ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০

মোস্তাফা জব্বার | প্রকাশিত: ০১:০২ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৮

এটি আমাদের সকলেরই জানা যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এটি ছিলো আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ। আরও স্পষ্ট করে বললে এটি বলতেই হবে যে, তিনি তখন তার দলের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করার অংশ হিসেবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করেন। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নে তার সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ করতে নিয়োজিত করেন।

এই সময়কালে সরকার ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে এক অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে। এরই মাঝে ২০১৪ সালে আরও একটি নির্বাচন হয় এবং সেই সময়েও তিনি আরও একটি ইশতেহার ঘোষণা করে বাংলাদেশের অগ্রগতির লক্ষ্যকে ২০৪১ সাল অবধি সম্প্রসারিত করেন। তখন তিনি দেশটিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার পাশাপাশি একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণাও প্রদান করেন।

সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি একটি সফল শাসনকাল অতিক্রম করছেন। ২০১৮ সালেই আরও একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে এদেশে। বদলে যাওয়া প্রেক্ষিত, নতুন প্রযুক্তি, নতুন বিশ্বব্যবস্থা তথা সার্বিক বিবেচনায় আমার নিজের কাছে মনে হচ্ছে যে, এবার বাংলাদেশকে তার নিজের ভাবনাগুলোকে আরও অগ্রসর করতে হবে।

২০১৮ সালে বসে আমরা কেবল জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, ডিজিটাল ইকোনমি, শিল্প বিপ্লব ৪.০, সৃজনশীল অর্থনীতি ইত্যাদির মাঝেই সীমিত থাকতে পারিনা। বস্তুত আমাদেরকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভাবনাটি আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। আমি মনে করি আমাদের এখন সময় হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ ঘোষণা করার। এই ঘোষণাটির স্বপ্ন হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা। সোনার বাংলার সংজ্ঞা যদি খোঁজেন তবে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশের কথা ভাবতে হবে। সমগ্র বিষয়টিকে মাথায় রেখে “কেন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ ঘোষণা করবো” তার প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে পারি।

নতুন প্রেক্ষিত বিবেচনায় যে প্রযুক্তিটি নিয়ে সবার আগে আলোচনা করতে হবে সেটি হচ্ছে ৫জি মোবাইল প্রযুক্তি। মহাশক্তিধর ৫ম প্রজন্মের সংযুক্তি আসছে: বিশ্ব সভ্যতাকে আরও একটি নতুন স্তরে পৌঁছানোর এক মহাশক্তিধর প্রযুক্তি এখনই বিশ্ববাসীর আলোচনার টেবিলে বসবাস করছে। ২০১৮ সালে জাপান, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এসব দেশে ও ২০২০ সালের মাঝে সারা দুনিয়া এই মহাপ্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু করলে আজকের দুনিয়াটিকে আমরা চিনতেই পারবোনা। এক কথায় যদি এমন দশাটি দেখেন যে দুনিয়াতে গাড়ি চালাতে মানুষ লাগবেনা, যদি দেখেন যে যন্ত্রের সাথে যন্ত্র কথা বলছে এবং মাঝখানে মানুষের প্রয়োজন নেই এবং যদি দেখেন যন্ত্র আপনার অনুভূতি বা ভাবনা চিন্তার হিসাব রাখতে পারছে বা যদি দেখেন কায়িক শ্রমের কাজগুলো অবলীলায় যন্ত্রই করে দিচ্ছে তবে কেমন লাগবে?

ধন্যবাদ বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেসকে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে স্পেনের বার্সিলেনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেসে প্রচণ্ড দাপটের সাথে এই মোবাইল প্রযুক্তি সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। চালক বিহীন গাড়ি, ইন্টারনেট অব থিংস, সেন্সর, রোবোটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রদর্শন আমার মতো প্রযুক্তিমনস্ক ব্যক্তিকেও দারুনভাবে বিস্মিত করেছে। আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে এবারের মোবাইল বিশ্ব কংগ্রেসে না গেলে একটি বড় ভুল হয়ে যেতো। বস্তুত বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেসের পর থেকেই আমি ৫জি এবং তার সাথে সম্প্রক্ত অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে একটু জানার চেষ্টা করে চলেছি।

সমগ্র বিশ্বের ৫জি গ্রহণের প্রস্তুতি এবং এর প্রমিতকরণ, পাইলটিং ও বিকাশ আমাকে দারুণভাবে আকর্ষিত করে। একই সাথে আমি বিশ্বের ডিজিটাল রূপান্তরটি অবলোকন করছি। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের শিল্প বিপ্লব ৪.০, জাপানের সমাজ ৫.০ সহ সামনের পৃথিবীর রূপান্তরটি অবিরাম আমাকে দারুণভাবে ভাবিত করছে। সেইসব ভাবনা থেকেই আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ ভাবনার প্রাথমিক স্তরটাকে পরের ধাপে আলোচনা করতে চাই।

আমি মনে করি ২০২০ সালে ৫জি পৃথিবীতে নতুন সভ্যতার সূচনা করবে। সেই সভ্যতায় অবস্থান করার প্রস্তুতি হিসেবে একটু জেনে নেয়া দরকার বস্তুত ৫জি কি জিনিস? ফোনের ইতিহাস যারা জানেন তারা এর জনক হিসেবে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের নাম জানেন। ১৮৭৬ সালে তিনি ফোন আবিষ্কারের পরই মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কথা বলার চেষ্টা করেন। ১৮৮০ সালে ফটো ফোনে আলোর ভিত্তিতে কথা বলার চেষ্টা করেন। এরপর ১৯০৮ সালে কেন্টাকির কৃষক নাথান স্টাবেল ফিল্ড বিনা তারের ফোন প্যাটেন্ট করেন।

১৯২০ সালের দিকে জাহাজে বেতার যোগাযোগ ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯২৪ সালে বার্লিন ও হামবুর্গের মাঝে চলাচলকারী ট্রেনে তারহীন ফোন প্রচলনের পরীক্ষা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেতার যোগাযোগ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ১৯৪০ সালে এটিএন্ডটি ও বেল সেন্ট লুই ও মিসৌরী এলাকায় মোবাইল ফোন সেবা চালু করে। ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল মটরোলা মোবাইল প্রথম মোবাইল ফোন বাজারজাত করে নতুন ইতিহাস তৈরি করে। সেই ফোনটিকে বলা হতো ০জি। ১৯৮৯ সালে মটরোলা তাদের মাইক্রোট্যাক ফ্লিপ ফোন বাজারজাত করে। ১৯৮৭ সালে জিএসএম মানের বদৌলতে মোবাইল ফোন বিশ্ব মানে পৌছায়। এরপর মোবাইলের ১জি, ২জি যুগ আমরা ৩জির যুগে এসে পড়ি।

বস্তুত মোবাইল ফোনে ডাটা ব্যবহারের বিশ্বজয় শুরু হয় ২০০৩ সালে ৩জি মানের মোবাইল ফোনের যুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে। এরপর ৪জির ব্যাপক বিস্তার বিশ্বকে একটি সূতোয় গেঁথে ফেলে। এখন আমরা মোবাইলের স্বর্ণযুগ বা ৫জির যুগের অপেক্ষায় আছি।

আইটিইউ বা বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের প্রমিতকরণ নির্দেশনা অনুসারে ৫জি তিনভাগে বিভক্ত। একটি এনহেন্সড মোবাইল ব্রডব্যান্ড বা উন্নততম মোবাইল ব্রডব্যান্ড (eMBB) আল্ট্রা রিলাইয়েবল লো ল্যাটেন্সী কমিউনিকেশন্স বা অতি নির্ভরযোগ্য নিমন্ন ল্যাটেন্সির যোগাযোগ (URLLC), মেসিভ ম্যাশিন টাইপ কমিউনিকেসন্স অথবা ব্যাপক যান্ত্রিক যোগাযোগ (MMTC) বা সেন্সর। এটিও মনে করা হয় যে ৫জির প্রাথমিক প্রয়োগ ক্ষেত্রটা কেবল স্থির ব্রডব্যান্ড দিয়েই শুরু হবে। কারিগরিভাবে এর তরঙ্গসীমা হবে ৬০০ মেগাহার্টজ থেকে ৬ গিগাহার্টজ অবধি সম্প্রসারিত হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে এর গতি ২০ গিগাহার্টজ অবধি হতে পারে। এর আগে আর কোন মোবাইল প্রযুক্তি এই গতির কথা ভাবতেও পারেনি। কোরিয়া টেলিকম ২০১৮ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের জন্য ৫জি প্রযুক্তির পরিক্ষা করেছে। আমেরিকার চার মোবাইল অপারেটর অচিরেই ৫জি চালুর অঙ্গীকার করেছে। এটিএন্ডটি ১৮ সালেই ৫জি সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে। ভেরিজোন, টি মোবাইলও ৫জি চালু করছে। ব্রিটেনে ভোডাফোন ৫জি চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন এবং চীনও এই পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছে।

অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় না নিলেও আমরা এটুকু বিবেচনা করতে পারি যে ৫জি প্রচলিত মোবাইল ব্রডব্যান্ডকে নতুন সংজ্ঞা দেবে। স্পেনের বার্সিলোনায় আমি নিজেই দেখেই যে মোবাইল ব্রডব্যান্ডের স্পীড ৪ জিবিপিএস ছাড়িয়ে গেছে। যে প্রযুক্তির চূড়ান্ত মানই এখনও নির্ধারিত হয়নি সেই প্রযুক্তি আমাদের সামনে কি কি সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে সেটি আন্দাজ করাও কঠিন।

অন্যান্য প্রযুক্তি: ৫জি প্রযুক্তির পাশাপাশি দুনিয়াতে বিকাশমান অন্যান্য প্রযুক্তির কথাও আমাদের মনে রাখা দরকার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স নিয়ে দুনিয়াতে আলোচনা চলছে বহুদিন ধরে। তবে ৫জির মতো ব্রডব্যান্ড সংযুক্তির সময়কালে বা প্রযুক্তির উৎকর্ষকে বিবেচনায় নিলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স বা মেশিন লার্নিং সম্পূর্ণভাবেই একটি নতুন অভিজ্ঞতার যুগে আমাদের দেশটাকে নিয়ে যাবে। বস্তুত সারা বিশ্বের রূপান্তর থেকে আমরা আলাদা থাকতে পারবোনা বলে এইসব প্রযুক্তির পাশাপাশি আমাদেরকে বিগটাকা, ব্লক চেইন এবং আইটির মতো প্রযুক্তিকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

সাম্প্রতিককালে যখনই কোন প্রযুক্তি বিষয়ক সেমিনারে যাই তখনই বলা হয় চালকবিহীন গাড়ি বা কারখানার রোবট যুক্ত হবার ফলে দুনিয়া পাল্টে যাবে। আমি নিজেও ভাবী যদি এমন হয় যে রোবট দিয়ে পোশাক কারখানা চালানো যায় তবে আমাদের বিশ্বের পোশাক কারখানা থাকবে কেমন করে। যদি চালকবিহীন গাড়ি প্রচলিত হয়ে যায় তবে আমার নিজের দেশর কর্মসংস্থানতো বটেই বিদেশে যারা গাড়ি চালিয়ে বাংলাদেশে পেট চালান তাদের কি হবে? প্রশ্ন ওঠেছে যে আইওটি কি পাহারাদার-দারোয়ানের কাজটাও দখল করে নেবে? বিগ ডাটা কি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য নামক কোন কিছুই গোপন রাখবেনা?

শিল্প বিপ্লব ৪.০: খুব কষ্ট করার দরকার নেই, কেবল গুগলে অনুসন্ধান করলেই শিল্প বিপ্লব ৪.০ বা ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব বিষয়ে অনেক তথ্যই পেয়ে যাবেন। জার্মান সরকারের উৎপাদনশীলতাকে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক করার একটি প্রকল্প থেকে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ শব্দটির সূচনা হয়।

২০১১ সালের সিবিট মেলায় শব্দটির পুনর্জন্ম হয় এবং ২০১২ সালের একই মেলায় কর্মশালার মধ্য দিয়ে জার্মান সরকারের কাছে এই বিষয়ক অনেকগুলো সুপারিশ পেশ করা হয়। ২০১২ সালে যে ওয়ার্কিং গ্রুপটি প্রাথমকি সুপারিশ পেশ করেছিলো তারা ৮ এপ্রিল ২০১৩ সালে এর চূড়ান্ত সুপারিশ পেশ করে। এই ওয়ার্কিং গ্রুপটিকে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর জনক বলে গণ্য করা হয়।

শিল্প বিপ্লবের এই ধারাটির ৪টি মৌলিক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা হয়।

ক) পারস্পরিক সংযুক্ত বা ইন্টারঅপারেবিলিটি: এই বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানুষ ও যন্ত্রের পারস্পরিক সংযুক্ত বা একইসূত্রে কাজ করার বিষয়টি শিল্প উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে থাকবে। ইন্টারনেট অব থিংসকে এই সংযুক্তির কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। একে অবশ্য বলা হচ্ছে আইওপি বা ইন্টারনেট অব পিপল।

খ) তথ্য স্বচ্ছতা বা ইনফরমেসন ট্রান্সপারেন্সি: অপরিশোধিত সেন্সর ডাটাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা যাতে বিদ্যমান বস্তুগত বিশ্বকে উপাত্ত আকারে স্বচ্ছতার সাথে ব্যবহার করা যায়।

গ) কারিগরি সহায়তা বা টেকনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্স: প্রযুক্তিকে মানুষের জন্য ব্যবহার করতে পারা। মানুষ কাজ করার জন্য বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ শক্তি কাজে লাগাবে। যেসব কাজ মানুষের পক্ষে করা ক্লান্তিকর, ঝুকিপূর্ণ, অপ্রিয় সেইসব খাতে প্রযুক্তি ব্যবহার করা।

ঘ) বিকেন্দ্রীকৃত সিদ্ধান্ত বা ডিসেন্ট্রালাইজড ডিসিশন: এই পদ্ধতিটিকে অহেতুক হস্তক্ষেপে ভারাক্রান্ত না করা ও বিকেন্দ্রীকরণভাবে পদ্ধতিটিকে কাজ করতে দেয়া।

আমরা শিল্প বিপ্লবের স্তরগুলো সম্পর্কে যে ধারণা পেলাম তাতে বোঝা যায় যে প্রথমটি ছিলো যন্ত্র, পানি, বিদ্যুৎ এর শক্তিতে পরিচালিত। দ্বিতীয়টিকে বলা হচ্ছে গণ উৎপাদন ব্যবস্থা।। তৃতীয়টিকে কম্পিউটার বা স্বয়ংক্রিয়তা হিসেবে এবং চতুর্থটিকে সাইবার পফজিক্যাল বা ডিজিটাল- মানবিক যুগ বলা হচ্ছে।

স্যোসাইটি ৫.০: জার্মানরা যখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে তাদের তত্ত্ব উপস্থাপন করা শুরু তার বহুদিন পরে জাপান বিবেচনা করতে থাকে যে মানব সভ্যতা পঞ্চম যুগে পৌঁছাচ্ছে। তারা মানব সভ্যতার শিকারী যুগ, কৃষি যুগ, শিল্প যুগ, তথ্যযুগ বলার পর সুপার স্মার্ট যুগ হিসেবে স্যোসাইটি ৫.০ কে চিহ্নিত করেছে।

জাপানের এই ধারণাটি যতোটা সারা দুনিয়ার জন্য না তার চাইতে বেশি জাপানের মতো বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীসমৃদ্ধ দেশসমূহের জন্য। আমাদের কথা বিবেচনা করলে তাদের ভাবনাটি আমাদের বিপরীত। কারণ আমাদের জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগ তরুণ। তবুও জাপানের পঞ্চম সমাজের ছোট্ট একটা বিবরণ এখানে তুলে ধরা যেতে পারে।

জাপানের বর্তমান জনসংখ্যার ২৬.৩ ভাগের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে। তারা মনে করে ২০৫০ সালে বিশ্বের শতকরা ২০ ভাগ মানুষের বয়স ষাটের ওপরে থাকবে। তবে তারা অবশ্য এই কথাটিও বলছে যে ৫.০ সমাজ কেবল বুড়োদের জন্য নয়-সামগ্রিক বিবেচনায় সকলের জন্যই।

দেখা যাক সমাজ ৫.০ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য কি? শুরুতেই বলা হচ্ছে সমাজ ৫.০ এর জন্য পাঁচটি দেয়াল ভাঙতে হবে। ক) প্রথমেই তারা মনে করে যে প্রশাসন, মন্ত্রণালয় ও সরকারি অফিস সংস্থা জনগণের সাথে যে দেয়াল তুলে রেখেছে সেটি ভাঙতে হবে। আমি খুব সহজেই এটি অনুভব করি যে একটি ডিজিটাল সরকার বিষয়ে আমাদের যে ভাবনা এই দেয়াল ভাঙাটা তার চাইতে বড় কিছু নয়। খ) জাপানের পঞ্চম সমাজের দ্বিতীয় সমাজটা হলো আইনের দেয়াল ভাঙ্গা। গ) সমাজ ৫.০ এর তৃতীয় দেয়ালটা হলো প্রযুক্তিরে দেয়াল।

নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করা ও সমাজের বিবর্তনে একে কাজে লাগানো হচ্ছে এই দেয়ালটা ভাঙা। ৪) মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক দেয়ালটা চতুর্থ দেয়াল। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার সময় থেকেই এই দেয়াল ভাঙার কাজ করছি। ৫) পঞ্চম দেয়ালটি হচ্ছে পঞ্চম সমাজকে সমাজের সকল মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করা।

আমাকে যদি ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব ৪.০ বা সমাজ ৫.০ সম্পর্কে মতামত দিতে বলা হয় তবে সবিনয়ে আমরা এটি জানাতে চাই যে ১২ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করে আমরা সারা দুনিয়ার কাছেই একটি সার্বজনীন ঘোষণা প্রকাশ করেছি। কেউ যদি আমার লেখা ২০০৭ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা ও তার পরবর্তী নিবন্ধগুলো পাঠ করেন তবে এটি উপলব্ধি করবেন যে আমাদের আর যাই থাকুক চিন্তার দৈন্যদশা নেই। বরং আমরা সারা বিশ্বের কাছে ডিজিটাল রূপান্তরের ইশতেহারও ঘোষণা করেছি।

২০০৯ সালের তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালায় আমরা আমাদের কর্মসূচিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে সনাক্ত করতে পারিনি। কিন্তু ২০১৮ সালে আমরা সারা দুনিয়াকে ডিজিটাল রূপান্তরের স্বরূপ রচনা করে দিচ্ছি। আমাদের মতো দেশগুলো আমাদের কর্মসূচিকে তাদের মতো হুবহু অনুকরণ করতে পারে। ব্রিটেন বা জার্মানি যেমন করে আংশিক ডিজিটাল রূপান্তরের কথা বলছে আমরা তার চাইতে বহু পথ সামনে রয়েছি। জাপানও বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

লেখক : মন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক। [email protected], www.bijoyekushe.net, www.bijoydigital.com

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন