছয় মাসে একবার মাপুন। বছরে একবার অন্তত ডায়াবেটিস, রক্তের কোলেসটেরল, কিডনির কর্মক্ষমতা আসুন পরীক্ষা করি। অর্থাৎ বছরে অন্তত একবার চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তাহলে শুরুতেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের চর্বি এসব নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে।

পরবর্তীতে আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার জটিলতাও প্রায় শতভাগ রুখে দেয়া সম্ভবপর হতে পারে। কারণ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের চর্বি এসব হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় মারাত্মকভাবে।

আসুন ধূমপান, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলি। যাদের উচ্চতার চেয়ে ওজন বেশি তারা ওজন কমিয়ে সঠিক ওজনে ফিরে আসুন। অন্ততপক্ষে ৬/৮ ঘন্টা ঘুমাতে চেষ্টা করুন। উদ্বিগ্নতা কমিয়ে ফেলুন। সাংস্কৃতিক কাজে আুসুন সময় দিই। গান শোনা, পারলে গাওয়া, কবিতা আবৃত্তি করা বা শোনা, বই পড়ার অভ্যাস অর্থাৎ সৃষ্টিশীল কাজে সময় দিতে হবে।

অভ্যাস-সেটা ভালো বা খারাপ যাই হোক না কেন- একদিনে তা গড়ে ওঠে না। এজন্য নতুন করে কিছু শুরু করতে গেলে সেটাতে সময় দিতে হবে। দেখবেন কয়েকদিনের মধ্যে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। খারাপ অভ্যাসকে ভালো অভ্যাসে পরিণত করতে হলে তাই সবার আগে প্রয়োজন নিজের ভেতরে সদিচ্ছা এবং আগ্রহ সৃষ্টি করা। তাহলে আগেই বলেছি যে, আসল কাজটা ৮০ ভাগই হয়ে যাবে।

তাই আসুন আজ থেকেই সকলে মিলে স্বাস্থ্যকর জীবনধারণের অভ্যাস গড়ে তুলি। নিজে সুস্থ থাকি। সেই সাথে পরিবারকে সুস্থ রাখি। হৃদরোগের ঝুঁকি এড়িয়ে চলি।

লেখক : চিকিৎসক ও শিক্ষক। সহযোগী অধ্যাপক, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ।

এইচআর/এমএস