ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

একুশ শ’ সালে ডিজিটাল হাওর

মোস্তাফা জব্বার | প্রকাশিত: ০১:১৯ পিএম, ০৯ জুলাই ২০১৮

কেউ কেউ হয়তো জানেন যে, বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা’ নামের একটি দলিল তৈরি করছে যার মাঝে অন্যান্য বিষয়ের সাথে বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলের বিষয়টিও রয়েছে। গত ৪ জুন ২০১৭ সকালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে হাওর ব্যবস্থাপনা কৌশল নামক একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব আহম মোস্তফা কামাল এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান এর উপস্থিতিতে এই সেমিনারটি বিশেষ করে আমার জন্য জ্ঞানার্জনের একটি বড় ক্ষেত্র ছিলো।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও জ্যেষ্ঠ সচিব জনাব শামসুল আলম এর সভাপতিত্বে ও তার উপস্থাপনায় সেমিনারটি হাওর অঞ্চলের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ ছিলো। হাওরের বাসিন্দা না হয়েও অনেক কর্মকর্তা অতি নিঁখুতভাবে ২০১৭ সালে হাওরের বিপর্যয় এবং পুরো হাওরের অবস্থাটি তুলে ধরেন। একজন হাওরবাসী হিসেবে তাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বস্তুত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কেই ধন্যবাদ দিতে হবে যে হাওরকে নিয়ে তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা চিন্তা করছেন।

কিছু তথ্য : জনাব শামসুল আলম এর উপস্থাপনা থেকে কিছু তথ্য এখানে তুলে ধরা যায়। তিনি জানিয়েছেন, বদ্বীপ মানে হলো পুরো বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা। এই বদ্বীপ এর এলাকা হলো ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। এর প্লাবণ ভূমি শতকরা ৮০ ভাগ, পাহাড় শতকরা ১২ ভাগ ও সমতল বা উঁচুভূমি শতকরা ৮ ভাগ।

১৭ সালে দেশটির জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ। এই ভূমির শতকরা ৬৫ ভাগ কৃষি জমি, বনভূমি শতকরা ১৭ ভাগ, নগর এলাকা শতকরা ৮ ভাগ ও জলাশয় শতকরা ১০ ভাগ। এই বদ্বীপে ৭০০ নদী আছে। ৪৭ লাখ হেক্টর জলাশয় আছে। বঙ্গোপসাগরে ১১ লাখ ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার প্রবেশাধিকার আছে। শামসুল আলম সাহেব দেশে ৬ হাজার কিলোমিটার জলপথের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পরিবেশগত বিপর্যয়ের যে তালিকা করেছেন তাতে দুটি হাওর, সোনাদিয়া দ্বীপ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও টেকনাফ দ্বীপকে সনাক্ত করেছেন। আমি কোন কারণ খুঁজে পাইনি যে তিনি সুন্দরবনকে কেন এই তালিকায় রাখেননি। কেন চলনবিল এলাকা এতে নেই বা কেন কেবল দুটি হাওর রয়েছে। দুটি হাওরের যে দশা পুরো হাওরেরতো সেই একই দশা। আমি মনে করি তালিকাটি আবার নবায়ণ করা দরকার।

হাওর বিষয়ক যেসব তথ্য তিনি প্রদান করেছেন তাতে বলা হয়েছে যে, দেশের সাতটি জেলা; নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ১ হাজার ৬ শত ৫৩২ বর্গকিলোমিটার হাওর এলাকা। তিনি এতে ৩৭৩টি হাওরের কথা উল্লেখ করে জনসংখ্যা মোট ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার এবং মোট জায়গা ১৯ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর যার আবাদযোগ্য পরিমাণ ১৩ লাখ ১০ হাজার হেক্টর বলে বর্ণনা করেছেন। তার তথ্য মতে হাওর এলাকা মোট জাতীয় উৎপাদনের শতকরা ৬-৮ ভাগ অবদান রাখে। দেশের চাল উৎপাদনের শতকরা ১৮ ভাগ এবং মাছ উৎপাদনের শতকরা ৭.৮ ভাগ হারে উৎপাদিত হয় বলেও তিনি জানান। হাওরে দেশের গবাদি পশুর শতকরা ২২ ভাগ রয়েছে এবং হাওর এলাকায় ১৮২৯ কিলোমিটার জলপথ রয়েছে বলে শামসুল আলম সাহেব তার উপস্থাপনায় জানান।

২০১৮ সালের ৩০ জুন সকালে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সিএনআরএস, প্রতীক এবং অক্সফাম এর উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে সিএনআরএস এর পরিচালক জনাব এস আনিসুল ইসলাম কিছু তথ্য দিয়েছেন যা এই লেখায় উল্লেখ করা দরকার। আনিস সাহেবের তথ্য অনুসারে হাওরের সাতটি জেলায় মোট মোট জমি আছে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮শ হেক্টর যার মধ্যে হাওর হচ্ছে ৮ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর। তার মতে সুনামগঞ্জের শতকরা ৭৩ ভাগ, হবিগঞ্জের ৫৪ ভাগ, মৌলভীবাজারের ৪৯ ভাগ, নেত্রকোণার ৪২ ভাগ, সিলেটের ২৯ ভাগ, কিশোরগঞ্জের ১৭ ভাগ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৫ ভাগ হাওর এলাকা। ৭টি জেলার শতকরা ৪৩ ভাগ হাওর এলাকা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জনাব আনিস কিছু অপ্রিয় তথ্যও দিয়েছেন। তার দেয়া তথ্য মতে হাওর এলাকায় মাত্র শতকরা ৬২ ভাগ (জাতীয় মানের চাইতে অনেক কম) প্রাথমিকে ভর্তির হার শতকরা ৭১, তবে ঝরে পড়ার হার শতকরা ৪৪। হাওরের ১১টি উপজেলা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দারিদ্র্য হার শতকরা ৩০ ভাগ। হাওরে শতকরা ৪৪ ভাগ স্যানিটেশন থাকলেও নেত্রকোণায় সেটি সর্বনিম্ন বা শতকরা ৩৫ ভাগ। হাওরে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নেই বলা যায়। বস্তুত কোন সূচকেই হাওর এলাকা জাতীয় মানের কাছাকাছি নয়।

বদ্বীপ পরিকল্পনার লক্ষ্য: পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় যে বদ্বীপ পরিকল্পনা করছে তাতে বড় ধরনের তিনটি লক্ষ্য হচ্ছে ক. ২০৩০ সালে চরম দারিদ্র্য না রাখা, খ. একই সময়ে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং গ. ৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়া। এগুলো বস্তুত জাতীয় লক্ষ্য। বদ্বীপ পরিকল্পনার ৬টি লক্ষ্যের মাঝে আছে বন্যা ও আবহাওয়ার পরিবর্তন থেকে সুরক্ষা পাওয়া, পানির নিরাপত্তা বিধান ও এর সুষ্ঠু ব্যবহার, নদীপথকে সমন্বিতভাবে সচল রাখা, জলাভূমি সুরক্ষা, তার পরিবেশ রক্ষা এবং এর সঠিক ব্যবহার, দেশের ও দেশের বাইরের এমন সংস্থা গড়ে তোলা যার সহায়তায় পানি সম্পদ সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা যায় এবং ভূমি ও পানি সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।

বদ্বীপ পরিকল্পনার লক্ষ্য দেখে এটি বোঝা যায় যে, বস্তুত ভূমি, পানি ও প্রকৃতিই হচ্ছে এর প্রধান উপজীব্য বিষয়। আমরা সহজেই আন্দাজ করতে পারি যে, এসব প্রাকৃতিক বিষয়ের বাইরে মানুষ ও তার জীবনধারাকেও কোন না কোন পরিকল্পনায় যুক্ত করতে হবে। হাওর এলাকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন বিধায় এখানকার মানুষের বিষয়টিকেও আলাদাভাবেই বিবেচনা করতে হবে। বদ্বীপ পরিকল্পনাটির বিস্তারিত জানিনা বলে সেটি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলা যাবেনা। তবে আমি এটি বুঝি যে, হাওর নিয়ে একেবারে মৌলিক কিছু বিষয় সকল পরিকল্পনাকারীকেই জানানো দরকার। আমি দুটি ভাগে নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

হাওরের সম্পদ: হাওর হচ্ছে গারো পাহাড়ের পাদদেশের জলাভূমি। ভৈরব সেতু পর্যন্ত বিস্তৃত এই এলাকা। এতে ভূমি আর পানি থাকায় এই দুটির সর্বোচ্চ ব্যবহার বদ্বীপ পরিকল্পনায় থাকতে হবে। ভূমির ক্ষেত্রে বড় বিষয়টি হচ্ছে এই বিশাল আবাদযোগ্য ভূমি থেকে বিপুল পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা। এজন্য গবেষণা করা এবং উন্নয়ন অবকাঠামো গড়ে তোলা। হাওরের বর্তমান এক ফসলকে অকাল বন্যার হাতে থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি হাওরের বিপুল অংশকে তিন ফসলী ভূমিতে রূপান্তর করার অবকাঠামো গড়ে তোলাটা খুবই জরুরি।

আমি আমার বাড়ির সামনের ছায়ার হাওরের দৃষ্টান্ত দিতে পারি। এই হাওরটি শাল্লা ও খালিয়াজুরি উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত। এই হাওরটির শশার কান্দা থেকে মামুদনগর হয়ে শ্যামপুর পর্যন্ত একটি বিশাল কান্দা আছে যে কান্দাটিকে বেড়ি বাঁধ দিয়ে তিন ফসলী জমিতে রূপান্তর করা যেতে পারে। বস্তুত এই বাঁধটির মূল লক্ষ্য হবে হাওরের ঢেউয়ের হাত থেকে বাঁধের ভেতরের এলাকাটিকে রক্ষা করা। তাতে বর্ষাকালে এতে বাওয়া ধান ও মাছ চাষ করে এলাকাটির চমৎকার ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি পানি নিয়ন্ত্রণ করে এতে উচ্চ ফলনশীল ধানও চাষ করা যেতে পারে।

The-haor

এতে রবিশস্য এবং আমান ধানেরও চাষ হতে পারে। আমি মনে করি ৩৭৩টি হাওরের প্রায় সবকটিতেই এরকম উঁচু এলাকা আছে যার অংশ বিশেষকে নিয়ন্ত্রণ করে তিন ফসলী জমিতে রূপান্তর করা যায়। অন্যদিকে হাওরে যে সময়টাতে মিষ্টি পানি থাকে এবং যেসব বিল বা নদীতে সারা বছর পানি থাকে তাতে মাছসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে মাইলফলক পরিবর্তন করা যায়। এখন এটি কেবল প্রাকৃতিক নিয়মে চলছে-এটি পরিকল্পিতভাবে চলতে পারে।

ভাবুনতো ১ হাজার ৬ শত ৩২ কলোমিটার মিষ্টিপানিতে যদি ৬ মাস পরিকল্পিত মাছ ও পানিতে বেড়ে ওঠে তেমন প্রাণী বা সবজির চাষ করা যায় তবে কি বিশাল পরিমাণ সম্পদ আমরা উৎপাদন করতে পারি। কিন্তু এখন সেই কাজটিতো হয়ইনা। বরং জলমহাল ইজারার নামে বিলগুলো শুকিয়ে মা মাছ শুদ্ধ মেরে ফেলা হয়। হাওরের বিলগুলো মিষ্টি পানির বিশাল আধার হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে। সেই মিষ্টি পানি মাছ-সবজি-হাঁস-শামুক-মুক্তা চাষের অনন্য সুযোগ খুঁলে দিতে পারে। সারা বছর জুড়ে হাওরের পানিতে মাছের পাশাপাশি শামুক-ঝিনুক-মুক্তা চাষতো বটেই হাস-শাক-সবজি ইত্যাদির বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে দেখা যায়। এশিয়ার বৃহত্তম জলাভূমিকে এভাবে প্রকৃতির ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেবার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই।

অন্যদিকে প্রচলিত ধারনার বাইরে গিয়ে হাওরের মাটি, পানি ও প্রকৃতির দিকে তাকানো যায়। হাওরের মানুষ হিসেবে আমার নিজের ধারণা ঐ এলাকায় গ্যাস রয়েছে। যোগাযোগের কারণে এই এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান করা হয়নি। কিন্তু কাজটি করা উচিত। হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে একটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার যে, অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে এইসব সম্পদের সঠিক ব্যবহারের জন্য বদ্বীপ পরিকল্পনাকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

ইতিপূর্বে হাওর নিয়ে যে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে তার অনেক অংশ অচল এবং ১৫৪টির প্রকল্পের বেশির ভাগই অবাস্তব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। হাওরের প্রেক্ষিতকে বিবেচনায় না নিয়ে কোন পরিকল্পনা করে তার সুফল জাতি পাবেনা-হাওরের মানুষও পাবেনা। অবিলম্বে হাওর মহাপরিকল্পনা ও এর আওতার প্রকল্পগুলোর নবায়ন করতে হবে। এখন আমরা যখন ডিজিটাল যুগে বাস করছি তখন হাওরে একদিকে যেমন কৃষির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে তেমনি নতুন প্রজন্মের জন্য ডিজিটাল শিক্ষা ও ডিজিটাল দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। হাওরের উন্নয়নের নামে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে নষ্ট করা যাবেনা।

হাওরের প্রকৃতিকে ব্যবহার করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানোর সম্ভাবনাটাকেও আমরা গুরুত্ব দিতে পারে। তবে পর্যটন এর নামে হাওরকে ধ্বংস করাকে আমরা কোনভাবেই সমর্থন করিনা।

