ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

কী নির্মমতা, কী নিষ্ঠুরতা!

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ১০:০৪ এএম, ২৮ জুলাই ২০১৮

 

কী নির্মমতা কী নিষ্ঠুরতা! ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। দায় এড়াতে নদীতে ফেলে হত্যা করা হলো বাসযাত্রী এক তরুণকে। বাসের স্টাফরা মিলে আহত অবস্থায় তাকে নদীতে ফেলে দেয়। পরে তার লাশ ভেসে ওঠে। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষজন। কারো হাত যাচ্ছে। কারো বা যাচ্ছে পা। পরিবহন সেক্টরের বেপরোয়া মনোভাবে এমনিতেই ক্ষুব্ধ মানুষজন। তারওপর এই ধরনের নিষ্ঠুরতা সেই ক্ষোভকে বাড়িয়ে দিবে আরো। এটা হত্যাকাণ্ড। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না। তাই দোষীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতই পারে এর প্রতিকার করতে।

জানা যায়, গত ২১ জুলাই গ্রামের বাড়ি থেকে বন্ধুদের সঙ্গে হানিফ পরিবহনের বাসে চড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল। পথে রাত ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় গিয়ে যানজটে পড়ে বাসটি। এ সময় বাস থেকে নিচে নামেন পায়েল। এরপর থেকে পায়েলকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এই ঘটনায় পায়েলের স্বজনরা বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছিলেন বলে জানান ওসি।

গত বুধবার (২৫ জুলাই) হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার ও চালক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, ‘নারায়ণগঞ্জে নয়, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার ভাটেরচরই বাস থেকে নেমেছিল পায়েল। পরবর্তীতে যানজট নিরসন হলে বাসটি দ্রুত যাওয়ার চেষ্টা করে। এমতাবস্থায় বাসে উঠতে গিয়ে বাসের দরজার সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লাগে পায়েলের। এতে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে বাসচালক, চালকের সহযোগী ও সুপারভাইজার পায়েলকে মৃত ভেবে ব্রিজ থেকে ফেলে দিয়ে চলে আসে।’

চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা ও রাজধানীর নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত সাইদুর রহমান পায়েলের (২১) মরদেহ উদ্ধার হয় মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার ফুলদি নদী থেকে। এই সূত্র ধরেই রহস্য উন্মোচিত হয়।

গ্রেফতারের পর বাসচালকের এক সহকারী স্বীকার করেছে, তারাই পায়েলকে হত্যা করে এবং পরে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। তারা (বাসচালক ও সহযোগীরা) পুলিশকে জানায়, পায়েল দৌড়ে এসে বাসে উঠতে গিয়ে এর দরজার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। এসময় নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। চালকের সহযোগী জনি বিষয়টি বাসচালককে জানালে চালক স্টিয়ারিং থেকে নেমে এসে বলে, ছেলেটা তো মারা গেছে। তাকে এখন হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঝামেলা হবে। এরপর তারা পায়েলের মুখ থেঁতলে দিয়ে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।’

ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বাসচালক জালাল, সুপারভাইজার জনি ও চালকের সহকারী ফয়সালকে আটক করেছে। এখন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। এই ঘটনায় পরিবহন সেক্টরের মানুষজনের মানসিকতাও স্পষ্ট। যেখানে একজন আহতকে বাঁচানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে দায় এড়ানোর জন্য নিজেরাই তাকে হত্যা করেছে। অথচ হাসপাতালে নেয়া হলে, সঠিক চিকিৎসা পেলে বেঁচে যেতে পারতো একটি অমূল্য জীবন। কী নিষ্ঠুর এক অমানবিকতার কাল চলছে। এর অবসান হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন