ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আকাশ বীণার দরজা ভাঙেনি স্লাইড র‌্যাফট অপারেট হয়েছে

সাবিনা শারমিন | প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আমার বন্ধু এবং স্বজনদের মধ্যে যারা জানেন আমি বিমানে আছি,তাঁদের কেউ কেউ আমার ইনবক্সে বিমানের নতুন উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনারের 'দরজা ভাঙা' বিষয়ে বেশ কয়েকটি মেসেজ দিয়েছেন। হেডলাইনগুলো এমন ছিল 'বিমান কিনতে না কিনতেই দরজা ভেঙে গেছে'। 'ভেঙে পড়েছে আকাশবীণার দরজা’।

এমন শিরোনামে নিউজগুলো দেখে যারপর নেই হতাশ হতে হয়েছে। মনে হয়েছে কাটতি বাড়ানোর জন্য কোন কোন সংবাদ সংস্থা নেতিবাচকভাবে বিমানকে উপস্থাপন করছে। ভবিষ্যতে এ অবস্থা এড়ানোর জন্য এবং এভিয়েশন জার্নালিজম পেশাটিকে আরো দায়িত্বশীল করার জন্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পেশাগত জ্ঞান বাড়ানোর লক্ষ্যে বিমানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাতে এভিয়েশন সাংবাদিকগণ এবং বিমান প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যেই বিষয়টি ফলপ্রসূ অবস্থানে আসতে পারে। অন্যথায় ভুল তথ্য পরিবেশনে একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে। যা পুনঃরুদ্ধার করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

প্রকৃত পক্ষে বিমানের নতুন উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার 'আকাশবীণা'র কোন দরজা কোথাও আঘাত লেগে, ঝাকাঝাকি করে বা ইচ্ছে করে কেউ ভেঙে ফেলেননি। জরুরি অবস্থাতে থাকা বহির্গমন দরজা অসতর্কতার কারণে অপারেট করা হয়ে গেছে। যার কারণ তদন্ত না করেই এ মুহূর্তে বলা যাবেনা।

যে কোন এয়ারক্রাফটে যাত্রীদের অনবোর্ড করার জন্য যে দরজাগুলো ব্যবহার করা হয়,জরুরি অবস্থায় যাত্রীদের নির্গমনের জন্য ওই একই দরজাগুলো ব্যবহার করা হয়। তবে পার্থক্যটি হচ্ছে, উড্ডয়নের আগে এই দরজাগুলো ক্যাপ্টেনের নির্দেশে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে আর্মড অবস্থা, মানে জরুরি অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। উড্ডয়নরত অবস্থার সকল সময়ের জন্য বহির্গমন দরজাটি ওই অবস্থাতেই থাকে। যেন জরুরি অবস্থায় এয়ারক্রাফট থেকে যাত্রীরা সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। এয়ারক্রাফট সম্পূর্ণ থেমে গেলে যাত্রীদের বের করার আগে সেই আর্মড অবস্থাটি আবার ডিজআর্মড মানে নরমাল পজিশন অর্থাৎ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর যাত্রীদের বের হওয়ার জন্য ক্যাপ্টেনের নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রীদের জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় দরজা খুলে দেয়া হয়।

উড়োজাহাজের প্রতিটি দরজার সাথে জরুরি অবস্থার ব্যবহারের জন্য একটি করে স্লাইড র‌্যাফট থাকে যা প্রয়োজনে জরুরি অবস্থায় দরজা অপারেট করলে স্লাইড খুলে গিয়ে বেলুনের মতো আকার ধারণ করে। যে অবস্থায় জরুরি নির্গমনে আর্মড অবস্থায় অপারেট করলেই দরজা থেকে স্লাইড র‌্যাফট ইনফ্লেইট হয়ে উঁচু উড়োজাহাজের দরজার সাথের প্রান্ত থেকে একেবারে মাটির প্রান্ত পর্যন্ত ইনফ্লেইট হয়ে পৌঁছে যায়।যেন আগুন লাগা অথবা বড় ধরনের কোন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য নব্বই সেকেন্ড সময়ের মধ্যে জরুরিভাবে স্লাইড করে সকল যাত্রীরা দ্রুত উড়োজাহাজ থেকে বের হয়ে যেতে পারে।

জরুরি অবস্থায় সকল যাত্রীদের বিমান থেকে বের হওয়ার জন্য এই একই স্লাইডটি যখন পানিতে ল্যান্ড করতে হয়, তখন কেবিন ক্রুরা এটিকে একটি নৌকা বা ডিঙিতে রুপান্তর করেন যাতে পানিতে যাত্রীরা বেঁচে থেকে ভাসতে পারে। এটিকেই র‌্যাফট বলে। পানিতে ভেসে ভেসে এই র‌্যাফট এর মাধ্যমে যাত্রী ও ক্রুরা তাদের জীবন রক্ষা করে।

এখানে যে কোন কারণেই হোক এবং যার ভুলের কারণেই হোক দুর্ঘটনাবশত ড্রিম লাইনারের একটি স্লাইড র‌্যাফট ইনফ্লেইট হয়ে গিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। যা হয়তো কারোই কাম্য ছিলো না। তবে অসতর্কতার কারণেই হোক আর দুর্ঘটনাবশতই হোক, কাজটি যিনিই ঘটিয়েছেন তার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে কিছুটা লোকসান গুণতে হবে। তবে স্লাইড র‌্যাফট খুলে যাওয়ার বিষয়ে কারো কোন দায়িত্বে অবহেলা হ'লে বিষয়টি তদন্তের নিয়ন্ত্রণে এনে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে শনাক্ত করে যথাযথ কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তবে নতুন একটি র‌্যাফট সংযুক্ত করা খুব সময় সাপেক্ষ ব্যাপার নয়। এইমাত্র জানলাম ইতোমধ্যে এটি পুনঃস্থাপন করা হয়ে গেছে। এটি এলাহী কাণ্ডের বিষয় নয় ।

লেখক : ব্যবস্থাপক প্রশিক্ষণ,
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড।
[email protected]

এইচঅার/এমএস

আরও পড়ুন