হাওরের মানুষ ও তার চ্যালেঞ্জ: হাওরের মানুষের প্রকৃতি নির্ভরতার চ্যালেঞ্জ ছাড়াও আছে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা। প্রকৃতি যেমনি তার ফসল গ্রাস করে তেমনি তার বাড়ি ঘর ভেঙে ফেলে। প্রকৃতি তাকে স্বাস্থ্য সেবা পেতে দেয় না। প্রকৃতি তার সন্তানকে শিক্ষাও দিতে সহায়তা করেনা। মানুষের এই পশ্চাৎপদতাকে অতিক্রম করার ব্যবস্থা করতে হবে। হাওরের প্রকৃতির আরও একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যে হাওরের প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রাগৈতিহাসিক। ফলে তার জীবন ধীরগতির এবং বিশ্বের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে তার কোন যোগাযোগ নাই। হাওরে কেবলমাত্র ডুবো সড়ক তৈরি করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব আনা যাবে নাকি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন অনুসারে ওখানে ওড়াল সেতু দিয়ে হাওরের মানুষের জীবনে গতি আসতে পারে সেটি ভাবতে হবে। বদ্বীপ পরিকল্পনার এর কোন প্রতিফলন দেখিনি।

হাওরের ফসলহানির যে ভয়াবহতা শত শত বছর ধরে চলছে তার বিষয়েও নতুন ভাবনার দরকার। হাওরের বন্যা দেশের বাইরের বা ভারতের পানিতে হয়ে থাকে। এখনও এই পানি নিয়ে ভারতের সাথে কোন কথাই হয়নি। অন্যদিকে এর ব্যবস্থাপনার ত্রুটি দূর করা ছাড়াও হাওর রক্ষা করার দক্ষতাও সরকারি পরিকল্পনায় নেই।

অন্যদিকে একটি বড় বিষয় হচ্ছে হাওর এলাকা কি প্রকৃতি নির্ভর অর্থনীতিতেই সীমিত থাকবে নাকি তার মানবসম্পদকে আমাদের জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। আমি নিজে মনে করি হাওরের মানুষকে নিয়ে ভাবতে হলে এখন এর অর্থনীতির রূপান্তরকে গুরুত্ব দিতে হবে। সেজন্য হাওরের শিক্ষার আমূল রূপান্তর দরকার। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ হাওরের জীবন বদলাতে পারে। এমনকি ডিজিটাল যুগের প্রযুক্তি হাওরের কৃষি ও মৎস্য শিল্পকেও এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। হাওরের জমিগুলোর তিনফসলী করার পাশাপাশি পরিকল্পিত মাছের চাষ হাওরকে বাংলাদেশের কৃষি সম্পদের সেরা ভাণ্ডার বানাতে পারে।

হাওর বিষয়ে যারা কথা বলেন তারা সচরাচর হাওরের প্রকৃতি এবং প্রকৃতি নির্ভরতাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আমি নিজে এর উল্টোটা ভাবি। হাওরের মানুষকে যদি ভিন্নভাবে সক্ষম করা না যায় এবং তারা যদি প্রকৃতির রুদ্ররুষের কাছেই জিম্মি থাকে তবে হাওরবাসীর চোখের কান্না কখনও থামানো যাবেনা। আমি মনে করি ডিজিটাল যুগের শিক্ষা যদি হাওরে দেয়া যায় তবে সেখানকার নতুন প্রজন্ম কৃষির বাইরে পা ফেলার সুযোগ পাবে। তাদেরকে সনাতনী শিক্ষা দিয়ে আবার কৃষি নির্ভরতাতেই ফেরৎ পাঠানোর বিরাজমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখলে হাওরের রূপান্তর হবে না। বদলাবেনা এর অর্থনীতি।

হাওরের সনাতনী শিক্ষার দশাটি এখন আর বিরাজ করেনা। ওখানকার ছেলেমেয়েরা লড়াই করে শিক্ষা গ্রহণ করে। ওদেরকে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি শেখাতে পারি-দক্ষতা তৈরি করতে পারি এবং কেবল ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করে হাওরের ছেলে মেয়েদেরকে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির কাজে সম্পৃক্ত করতে পারি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে সেই বিষয়ে কারও কোন উদ্যোগ নাই।

প্রত্যাশা করবো যে সরকার তার বদ্বীপ পরিকল্পনাকে পুরো হাওর অঞ্চলের জন্য সম্প্রসারিত করবে এবং পুরো অঞ্চলটি ঘিরে বাস্তবসম্মত ও ডিজিটাল যুগের উপযোগী প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

ঢাকা, ৮ জুলাই ১৮
লেখক : মন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক। [email protected], www.bijoyekushe.net, www.bijoydigital.com

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন