পানিতে ডুবে মৃত্যু : সচেতনতাই রক্ষা করতে পারে
পানিতে ডুবে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন এটাকে ‘নিয়তি’ বলে বসে থাকলে চলবে না। বরং মৃত্যুর কার্যকারণগুলো ব্যাখ্যা করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে সাঁতার শেখার ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ব্যাপারে সচেতনতাও বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরি নদীর ভরাট চরে ফুটবল খেলে গোসল করতে নেমে চোরাবালিতে আটকে নিখোঁজ পাঁচ স্কুলছাত্রের মরদেহ মিলেছে। প্রথম তিনজনের মরদেহ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আর বাকি দুজনের মরদেহ মিলেছে রাত সাড়ে ১১টা ও সাড়ে ১২টায়। চকরিয়ার দমকল বাহিনী, স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা মরদেহগুলো উদ্ধার করে আনেন।
শনিবার বিকেলে ফুটবল খেলার পর মাতামুহুরী নদীর ব্রিজের অদূরে গোসল করতে নেমে পাঁচ শিক্ষার্থী পানিতে ডুবে মারা যায়। পরে তাদের মরদেহ উদ্দার করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়া ঢাকার নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে তানজিবা বিনতে তানভীর প্রাপ্তির (২১) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার জিটিসিএলের কাছ থেকে ভাসমান অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। প্রাপ্তি ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকার তানভীর আহমেদের মেয়ে। তিনি নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এর আগে গত শনিবার সকালে ঢাকা থেকে প্রাপ্তি ও ইশরাকুলসহ নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থী কিশোরগঞ্জে ভৈরবে ঘুরতে আসেন। সারাদিন তারা ভৈরব রেলসেতু ও আশপাশ এলাকা ঘুরে বিকেলে আশুগঞ্জের চরসোনারামপুরে যান। সেখানে জাতীয় গ্রিডলাইনের বৈদ্যুতিক টাওয়ারের পাশে মেঘনা নদীতে গোসল করতে নেমে প্রাপ্তি ডুবে যান। তাকে বাঁচাতে ইশরাকুলও নদীতে নেমে ডুবে যান। তাদেরকে উদ্ধারের জন্য বাকি পাঁচ শিক্ষার্থী নদীতে নামলে একে একে তারাও ডুবে যান। পরে চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ওই পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে।
এ ধরনের শোকাবহ পরিস্থিতি কিছুতেই কাম্য নয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, যা মোট শিশুমৃত্যুর ৪৩ শতাংশ। আর প্রতিদিন গড়ে ৪০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। বলতে গেলে শিশুর অন্যতম ঘাতক এই পানিতে ডুবে মৃত্যু। এই মৃত্যু রোধ করতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে পরিবারকে। শিশুরা জলাধারের কাছে যাতে যেতে না পারে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে বাড়াতে হবে সামাজিক সচেতনতা। গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে যে সমস্ত শিশুরা সাঁতার শেখার উপযোগী হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই সাঁতার শেখাতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে স্থানীয় প্রশাসন, এনজিওসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে। সাঁতার না জানার কারণেই অধিকাংশ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। শুধু শিশুরাই নয় প্রাপ্তবয়স্কদেরও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। আমাদের দেশে সাঁতার শেখা বা শেখানোকে একটি অপ্রয়োজনীয় কাজ হিসেবে এখনো মনে করা হয়। এ ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শিশুরাই আগামী, তাদের রক্ষায় আরো যত্নশীল ও দায়িত্ববান হতে হবে।
এইচআর/জেআইএম