পোশাককর্মীদের দাবি শুনুন
এক অমিত সম্ভাবনা হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাকখাত। আমাদের অর্থনীতির গতিপ্রবাহ অনেকটাই ঠিক থাকে পোশাকখাত থেকে আসা রেমিটেন্সে। পোশাককর্মীরা এক্ষেত্রে বিরাট অবদান রেখে চলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে একালের জীবনযোদ্ধা তারা। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে পোশাকখাতের উন্নতি হলেও এ খাতের শ্রমিকদের জীবন-মানের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।
নিম্নতম মজুরি ঘোষণার নামে মালিকরা তৈরি পোশাক খাতের ৪৫ লাখ শ্রমিকের সঙ্গে তামাশা করছে বলে মন্তব্য করেছে শ্রমিক নেতারা। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) নেতৃবৃন্দ এ মন্তব্য করেন। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ও নিম্নতম মজুরি ১৬ হাজার করার দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকরা মহা তামাশা করছে।
তারা নিম্নতম মজুরি যে প্রস্তাব বোর্ডের কাছে দিয়েছে তা পাঁচ বছর আগের ঘোষিত মজুরির চেয়ে কম। এছাড়া শ্রমিক প্রতিনিধিরা যে প্রস্তার করেছে তাও বাস্তবমুখী নয়। তাই পোশাক খাতের নিম্নতম মজুরি বিষয়ে মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তারা।একই সঙ্গে বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি, ব্যবসায়িক সামর্থ্য অনুযায়ী গার্মেস্টস শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি জানান শ্রমিক নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইবিসির মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন। এর আগে এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেছেন, ২০১৩ সালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য বর্তমানে যে বেতন কাঠামো ৫ হাজার টাকা রয়েছে সেটি কোনোভাবেই সঠিক নয় এবং গ্রহণযোগ্য নয়। গত বুধবার সকালে মাদারীপুরে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষ ও ফলদ মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। মন্ত্রী গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের ডাকা আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, সরকার মালিক পক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে একটি বেতন কাঠামো নির্ধারণ করবে বলে তার বিশ্বাস।
শ্রমিকদের জীবনমানের সার্বিক উন্নতিকল্পে অবিলম্বে তাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। শ্রমিকদের দাবি তারা যা বেতন পান, তাতে সংসার চলে না। ২০১৩ সালের সর্বশেষ মজুরি বোর্ডের বেতন অনুসারে শ্রমিকেরা পান ৫ হাজার ৩০০ টাকা। শ্রমিকেরা ন্যূনতম পাঁচ হাজারের বদলে তাদের বেতন ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে। এছাড়া নিয়ম অনুসারে গ্র্যাচুইটি পান না শ্রমিকরা। প্রয়োজন পড়লে ছুটিও পান না। ছুটি দিলেও বেতন দেওয়া হয় না। কথায় কথায় ছাঁটাইসহ নানা অনিয়ম তো রয়েছেই। রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশনসের মত কারখানায় মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির পরও এখানকার শ্রমিকদের সেই তুলনায় ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি।
পোশাক খাত শুধু আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াতেই ভূমিকা রাখছে না, ‘মেড ইন বাংলাদেশ` ব্র্যান্ডিং- এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করছে বহির্বিশ্বে। তাই শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করে পোশাক খাতের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে শ্রমিকদের দাবি শোনা, তাদের সাথে কথা বলে একটি যুক্তিগ্রাহ্য সমাধানের পথ বের করা। পোশাকখাতের সার্বিক উন্নতিকল্পে এটা অত্যন্ত জরুরি।
এইচআর/এমএস