ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আছে শঙ্কা, আছে ষড়যন্ত্র; তবুও চাই ভোট উৎসব

প্রভাষ আমিন | প্রকাশিত: ০৮:২৯ এএম, ৩০ জুলাই ২০১৮

রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট- এ তিন সিটি করপোরেশনের ভোটাররা আজ সকাল থেকেই তাদের নতুন মেয়র এবং কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য ভোট দিচ্ছেন। যদিও স্থানীয় সরকার নির্বাচন, তবুও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ নির্বাচনের দিকে নজর সারাদেশের মানুষের।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এ তিনটিসহ খুলনা ও গাজীপুরে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে নির্বাচনে ৫টিতেই জিতেছিলেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের তিন সিটিতেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সরকারি দলের প্রার্থীরা। তবে বরাবরের মতই বিএনপি শিবিরে অভিযোগ আর আশঙ্কার পাহাড়।

তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। একটি ভালো নির্বাচন করার সক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে কিনা, এই নির্বাচনে তার প্রমাণ হবে। সরকারের পরীক্ষা অবশ্য আরো কঠিন। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা এবং তাদের জনপ্রিয়তা আছে কিনা; দুটো পরীক্ষা একসাথে দিতে হয়।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন সরকারের জন্য সবসময়ই শাখের করাত। আসতেও কাটে, যেতেও কাটে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সবসময়ই বিরোধী দলের জন্য লাভজনক। হারলে বলবে, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জিতলে বলবে, জনগণ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। 

খুলনা এবং গাজীপুরে জালভোট, এজেন্ট বের করে দেয়া ইত্যাদি নানা অনিয়ম হয়েছে। এসব অনিয়ম না হলে ভালো হতো। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় এবং অতীত অভিজ্ঞতায় এটুকু অনিয়ম গ্রহণযোগ্য। স্থানীয় সরকার নির্বাচন মানেই সহিংসতা, রক্তক্ষয়, প্রাণহানী। খুলনা এবং গাজীপুরে অন্তত তেমন কিছু হয়নি।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী যেমন থাকেন, তেমনি থাকেন কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীও। তাই নানামুখী অনিয়মের সুযোগ থাকে। খুলনা ও গাজীপুরে তাই হয়েছে। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও বিরোধী দলের নানা অভিযোগ রয়েছে।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তো রয়েছেই, রয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়ের অভিযোগও। সম্ভাব্য এজেন্টদের হুমকি দেয়ার অভিযোগও করছেন বিএনপি প্রার্থীরা। পুলিশ বলছে, সুনির্দিষ্ট মামলার আসামীদেরই কেবল তারা ধরছেন। তবুও পুলিশী ধরপাকড়ে বিএনপি নেকাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।

আতঙ্কের পাশাপাশি নানামুখী ষড়যন্ত্রও হয় নির্বাচনকে ঘিরে। গাজীপুরে নাশকতা চেষ্টার একটি ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়েছে। রাজশাহীতেও নিজেদের মিছিলে বোমা হামলা করে সরকারের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা হয়েছে। তবে খুলনা ও গাজীপুরে একটা জিনিস প্রমাণিত, সরকার চাইলে একটা পরিচ্ছন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। তবে সে ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে। সতর্ক করতে হবে নিজেদের প্রার্থীদেরও।

খুলনা এবং গাজীপুরের শিক্ষা কাজে লাগাতে হবে রাজশাহী, বরিশাল আর সিলেটে। খুলনা এবং গাজীপুরে বিশাল বিজয়ে রাজশাহী, বরিশাল, সিলেটেও আত্মবিশ্বাসী সরকারি দলের প্রার্থীরা। ভোটারদের মানসিকতার একটা প্রমাণ হতে পারে এই নির্বাচন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকার বদল হয় না। গত নির্বাচনে ৫ সিটিতেই বিএনপি প্রার্থীরা জিতলেও জনগণ কাঙ্খিত উন্নয়ন পায়নি। বিরোধীদলের বলে বিএনপির মেয়ররা সেটা দিতে পারেননি। অধিকাংশ মেয়র পদচ্যুত হয়েছেন, কারাগারে কাটিয়েছেন অনেকটা সময়। হয়তো তাই জনগণ এবার সরকারি দলের প্রার্থীদের ওপরই ভরসা রাখছেন। আর গত ৫ বছরে বিএনপি আরো কোণঠাসা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার-আরডিসি পরিচালিত এক জরিপ উদ্ধৃত করে তার ফেসবুক পেজে তিন সিটি করপোরেশনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের পূর্বাভাস দিয়েছেন। জরিপে বলা হয়েছে বরিশালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ৪৪ ভাগ, বিএনপি প্রার্থী মুজিবুর রহমান সারোয়ার ১৩ ভাগ ভোট পাবেন।

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন ৫৮ ভাগ, বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ১৬.৪ ভাগ ভোট পাবেন। তবে সিলেটে লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলেছে জরিপে। আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান ৩৩ ভাগ এবং বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী ২৮ ভাগ ভোট পাবেন।

সজীব ওয়াজেদ জয় তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 'বিএনপি অনেক ধরনের অভিযোগ করতে থাকে, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে তাদের কোনো জনপ্রিয়তাই নেই। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন দিন দিন বাড়ছে। নির্বাচনী লড়াইয়ে বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের জন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই না।' তবে তিনি দলীয় নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তার আশংকা, বিএনপি ভোট কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিয়ে সেই দায় আওয়ামী লীগের উপর চাপানোর চেষ্টা চালাতে পারে।

তিনি লিখেছেন, 'আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই বিএনপির একমাত্র কৌশল।' তবে জরিপ সবসময় সত্যি নাও হতে পারে। ভোটাররাই যেন বেছে নিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

তিন সিটি নির্বাচনকে ঘিরে অভিযোগ আছে, আতঙ্ক আছে, আশঙ্কা আছে। তবুও সবার অপেক্ষা ভোট উৎসবের। আগেই বলেছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়র ছাড়াও কাউন্সিলর, মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরাও মাঠে থাকেন। তাই মাঠে থাকে উৎসবমুখর পরিবেশ। সে পরিবেশ যেন দিনভর বজায় থাকে।

amin

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন