ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

শিশুদের রাজনীতির ঢাল বানাবেন না

প্রভাষ আমিন | প্রকাশিত: ০৯:৪১ এএম, ০৬ আগস্ট ২০১৮

গত কদিন ধরে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের শেষ কোথায়? সরকার তো সব দাবি মেনে নিয়েছে, তাহলে শিক্ষার্থীরা এখনও ক্লাশে ফিরে যাচ্ছে না কেন? আমি তাদের বলেছি, সরকার সব দাবি মেনে নেয়ার পরও শিক্ষার্থীদের রাজপথে থাকাটা উচিত নয়, শুভ নয়, নিরাপদ নয়।

আমার ধারণা, দাবি মেনে নেয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা সেতুমন্ত্রীর ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা আস্থায় রাখতে পারছে না। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেই তারা ঘোষণা শুনতে চান। তাদের দাবিগুলো এমনই সার্বজনীন, বিবেকবান কারো পক্ষেই এই দাবির বিপক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীও কয়েকদিন আগে সড়ক নিরাপদ করতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন।

রোববার দুপুরে এই লেখা যখন লিখছি, তার কিছুক্ষণ আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বানের পর আশা করেছিলাম, শিক্ষার্থীরা আর রাস্তায় নামবে না। তাদের মূল কাজ যেটা, সেই পড়ার টেবিলে ফিরে গিয়ে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করবে। কিন্তু আগের মত ব্যাপকভাবে না হলেও ঢাকার বিভিন্নস্থানে শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে। এখন তাহলে প্রশ্ন জাগবে, আন্দোলনের নামে তারা কী চান? কী হলে তারা ঘরে ফিরে যাবেন?

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও যারা রাস্তায় নেমেছে, তারা কারা? শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেছে, এই অভিযোগ এখন বিশ্বাস করতে মন চাইছে। শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে অপশক্তি অন্য খেলায় মেতে উঠছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তো সরকার পতনের নয়। তাহলে তারা আর কী চায়? শিক্ষার্থীদের ৯ দফা নীতিগতভাবে সমর্থন দিয়েছে দেশের সবাই।

প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক পরিবহনমন্ত্রী, পুলিশ-র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ৯ দফা তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নেয়ার সুযোগ নেই। যেমন খুনি চালকদের ফাঁসির দাবি তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নেয়ার সুযোগ কারো নেই। মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি বা রাষ্ট্রপতি কারো পক্ষেই ফাঁসির ঘোষণা দেয়া সম্ভব নয়।

এটা আদালতের এখতিয়ার। যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া শেষেই রায় আসবে। ইতিমধ্যে শাস্তি বাড়িয়ে নতুন আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে। সোমবার ক্যাবিনেটে উঠবে। ক্যাবিনেটের অনুমোদনের পর সংসদে উঠবে, কমিটিতে যাবে, সংসদে পাস হবে, রাষ্ট্রপতি সই দেবেন, তারপর আইন হবে। বাকি সবগুলো দাবিই বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে।

শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৫ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমি চাইলেও শিক্ষার্থীরা কিন্তু শাজাহান খানের পদত্যাগ চায়নি, নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছে। নিষ্ঠুর মন্ত্রী বাধ্য হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন, মিমের বাসায় গেছেন। সরকার কিন্তু দাবির চেয়ে বেশিই পূরণ করেছে। শহীদ রমিজউদ্দিন স্কুলকে ইতিমধ্যে পাঁচটি বাস দেয়া হয়েছে। স্কুল সংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে আন্ডারপাস নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি স্কুলসংলগ্ন রাস্তায় স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করা হচ্ছে।

স্কুলের পাশে বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিহত দুজনের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জাবালে নূরের দুটি বাসের রুট পারমিট বাতিল এবং অবিলম্বে ফিটনেসবিহীন সকল পরিবহনের রুট পারমিট বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জাবালে নূর পরিবহনের মালিক ও দায়ী চালককে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। লাইসেন্সবিহীন ভুয়া ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধে এবং মহাসড়কগুলোতেও চালকদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এরপর আর কী হলে আন্দোলন শেষ হবে?

এ ধরনের আন্দোলনের আগুনে আলু পুড়িয়ে খেতে সবসময় কিছু লোক ওৎ পেতে থাকে। শনিবার ও রোববার ধানমন্ডি-ঝিগাতলা এলাকায় যা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। পুলিশ যেখানে ৭ দিন ধরে চরম ধৈর্য্যের পরিচয় দিচ্ছে। কিন্তু ছাত্রলীগ নামধারীরা শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে খুব অন্যায় করেছে। সরকার যেখানে সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে, সেখানে ছাত্রলীগ মাঠে নেমে সরকারের অর্জনকে ম্লান করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তবে গুজব ছড়িয়ে যারা ধানমন্ডিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়।

‘৪ জন মারা গেছে, ৪ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে’- এমন গুজব ছড়িয়েছেন অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও। ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে অভিনেত্রী কাজী নওশাবাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তিনি উত্তরায় শ্যুটিং স্পট থেকে ফেসবুকে মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছেন। কেউ না কেউ তাকে ব্যবহার করেছেন। এমন গুজব থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

গুজব আন্দোলনে বিভ্রান্তি ছড়াবে। শিক্ষার্থীদের বিপদে ফেলবে। যারা শিক্ষার্থীদের রাজপথে রাখতে চান, তারা কি পারছেন, তাদের সেই বিপদ থেকে রক্ষা করতে? ধানমন্ডিতে ছাত্রলীগ নামধারীদের হামলায় যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি।

ইতোমধ্যে আন্দোলন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের কথা জানা যাচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এক শিবির নেতাকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মিশে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বাজারে স্কুল ড্রেসের বিক্রি বেড়ে গেছে বলে খবর বেড়িয়েছে। তার মানে স্কুল ড্রেস পড়ে অছাত্ররাও মিশে যাচ্ছে আন্দোলনে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরাও মিশে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের সাথে। নানান ধরনের সুযোগসন্ধানীরা আমাদের সন্তানদের ঢাল বানিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিগে চাইছে। তাই অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যেন আমাদের সন্তানদের ব্যবহার করতে না পারে।

provash

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন