ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

নতুন ছকে চলুক অভিযান

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 

একদিকে চলছে মাদকবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান অন্যদিকে নতুন নতুন মাদক আসছে দেশে। ‘চল যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে’ শীর্ষক অভিযানে অনেক মাদক কারবারী ধরাশায়ী হয়েছে। এরপরও তা থামছে না। বরং নতুন নতুন পন্থা, পদ্ধতিতে ও নতুন মাদকের আগমন ঘটছে। এ অবস্থায় নতুন করে সাজাতে হবে মাদকবিরোধী অভিযানের ছক। যে কোনো মূল্যে দেশকে মাদকমুক্ত করতে হবে।

গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, মাদক বন্ধে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান চলছে ঠিক সেই মুহূর্তে সন্ধান মিলেছে নতুন মাদকের। নাম এনপিএস (নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস)। গ্রিন টি (সবুজ চা) প্যাকেটের আড়ালে আকাশপথে আসছে এ মাদক। এ মাদকের মোট সাড়ে আটশ কেজি জব্দ ও নাজিম নামে একজনকে আটকের পর এ তথ্য জানিয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।

সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি টিম শুক্রবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে চারশ কেজি এনপিএস জব্দ করে। যা চায়ের প্যাকেটের আড়ালে আনা হয়েছিল কয়েক দিন আগে। এরপর রাজধানীর শান্তিনগরস্থ শান্তিনগর প্লাজার দুইতলায় অভিযান চালিয়ে আরও প্রায় সাড়ে চারশ’ কেজি নতুন এ মাদক জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। আটক ও মাদক উদ্ধারের ঘটনা স্বস্তিদায়ক। মাদককারবারীরা যতই কৌশলাশ্রয়ী হোক না কেন-আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কাছে তারা পরাস্ত হবে- এটিই দেখতে চায় দেশের মানুষ।

নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার দেশজুড়ে। সত্যি বলতে কি দেশের এমন কোনো এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন মাদককারবারের সাথে জড়িত। তারা বিভিন্ন কলাকৌশলের আশ্রয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। সত্যি বলতে কি দেশজুড়ে এক বিশাল জাল বিস্তার করে আছে এই মরণ নেশার ভয়াবহ সিন্ডিকেট। আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্র মাফিয়াদের সঙ্গে রয়েছে এদের শক্ত ও গভীর যোগাযোগ।

মাদকের রয়েছে বিভিন্ন রুট। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সীমান্ত এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। এর কিছু ধরা পড়ে। বাকিটা চলে যায় মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে। রাজধানীতেও মাদকব্যবসা রমরমা। মাদকের জগতে এক সময় ‘হেরোইন’ নামক মরণ নেশা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল। এ পদার্থটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ করে অবধারিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এটি খুব দামি বলে পরবর্তী সময়ে এর স্থান দখল করে নেয় ফেনসিডিল ও ইয়াবা। বর্তমান নেশাসক্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ দুটি নেশাদ্রব্য বেশি জনপ্রিয়। একে ঘিরে দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে বিশাল নেটওয়ার্ক। ফেনসিডিলের চেয়ে ইয়াবাই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও অমিত সম্ভাবনা। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা, হতাশা এবং মূল্যবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাদক তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণ সমাজের প্রতি। বেকারত্বও মাদকের বিস্তারে সহায়ক-এমন কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা। এই মরণ নেশার বিস্তারে সমাজে একদিকে যেমন অপরাধ বাড়ছে, তেমনিভাবে নষ্ট হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা। এই অবস্থা চলতে থাকলে একটি সমাজের অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি সহজলভ্য যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যে কোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনুপ্রবেশ। দেশেও যাতে মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে।

মাদকের সর্বনাশা দিক নিয়ে আমরা সম্পাদকীয় স্তম্ভে অনেকবারই লিখেছি। কিন্তু অবস্থার কোনো হেরফের হয়নি। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতারও কোনো বিকল্প নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে।

যারা ইতোমধ্যেই মাদকাসক্ত হয়েছে তাদেরও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বাড়াতে হবে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যাও। সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন