এস কে সিনহার দ্বিচারিতা ও আগামী সংসদ নির্বাচন
বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এখন দুনিয়াব্যাপি আলোচনায়। তার পক্ষে কথা বলার লোকের এখন অভাব নাই! কেন নাই, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, মি. সিনহার 'এ ব্রোকেন ড্রিম' এর উপর ভর করে যদি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা যায়! সেই চেষ্টাই করছেন অনেকে!
এই সরকারকে বিদায় করার জন্য এখন বহুমুখি প্রচেষ্টা। অনেক ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিন। আমরা জানি বিএনপির মহাসচিব সম্প্রতি আমেরিকা-ইংল্যান্ড সফর করে গেছেন। তিনি জাতিসংঘে নালিশ জানিয়ে ওয়াশিংটন যান। সেখানে মার্কিন স্টেট ডিপার্টম্যান্টে তিনি অভিযোগ জানান বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। এরপরে লন্ডন গিয়ে তারেক রহমানের কাছে রিপোর্ট দিয়ে ঢাকায় ফিরেন।
এরপরে পরেই ঢাকার একটি নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্যে যোগ দিয়েছে বিএনপি। বলার অপেক্ষা রাখে না- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের সাথে আলোচনা করেই ঐক্যে শামিল হয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐক্য হতেই পারে। কিন্তু এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় এত খলনায়ক আমরা দেখছি কেন? হ্যাঁ, এস কে সিনহা এই আবর্তনের অন্যতম খলনায়ক। তিনি তার বইয়ে যেসব কথা লিখেছেন, তা আমরা সবাই কমবেশি জানি কিংবা পড়েছি। কিন্তু তিনি কিছু বিষয় খুব কৌশলে চেপে যাচ্ছেন। কেন চেপে যাচ্ছেন? এই বিষয় নিয়ে আমি কিছু আলোকপাত করতে চাই।
এস কে সিনহা এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে থাকেন। সেখানে একটি বাড়ি কেনা হয়েছে। সেই বাড়ি নিয়েই বেরিয়ে আসছে অনেক কথা। অনেক তথ্য। ১৭৯ জেসপার স্ট্রীট, প্যাটারসন, নিউজার্সি ঠিকানার বাড়িটির মালিক অনন্ত কুমার সিনহা। এই বাড়িটি বিক্রেতা BERDNIK RICHARD SHERIFF বাড়িটি ৪ জুন ২০১৮ নথিভুক্ত হয়। বাড়িটি কেনা হয়েছে দুই লক্ষ আশি হাজার
ডলারে।
এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, এই বাড়ির বিষয়ে জানার জন্য বাংলাদেশের 'সময় টিভি'র নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান সাকী মি. সিনহার বাড়িতে গিয়েছিলেন। তা নিয়ে সময় টিভি- প্রতিবেদনও করেছে। সেখানে প্রতিনিধির সাথে মি. সিনহার যে সংলাপ হয়েছে তা হলো। সময় টিভি তাদের ওয়েব সাইটে বলছে- ''তার বাসায় তাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। তার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথোপকথনটি তুলে ধরা হলো-
- স্যার, আপনার আয়কর রিটার্ন, বাড়িকেনা এগুলো নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আছে, এগুলো নিয়ে আপনার অভিমত কী?
- এই বাড়ি আমার নামে না। এটা বললেই হবে না। সরকার প্রমাণ করুক। এরপর দেখা যাবে।
- এই বাড়িটি আপনার ভাইয়ের নামে বলা হয়েছে।
- আমি সরি, আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেব না বলেছি।
যে প্রশ্নগুলো আসছে, তা হলো আমেরিকায় বাড়ি কেনা খুব সহজ কাজ নয়। যিনি বাড়ি কিনবেন, তার ক্রেডিট স্কোর ভালো থাকতে হয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নেবার যোগ্যতা থাকতে হয়। কেউ নগদ দামে বাড়ি কিনতে হলে, তার আয়ের উৎস ইন্টারন্যাল রেভিন্যু সার্ভিস (আই আর এস) কে জানাতে হয়। কমপক্ষে তিনবছরের ট্যাক্স রিটার্ন তথা আয়-ব্যয়ের হিসাব ব্যাংককে দিতে হয়।
আমরা দেখেছি, এর আগে নিউ ইয়র্কের টাইম টিভির সোহেল মাহমুদকে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মি. সিনহা। সেখানের শুরুতেই তিনি বলেছেন-'আমার বাড়িতে আসার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ'। বাড়িটি যারই হোক, সিনহা সেখানে থাকেন বলে- তিনি নিজের দাবি করতেই পারেন, একজন ভাড়াটে হিসেবেও! কিন্তু তিনি মিডিয়ার সামনে বাড়ি নিয়ে কথা
বলতে রাজি হননি কেন ?
এস কে সিনহা এখন সরকার ও বিরোধী শিবিরে বহুল আলোচিত মানুষ। তাকে নিয়ে একটি টিভিতে কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সেখানে তিনি বলেছেন- তিনি মি. সিনহার ঢাকার সরকারি বাসভবনে গিয়ে দেখেছিলেন সেখানে হুইস্কির বোতল পড়ে আছে! এমন অনেক ব্যক্তিগত কথাই হয়তো সরকারপক্ষ জানেন। না- দেশের মানুষ এখন এসব শুনতে চান না। তারা চান, মি. এস কে সিনহার বিরুদ্ধে সরকারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো কি? এবং সরকার তা কতটা তলিয়ে দেখছে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিদেশে বসে যে বই লিখেছেন, তাতে দেশের বিচার বিভাগের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, “আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা সে সময় প্রধান বিচারপতি সিনহার সঙ্গে কেন বসতে চাননি- তা প্রকাশ পেলে আরও দুর্গন্ধ ছড়াবে। তাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হবে।” কিন্তু এই কথাই তো শেষ কথা নয়। মি. সিনহা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আটঘাট বেঁধেই নেমেছেন। তাহলে সরকার পক্ষ খামোশ হয়ে বসে থাকলে চলবে কি?
আমরা দেখছি নিউ ইয়র্কে বসে একটি 'পেইড' মহল সরকারের বিপক্ষে নানা অপপ্রচার করে যাচ্ছে। এরা ইউটিউবে নিজেদের মনগড়া বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য তৎপর রয়েছে। এদের বিষয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসকে নজর রাখতে হবে।
আইনমন্ত্রী তার নিজের, এবং সরকার পক্ষের অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলিল সহ। বিভিন্ন মিডিয়ায় তা প্রচারিতও হয়েছে। এগুলো চেপে গিয়ে সরকারকে ঘায়েল করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এর প্রধান কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারকে ঘায়েল করা।
নির্বাচনী ঐক্য, এস কে সিনহা ইস্যুর পাশাপাশি অনেক ইস্যু খোঁজা হবে আগামী কয়েক মাস। তাই সরকারের নীতি নির্ধারকদের সংযত হয়ে কথা বলতে হবে। যাতে কোনো ভাবেই তাদের কথাবার্তা আত্মঘাতী না হয়।
লেখক : নিউ ইয়র্ক প্রবাসী কবি, কলামিস্ট।
এইচআর/পিআর