ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

কতটুকু দায়বদ্ধতা নিয়ে বেড়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম?

মো. মশিউর রহমান | প্রকাশিত: ০১:৫৪ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৮

বৃটিশের দুইশ বছর শাসনের পরে যখন আমাদের স্বাধীনতার স্বাদ পাবার কথা ছিল তখন মাথার উপর চেপে বসে ছিল '৪৭ এর দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া পাকিস্তানের কালো ছায়া। কালো ইতিহাস। নির্যাতন, নিপীড়ন, বঞ্চনা আর শোষণে আহত জাতি আমরা।

আমরা সেই ক্ষতবিক্ষত জাতি। আমরা সেই নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিঃশোষিত জাতি যাদের ইতিহাসটা খুবই শক্তিশালী। আমাদের ইতিহাসটা আসলে ওভাবে পাওয়া নয়? হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করলাম, হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে আমরা একটি স্লোগান দিলাম, আওয়াজ তুললাম, সেরকম কি? আমাদের ইতিহাস খুব রক্তক্ষয়ী একটি ইতিহাস, খুব নির্যাতিত ইতিহাস, বিধ্বস্ত ইতিহাস, নৃশংসতার শিকার একটি ইতিহাস।

হয়তো নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা ভুলেই গিয়েছে যে, এ ইতিহাসটা পেতে আমাদের কত রক্ত ঝরাতে হয়েছে? কত মা বোনকে সম্ভ্রম হারা হতে হয়েছ? কত সন্তানকে হারাতে হয়েছে? কতদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে? কত সময় ব্যয় করতে হয়েছে?

যে ইতিহাসের জন্ম আমাদের ভাষা দিয়ে। মা এর ভাষা বাংলায় কথা বলার জন্মগত অধিকারটুকু ফিরে পেতে কত রক্ত ঝরাতে হয়েছে? কত দামাল ছেলের দল বাংলার জন্য, বাংলার ভাষার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে? একজন বঙ্গবন্ধুকে সময় কাটাতে হয়েছে জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে শুধু একটি ভাষা ফিরে পাবার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবার জন্য। কারণ কী? কারণ একটিই। বাংলার স্বাধীনতা, বাংলা ভাষার স্বাধীনতা, মা এর স্বাধীনতা, জন্মভূমির স্বায়ত্ত্ব শাসনের স্বাধীনতা।

আমাদের ভাষা আলাদা। আমাদের সংস্কৃতি আলাদা। আমাদের কৃষ্টি-কালচার আলাদা, আমাদের বচন, দর্শন সব আলাদা। সুতরাং, শুধু ধর্ম আর জাতির ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র হয় না। আর সেখানেই আমাদের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি। সেখানেই সৃষ্টি আমাদের ইতিহাসের। সেই ইতিহাসটি আমরা পেয়েছি ধাপে ধাপে। সেই ইতিহাসটি আমরা পেয়েছি কষ্টের মধ্য দিয়ে।

আজকের নতুন প্রজন্ম হয়তো ভুলেই গিয়েছে যে, আমাদের ইতিহাসের উপর, আমাদের ধর্মের উপর, আমাদের সংস্কৃতির উপর, আমাদের কৃষ্টির উপর কতটা বিরামহীন আঘাত করেছে পাকিস্তানিরা? কতটা বীভৎসতা চালিয়েছে পাকিস্তানিরা? চাইলেই কি একটি মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ করে, প্রতিবাদী হয়ে আসাদের রক্তের ঋণ ভুলে গেলাম? আমরা কি সেই প্রজন্ম, যারা আসাদের রক্তের প্রতিনিধিত্ব করি? আমরা কি সেই প্রজন্ম যারা রফিক, সালাম,বরকতের রক্তের উত্তরাধিকারী হয়ে প্রতিনিধিত্ব করি? প্রশ্নটি না হয় রেখেই দিলাম নতুন প্রজন্মের কাছে?

আমরা কি সেই ভুলে যাওয়া প্রজন্ম যে, জাতি তার স্বায়ত্ত্ব শাসন আদায়ের জন্য ৫৪'র নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও ক্ষমতায় যেতে পারে নি? ন্যায্য সেই ক্ষমতা পাওয়ার জন্য কত লাশ, কত রক্ত, কত জীবন ঝরাতে হয়েছে আমাদের? আমরা কি সেই ভুলো প্রজন্ম, যারা ৬২'র আন্দোলনে পাকিস্তানের বর্বরতা, কুকুরে খাওয়া লাশের বীভৎসতা, ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করে নৃশংস সেই দৃশ্য ভুলে গিয়েছি? আমাদের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে জায়গা করে নেওয়া সেই ছয় দফা?

যেই ছয় দফা আদায় করে নিতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষকে রাস্তায় নামতে হয়েছে, আনাচে কানাচে, অলিতে গলিতে রক্ত ঝড়াতে হয়েছে, পাকিস্তানিদের অন্ধকার জেলের নির্মম সেলের মধ্যে দিন দিন কটাতে হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আমরা কি সেই প্রজন্ম?

যেই প্রজন্ম হয়তো জানেই না যে, ৬৬'র ছয় দফা যারা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে গিয়ে সাধারণ জনগণ যারাই এর পক্ষে কথা বলেছে, তাদেরকেই গণ হারে গ্রেফতার করে জেলে পুরে রাখা হয়েছিল। (তথ্যসূত্র : কারাগারের রোজনামচা, শেখ মুজিবুর রহমান) কত সে নির্যাতন, আর কি তার ভয়াবহতা! ভুলে গিয়েছি কি?

আমরা কি এত সহজেই ইতিহাস ভুলো প্রজন্ম, যে প্রজন্ম আমরা ভুলে গেলাম ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান এর কথা? সার্জেন্ট জহুরুল হকের দেশপ্রেমের চেতনা আর আত্নত্যাগ এর কথা? বঙ্গবন্ধুর ডাকে যারা কিনা দেশের জন্য, দেশের স্বায়ত্ব শাসনের জন্য, দেশ স্বাধীন করে সে দেশে বসবাসের প্রত্যাশা নেবার জন্য শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকরা জীবন দিয়েছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর ড. জোহা স্যার ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশপ্রেমের জন্য নিজের বুক পেতে দিয়ে পাকিস্তানীদের বন্দুকের নলের সামনে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন। আজকের প্রজন্ম কি সেই প্রজন্ম যারা শুধু দেশের স্বাধীনতা চাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জন এদেশের সূর্য সন্তানদের ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানোর সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল পাকিস্তানি জান্তারা?

আমরা কি ভুলে গিয়েছি আমাদের মা বোনদের ধর্ষণের কথা? কত ধর্ষণ, কত নির্যাতন, কত নিপীড়ন, কত ঘাত, কত প্রতিঘাত উপেক্ষা করেই '৭০ এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বাঙালি জাতি। পেয়েও গেলো তারা তাদের কাঙ্খিত ফলাফল। বাঙালিরা আশায় বুক বাঁধে। বৃটিশের ২০০ বছরের, পাকস্তানীদের ২৪ বছরের অমানবিক শোষন নির্যাতনের ইতিহাস হাসি মুখে বরণ করে নিয়েই জাতি পেয়েছিল কাঙ্খিত বিজয়। কিন্তু সে বিজয় পাবার পরেও তাদের সে অধিকারে বাধ সাধে মানুষ খেকো কুখ্যাত হায়েনারা। বাঙালিদের যেতে দিলো না ক্ষমতায়। শুধু কি যেতেই দিলো না? খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ লুণ্ঠন থেকে শুরু করে ইতিহাসের হেন কোন খারাপ কাজ নেই যা তারা করে নি । বাঙালিদের সেই প্রত্যাশিত নেতৃত্বকে বন্দুকের নলে ভূলণ্ঠিত করার সকল প্রস্তুতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিলো পাকিস্তানীরা।

৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের কুখ্যাত গণহত্যার ইতিহাস, ইতিহাসের অমানবিক হত্যাযজ্ঞ, কিশোরী যুবতী, প্রৌঢ়া মহিলা এমন কি বৃদ্ধা মাদের অমানবিক গণধর্ষণের ইতিহাস, পিতার সামনে কন্যাকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের ইতিহাস, মা এর সামনে ফুটফুটে ছোট্ট কিশোরী মেয়েটি যে পুতুলের বিয়ে দিতো তাকে ধর্ষণের সে রক্তাক্ত ইতিহাস ভুলে গিয়েছে কি হে নতুন প্রজন্মের যুবক যুবতীগণ? কোথায় প্রজন্মের বিবেক?

আমরা কি ভুলে গিয়েছি পিতার সামনে সন্তানকে উলঙ্গ করে শরীরের যৌনাঙ্গ সমূহ কেটে দিয়ে পাকিস্তান সেনাদের পাশবিক নৃত্য, কোন সময় পুরো পরিবারের সবাইকে এক সাথে হত্যা, কোন সময় পুরো গ্রামের সবাইকে এক সাথে বেঁধে নিয়ে ট্রেনে উঠিয়ে দেবার নাম করে ব্রিজের নীচে নিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা, আবার কোন সময় সন্তানের সামনে পিতা, ছেলের সামনে মাকে ধর্ষণ, আবার কোন সময় পরিবারের সকল সদস্য কে বেঁধে জন্মদাতা পিতা কে নির্দেশ দেওয়া হলো যুবতী মেয়ে কে ধর্ষণ করতে....এ কি সম্ভব একজন পিতার পক্ষে? বাধ্য করানো হলো পিতাকে, কিন্তু অপারগ পিতা। অবশেষে পিতার সামনেই সবাইকে উলঙ্গ করে পাশবিক নির্যাতন করেই শুধু ক্ষান্ত হয়নি তারা। ব্লেড দিয়ে গোপন অঙ্গ কেটে ক্ষতবিক্ষত করে খুন করেছে পাকিস্তানি বর্বর সেনারা।

কেমন করে এসব ইতিহাস নতুন প্রজন্ম ভুলে যায়? আজকে যখন দেখি, পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে কথা বলে, বাংলাদেশে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে কোন রাজনৈতিক দল, কোন বিশিষ্ট(?) ব্যক্তি বক্তব্য দেন, তখন আমাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন জাগে, এরা কি সেই প্রজন্মের প্রতিনিধি, সেই বুদ্ধিজীবীদের প্রতিনিধি, যারা একাত্তরের মহান মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল, জীবন দিয়েছিল? না! এ তো সে প্রজন্ম নয়! এরা নয় সে প্রজন্ম!

যে প্রজন্ম হওয়ার কথা ছিল তাদের পূর্ব পুরুষদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন, ধর্ষণের ইতিহাস ধাপে ধাপে শিরায় উপশিরায়, বুকে ধারণ করে বেড়ে উঠবে। এ তো সেই প্রজন্ম হবার কথা ছিল, যে প্রজন্মকে পাকিস্তানীদের সেই নির্যাতনের কথা জন্মের পর তার পিতা মাতারা তাদেরকে বলবে। আর সে সেটি শুনেই শুনেই বড় হবে। সে শুনবে তার দেশের ইতিহাস, তার পূর্ব পুরুষদের উপর নির্যাতনের ইতিহাস। নাম শুনলেও ঘৃণা নিয়ে বেড়ে ওঠার কথা ছিল আজকের প্রজন্মের।

আজকে আমাদের কষ্ট লাগে। তবে কি এটাই সত্য যে, নিয়াজির সে হুকুম তামিল হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, যেটি সে ৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের বলেছিল, লুটো আর ধর্ষণ করো? তা না হলে কেন তাদের প্রতি কিছু বিশেষ রাজনীতিক দল, বিশেষ প্রজন্মের দুর্বলতা?

একটি সময় আমরা তো ইতিহাস হারিয়ে ফেলেছিলাম। ৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে কালো ইতিহাসের পুনর্বার সূচনা হয় স্বাধীন এই দেশে। বদলে দেবার অপচেষ্টা করা হয়েছিল আমাদের পবিত্র ইতিহাসের পটকে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে একটি ইতিহাস আছে, আমাদের একটি ঐতিহ্য, কৃষ্টি কালচার আছে। হাওয়া থেকে পাওয়ার মধ্য দিয়ে একটি দেশের জন্ম হয়েছে আমরা সেটি ইতিহাসের কোথাও খুঁজে পাইনি।

ও আমরাই একটু ভুল বুঝেছিলাম হয়তো? কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় তো সবাই আর মুক্তিযুদ্ধ করেনি। বিরোধী শক্তিরা তো হঠাৎ করেই সিডর আইলা অথবা ঘূর্ণিঝড় বা টর্ণেডোর আঘাতে ভেসে যায় নি। সেই সময় যারা বিরোধিতা করেছিল শুধু রাজাকার আলবদরই নয়, চীনপন্থি, আমেরিকা পন্থি কম্যুনিস্টরা তো হারিয়ে যায়নি বাংলা থেকে। তারা চলে গেলেও তাদের প্রজন্ম তো আছেই এ বাংলায়। তাদের প্রজন্ম যে প্রকৃতভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নিয়ে দেশ গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমনটি তো নয়?

হয়তো সেই সময় সংখ্যায় ছিল দুইশ, দুই হাজার হয়তো দু লাখ। কিন্তু আমরা তো ভুলেই গিয়েছিলাম, এ সংখ্যা দিনে দিনে দ্বিগুণ হয়। কারাগারের রোজনামচায় এটি সুন্দর ভাবে লিপিবদ্ধ আছে যে, বাম কোন কোন সংগঠন স্বাধীনতার পক্ষে ছিল আর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল কারা কারা। সুতরাং তাদের প্রজন্মই তো আজকে মানব বন্ধন আর অযাচিত স্লোগানে দেশে অরাজকতা সৃষ্টিকারী প্রজন্ম।

হয়তো এই প্রজন্মই আমাদের বৃহৎ প্রজন্মের একটি অংশ। যেহেতু তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই, তারা নিজেও ভাবছে না যে, তারা ৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই বুদ্ধিজীবী, স্বাধীন দেশ পাওয়ার জন্য সেই হারিয়ে যাওয়া শিশু কন্যা, সেই ধর্ষিতা মাদের প্রতিনিধিত্বকারী। সেই শহীদদের রক্তের প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতা আছে কি? অবশ্য, তাদের কোন দায়বদ্ধতা থাকারও কথা না, কারণ তাদের পূর্ব পুরুষরাও বিরোধিতা করেছিল সে সময়। যদি তা না হয়, তবে আজকের প্রজন্ম কেন কোটা আন্দোলনের নামে কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আঙুল তোলে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আঙুল তোলে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্মের দিকে আঙুল তোলে।

দেশে অনেক ইস্যু আছে। দেশে জ্বালাও পোড়াও হয়, দেশে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, ইতিহাস ক্ষত বিক্ষত করা হয়েছে, জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ প্রজন্মকে এসবের প্রতিবাদ করতে দেখি না? আমাদের আজকে হতাশ হতে হয়? এত কিছুর পরেও যখন নামধারী বুদ্ধিজীবীগণ, ব্যবসা করা বুদ্ধিজীবীগণ, বিনিয়োগ করা সুশীল সমাজ ভাবেই না তারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন?

যদি তারা একাত্তরের সেই মহান বুদ্ধিজীবীদের প্রতিনিধিত্ব করতেন, যে বুদ্ধিজীবীগণ সর্বাত্নকভাবে বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করেছেন, দেশকে স্বাধীন করেছেন। তারা তো নিজের সব কিছু ভুলে গিয়ে ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে একটি দেশের জন্ম হবার জন্য জীবনপণ উজাড় করে দিয়ে সেই স্বপ্ন দ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন দিয়েছিল।

তাহলে আজকের বুদ্ধিজীবীগণ, আজকের বিনিয়োগ করা, ব্যবসা করা সুশীলগণ যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবিই করেন তবে তাদেরও উচিত ছিল জাতির সামনে সত্যটাকে তুলে ধরা। ও....! তাদের তো সেটা না করারেই কথা। কারণ তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। কারণ তারা তো মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশেই ছিলই না। যুদ্ধের সময় তাদের কি ভূমিকা ছিল, ইতিহাসের পাতায় তা তো খুঁজে পাওয়া যায় না? আমরা জানি না কোন জায়গায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ আছে? তবে হ্যাঁ! এটাও ঠিক। একাত্তরের এমন অনেক বেঈমান, অনেক বিশ্বাস ঘাতক ছিল। এখনো থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।

নতুন প্রজন্ম হয়তো দেখেইনি সেই সময়ের নৃশংসতা, নির্যাতন নিপীড়িনকারী সংগঠন তথা ব্যক্তিবর্গ কারা? ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি জন্ম হবার পর ধর্ম রক্ষার দোহায় দিয়ে যেভাবে তারা আমাদের উপর অত্যাচার, শোষণ চালিয়েছিল সেই একইভাবে বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় আজকে জামায়াত শিবির সহিংসতা চালাচ্ছে।

সেই সংগঠনই তো সেই সময়কার ইসলামী ছাত্রসংঘ আর আজকের ছাত্রশিবির। সেই সময়ের শান্তি কমিটি, আল বদর, আল শামসই তো আজকের জামায়াত। এরাই নৃশংসতা চালিয়েছে ৭১ সালে আর আজকে তাদের উত্তরসূরিরা চালাচ্ছে স্বাধীন দেশে। পেট্রোল বোমা, সিরিজ বোমা মেরে হত্যা, গাড়ি পোড়ানো, জালাও পোড়াও, রগ কাটা, শহীদ মিনার ভাংচুর, স্লোগান, মানব বন্ধনের নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস বিনষ্টের অপচেষ্টা, শিক্ষকের বাসায় হামলা, ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে পড়াশোনার পরিবেশ বিনষ্ট করার মত সকল অপকর্মগুলো করেই যাচ্ছে তাদের উত্তরসূরি তথা প্রজন্মেরই একটি ক্ষুদ্র অংশ।

কতটুকু অবগত আজকের প্রজন্ম তাদের নৃশংসতা সম্পর্কে? বিবেকের পান্ডুলিপির কাছে কতটুকু দায়বদ্ধ প্রজন্ম? কোথায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ? কোথায় আপনাদের বিবেক আর কেমন সে পান্ডুলিপি? বিবেকের পান্ডুলিপি কি বন্ধ করে দিয়েছে নাকি প্রজন্মের বিবেকবানগণ? দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ইয়ানতের নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, রগ কাটার ইতিহাসের পান্ডুলিপিটা কি ভুলে যাওয়া উচিৎ? আজকে এই নিরব ইতিহাস কি আপনাদের বিবেককে নাড়া দেয় না?

বিবেকের ভ্রুকুটি কি বন্ধ আজকের ব্যবসা করা বুদ্ধিজীবীদের? কেমন তাদের বিবেকের পান্ডুলিপি? আপনাদের ঝিমিয়ে থাকা বিবেক তাহলে কতটা সমৃদ্ধ? নাকি ধরেই নিতে হবে যে, আপনাদের বিবেকের পান্ডুলিপি অন্তঃসার শুন্য? আসলেই কি কোন দায়বদ্ধতা নেই আপনাদের বিবেকের পান্ডুলিপির কাছে? কোটা আন্দোলন তো তাদেরই চক্রান্তের একটি অংশ।

আমেরিকা, বৃটেনের মত প্রভাবশালী দেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই কোটা ব্যবস্থা বিদ্যমান। বাংলাদেশেও যেখানে কোটা রাখার যৌক্তিকতার পক্ষে সর্বোচ্চ আদালতের রায় রয়েছে, সেখানেই এদের আপত্তি। এ আপত্তি কিসের জন্য? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস আর দায়বদ্ধতার অবমূল্যায়ন নয় কি?

দীর্ঘদিন পর যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, সেই রক্তের প্রতিনিধি, সেই ইতিহাসের বীরদের পবিত্র রক্তের প্রতিনিধি, সেই ধর্ষিতা মা বোনদের হারানো ইজ্জতের প্রতিনিধি, সেই মুক্তিকামী যুবক ভাই এর বুকের তাজা রক্তের প্রতিনিধি, সেই নিরুপাই বাবা যার সামনে ধর্ষিতা হয়েছিল তার আদরের কন্যা সন্তান, সেই বোন এর সম্ভ্রমের প্রতিনিধি গণতন্ত্রের মানস কন্যা, বঙ্গবন্ধু ভ্যানগার্ড, শেখ হাসিনা হাল ধরলেন দেশের।

তখনও পাকিস্তানী প্রেতাত্মাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত। ১৯৮১ সালে সকল প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে মেজর জিয়ার বাধার জাল ছিন্ন করে দেশে ফিরেই হাল ধরেছিলনে একজন স্বাধীনতার রক্ষক, একজন শেখ হাসিনা। প্রজন্ম জানতে শুরু করলো আমাদের ইতিহাস।

এই নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন করে নয়, সময়ের প্রকৃত ইতিহাস যিনি তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধিত্ব করছেন, আমাদের সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ দিচ্ছেন, আমাদের দায়বদ্ধতার জায়গা শিখিয়ে দিচ্ছেন সেই মাদার অব হিউম্যানিটি' শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই একমাত্র বিকশিত হতে পারে সঠিক ইতিহাসের চর্চা। আর বেড়ে উঠতে পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণকারী একটি প্রজন্ম। যে প্রজম্মের দায়বদ্ধতা হবে আকাশচুম্বী আর মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি সমর্পিত।

লেখক : শিক্ষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন