ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

দূষণে মৃত্যু প্রতিকার কোথায়?

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ১০:০২ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নানা দিক দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। এই ইতিবাচক অবস্থার মধ্যেও পরিবেশ দূষণ ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর দিকটি ওঠে আসে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এবার ‘বাংলাদেশে পরিবেশগত বিশ্লেষণ ২০১৮’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর কেবল শহরগুলোতে পরিবেশদূষণের কারণে ৬৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থের ক্ষতি হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫৩ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮২ টাকা ধরে), যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৩.৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, পরিবেশদূষণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। আর্থিক ক্ষতির চেয়েও ভয়ংকর আরেকটি তথ্য দিয়ে বলছে, শহরগুলোতে পরিবেশদূষণজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৮০ হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এক বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন রোগে বা চিহ্নিত কারণে যত মৃত্যু হয়, তার ২৮ শতাংশই হয় পরিবেশ দূষণজনিত রোগে। অথচ পরিবেশ দূষণজনিত রোগে প্রতিবছর বৈশ্বিক মৃত্যুর হার মাত্র ১৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনটি গত রবিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য এবং মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে এখনই বিশেষ করে শহর এলাকায় পরিবেশগত অবনতি ও দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণের পাশাপাশি শিল্পায়নের কারণে বড় ও ছোট শহরগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে। গত ৪০ বছরে শুধু ঢাকা শহর ৭৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়েছে। জলাভূমিগুলো ভরাট করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। একই অবস্থা পাবনা জেলারও। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অর্ধেক জলাভূমি হারিয়ে গেছে সেখানে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, দূষণ ও পরিবেশ ক্ষয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে নারী, শিশু ও দরিদ্র শ্রেণি। মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য নারী, শিশু ও দরিদ্র শ্রেণিকে হুমকিতে ফেলে দিয়েছে।

মানুষ শহরে বাস করে উন্নত জীবনযাপনের জন্য। গ্রামের থেকে শহরের জীবন হবে উন্নততর, স্বস্তিদায়ক। সেজন্য ব্যয়বহুল জীবন বেছে নেন মানুষজন। কিন্তু শহরেও প্রতি পদে পদে যদি ভোগান্তির শিকার হতে হয় এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। রাজধানী ঢাকা এখন নানা দিক থেকেই বাস অনুপযোগী শহর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় লোকজনকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। যত্রতত্র যখন তখন খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার। সকাল বেলা বাসা-বাড়ি থেকে বের হয়ে লোকজনকে রীতিমত ধুলায় গোসল করে ফিরতে হয়। ওয়াসা, ডেসা, তিতাস- এক সংস্থা রাস্তা খুঁড়ে কাজ শেষ করে তো আরেক সংস্থা শুরু করে। এতে যেমন রাষ্ট্রের অর্থের শ্রাদ্ধ হয় তেমনি ভোগান্তিও বাড়ে। এক মন্ত্রণালয়ের সাথে আরেক মন্ত্রণালয়ের কাজের কোনো সমন্বয় না থাকায় যুগ যুগ ধরে চলছে এই জগাখিচুড়ি অবস্থা। কিন্তু এ থেকে কি কোনো পরিত্রাণ নেই?

বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটা বার বার বিভিন্ন জরিপে উঠে আসছে।এরপরও কোনো প্রতিকার নেই। বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, উড়ালসড়ক নির্মাণ, বাড়িঘর নির্মাণ ও ভাঙাচোরা রাস্তায় যানবাহন চলাচলের কারণে বাতাসে ধুলার পরিমাণ অত্যধিক মাত্রায় বেড়েছে। যদি সমন্বয় থাকতো তাহলে এই অবস্থা হতো না। তাছাড়া রাজধানীর কোথাও না কোথাও নির্মাণ কাজ চলছেই। এ কারণেও সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার। যা দূষণের মাত্রা বাড়িয়েই চলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত মেগাসিটির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বায়ুদূষণজনিত অসুখে বছরে সাড়ে আট হাজার শিশু মারা যায়। বিষয়টি ভাবা যায়!

দখল-দূষণে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর করুণ অবস্থা। এছাড়া যানজট, যানবাহন ও কলকারখানার কালো ধোঁয়া, ট্যানারি বর্জ্য, খাদ্যে ভেজাল, সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিন্মমানও ঢাকার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যুজ্ব এ শহরে নেই পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট, হাসপাতাল স্কুল-কলেজ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি নাগরিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ রাজধানী ঢাকাই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র।

দেশের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি মানুষ এখন শহরে বাস করছে। এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা আবাসস্থল থেকে পরিণত হয়েছে বিরাট বাজারে। বস্তুত এ শহরের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। যত্রতত্র যে যেখানে পারছে, যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এতে নগরী তার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এক জগাখিচুড়ি অবস্থায় রাজধানীবাসী এখানে বাস করছে। ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এ নগরী যেন নরকতুল্য। খেলার মাঠ নেই, নেই জলাশয়। সবুজ গাছগাছালির দেখা মেলাও ভার।

এ অবস্থায় ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য পরিকল্পনা মাফিক সবকিছু হতে হবে। মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। সবার আগে বন্ধ করতে হবে যখন তখন খোঁড়াখুঁড়ি।

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন