ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

দেশীয় ফলে মাতাবো দেশ বিদেশ

কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশিত: ০৯:৩৬ এএম, ৩০ জুন ২০১৮

কৃষি বাংলাদেশে উন্নয়ন সমৃদ্ধি আর অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। কৃষি এদেশের আপামর মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে সুনিবিড়ভাবে জড়িত। এদেশের সিংহভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। আর গ্রামীণ কৃষি হলো কৃষি উন্নয়নের পুরোধা প্রাণ শক্তির মূল উৎস।

কৃষিতে দক্ষ যোগ্য মানবসম্পদের বিনিয়োগ কৃষিকে আরো মহিমান্বিত বিকশিত করেছে। আমাদের কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য যোগ্যতা আর প্রভাব নিয়ে আলোকিত বর্ণিল সন্মুখপানে। দেশ ও সমাজের মূল চালিকা শক্তি এদেশের গর্বিত কৃষি এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট মানুষগুলো। আর কৃষিসংশ্লিষ্ট এসব দক্ষ শিক্ষিত অভিজ্ঞ মেধাবী স্বার্থহীন সৎ ও স্বচ্ছ দেশপ্রেমিক জনশক্তির মাধ্যমে এদেশ আরো এগিয়ে গিয়ে বিশ্ব মাতাবে ভিড়বে আলোকিত বন্দরে।

দেশ খাদ্য তথা দানাদারখাদ্যে স্বয়ংভরতা অর্জন করলেও পুষ্টির বিচারে, দৃষ্টিকোণে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। উন্নতি করছি কিন্তু কাঙ্খিত মাপে না। চাহিদা অনুযায়ী শর্করার প্রতুল যোগান থাকলেও আমিষের যোগান সে মাত্রায় না। আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু আমাদের সচেতনতার অভাবে ঘাটতির কারণে ভিটামিন খনিজের প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্রহণ করতে পারছে না। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নানাবিদ অপুষ্টিজনিত রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। সার্বিক বাড়বাড়তি এবং প্রয়োজনীয় বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অথচ সুস্থ ও মেধা সম্পন্ন জাতি গঠনে মূল দাওয়াই পুষ্টিসমৃদ্ধ উপদান উপকরণ আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে আছে। বিশেষ করে শাকসবজি ফলমূল। আবার এর মধ্যে যোগ্যতার কারণে ফলের অবদান শীর্ষে চলে আসে। কেননা ফল খাদ্য, পুষ্টির আধার, বিশেষ করে ভিটামিন খনিজের ভাণ্ডার, রোগবালাই দমন প্রতিরোধ করে, বাড়বাড়তি বিকাশে অবদান রাখে, স্বাস্থ্য রক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে, পথ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, বাণিজ্যিক মূল্য অনেক বেশি, রান্না ছাড়া সরাসরি খাওয়া যায় বিশুদ্ধ পুষ্টি উপাদান ফলে ভরপুর। খেলেই লাভ।

অতীতে ফলের প্রাপ্যতা অনেক ছিল কিন্তু সচেতনতা কম ছিল। এখন সচেতনতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়েছে বেড়েছে ফলের প্রাপ্যতাও। আমাদের আছে ১৩০ ধরনের গর্বিত ফল ভাণ্ডার। এর মধ্যে ৭০টি বিশেষ প্রচলিত ও অপ্রচলিত। এসব ফল পুষ্টিতে তুষ্টি মিষ্টিতে গুণে মানে দামে অতুলনীয়। ফলভিত্তিক পুষ্টি তথা ভিটামিন খনিজ অন্যান্য খাদ্যে তুলনায় সহজলভ্য, পরিমাণে বেশি এবং সতেজ বিশুদ্ধ।

মানুষের স্বাস্থ্য বুদ্ধি মেধা মনন বিকাশে ফলের পুষ্টি অতুলনীয়। সুপরিকল্পিতভাবে ফল ব্যবস্থাপনায় সুস্থ মেধাবি জনগোষ্ঠী দক্ষতার সাথে দেশের আর্থ সামাজিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবো অনায়াসে। ফলে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী শান্তিপূর্ণ দেশ সমাজ গঠনে দেশের অদম্য অগ্রযাত্রায় ফলভিত্তিক পুষ্টি অভাবনীয় অবদান রাখবে।

শুধু অবহেলা আর অযত্নে পড়ে ছিল এতকাল আামদের ফল। এখন সময় এসেছে সুপরিকল্পিতভাবে ফল নিয়ে ব্যঞ্জরিত পরিসরে কাজ করার। বিভিন্ন কারণে ফল গাছ ফলের জাত সংখ্যা কমে যাওয়া হুমকি ও আতংকের ব্যাপার। বহুমাত্রিক সমৃদ্ধ ফল ভাণ্ডার থাকা স্বত্ত্বেও এখনো কোটি কোটি টাকার ফল আমদানি করতে হয়ে প্রতিবছর।

পুষ্টিবিদগণ বলে প্রতিদিন জনপ্রতি ফল খাওয়া দরকার ২শ’ গ্রাম। আর আমরা গ্রহণ করছি গড়ে ৭৮-৮০ গ্রামের মতো। চাহিদা আর প্রাপ্তিতে এখনো যোজন যোজন দূর। এ দিয়ে ফলের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়া গুরুত্ব বহন করে। সুতরাং দেরি নয় সব সুযোগের প্রাপ্যতার দেশে আর অবহেলা নয় অযত্ন না অসচেতনতা নয়, সঠিকভাবে কাজে লেগে যেতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। তবেই আমরা ফল দিয়ে বাজিমাত করতে পারবো অচিরেই।

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২.৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে ৪৫ লাখ টন ফল উৎপাদিত হয় তন্মধ্যে প্রায় ৪৭ শতাংশ আসে বাণিজ্যিক বাগান থেকে এবং বাকি ৫৩ শতাংশ ফলের যোগান আসে বসতবাড়ি ও তদসংলগ্ন জমি থেকে। বাগানে উৎপাদিত ১৭.৪৫ লাখ মেট্রিক টন ৪৭%; বাগানের বাহিরে উৎপাদিত ২৬.০২ লাখ মেট্রিক টন ৫৩%। ফলের মোট চাহিদা ৭১ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন ঘাটতি ২৭৫৩ লাখ মেট্রিক টন মানে ৩৫%। দেশের ফলের বার্ষিক চাহিদা উৎপাদনের প্রায় দেড়গুণ। ফলে প্রায় ২৫% ফল বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে আমদানি করতেই হয়।

দেশের বাহারি ফল ভাণ্ডার প্রচলিত ও অপ্রচলিত ক্যাটাগরির। এ ছোট দেশের জন্য এ পরম নেয়ামত। প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানির অবারিত উজ্জ্বল সম্ভাবনা আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে কেবল। এতে খাদ্য অভাবের সাথে পুষ্টির অভাব দূর হবে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে কর্ম সংস্থান হবে, দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন ও পরিবেশের উন্নয়ন হবে দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ব বাহারি ফলের বাংলাকে চিনকে মনে ইজ্জতে সম্মানে যোগ্যতায়।

দেশে ফলের বাণিজ্যিক বাগান বাড়িয়ে মোট উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও নানাবিধ কারণে রফতানির পরিমাণে বছরভিত্তিক তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও হরটেক্স ফাউন্ডেশন মতে ২০১৬ আমাদের রফতানিকৃত প্রধান ফলগুলো হলো- লেবুজাতীয় ফল, কলা, আম, কাঁঠাল, নারকেল, আমড়া, পেয়ারা, বেল, লিচু, কথবেল, কামরাঙ্গা, বরই, জলপাই, তেঁতুল। আর এসব ফল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ডে রফতানি হয়। হিসাব মতে ফল রফতানি মান ধীরে ধীরে বাড়ছে গর্বের সাথে।

মনে রাখতে হবে খাদ্য অভ্যাসে এখনো শর্করার ওপর চাপ অনেক বেশি। এজন্য সুস্থ সবল জাতি গঠনে নিত্য দিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি ফলমূলের সংশ্লিষ্টতার আরো অনেক বেশি বাড়ানো দরকার যৌক্তিকভাবে। এতে নিরাপদ খাদ্য দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা যেমন সুনিশ্চিত হবে, তেমনি পুষ্টি নিশ্চিত হবে সুস্থ সবল মেধাবী দক্ষ সাহসী জাতি গঠনের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। একক খাদ্যের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ব্যালেন্স নির্ভরতা জাতিকে অনেকটুকু এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ফল কি শুধুই ফল? না না ফল খাদ্য পুষ্টি, পথ্য, ভেষজগুণের যোগানদার, বাণিজ্য বহুগুণের গর্বিত উৎস। কোন কোন ফল আবার সবজি হিসেবেও সমঝোদার। ফল ও ফলগাছ খাদ্য কাঠ জ্বালানি, পশুখাদ্য, জৈবসার, ভূমি সংরক্ষণ,ঝড় ঝঞ্ঝায় প্রতিরোধক, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধন, পরিবেশ উন্নয়ন ও ভারসাম্য রক্ষা, পশু পাখির আশ্রয় ও খাবার সরবরাহ, জীবন আবশ্যকীয় উপাদান অক্সিজেন সরবরাহ, ছায়া দেয় মায়া দেয় সবই যোগান নিশ্চিত করে। এজন্য ফলভিত্তিক সুষ্ঠু সফল কার্যক্রম নতুন মাত্রা যোগ করে দেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধিতে দীর্ঘ মেয়াদি বিশেষ অবদান রাখবে।

কাঁঠাল আম পেঁপে পেয়ারা লেবু কলা নিয়ে আমরা বিশেষভাবে ভাবতে পারি। কেননা এফলগুলো সহজেই সারা বছর বা বিশেষ সময়ে ফলে। ফলের প্রাপ্যতা নিয়েও আছে আমাদের ফলের বিশেষত্ব। কেননা বলতে গেলে ফল উৎপাদনে বিশেষ সময়ে কেন্দ্রীভূত আমাদের ফলের জাতসমূহ। ফল বিশেষজ্ঞদের মতে বছরের বৈশাখ-শ্রাবণ এ ৪ মাস আমাদের মোট উৎপাদিত ফলের ৫৬ শতাংশ পাওয়া যায় আর বছরের বাকি ৮ মাস অর্থাৎ ভাদ্র-চৈত্র মোট ফলের ৪৬ শতাংশ পাওয়া যায়।

ব্যাপারটিকে আরো বিশ্লেষণ করলে এভাবে আসে পৌষ মাসে ৫%, মাঘ ৫%, ফাল্গুন ৭% চৈত্রমাসে ৭% এ ৪ মাসে মোট ২৪%। বৈশাখ মাসে ১৩%, জ্যৈষ্ঠে ১৪%, আষাঢ়ে ১৭%, শ্রাবণে ১০% সহ মোট ৫৪%। আর শেষ ৪ মাসে ভাদ্র ৫%, আশ্বিন ৫%, কার্তিক ৬% এবং অগ্রহায়ণ মাসে ৬% সহ মোট ২২%। অর্থাৎ বছরের কিছু সময় অতিপ্রাপ্যতা এবং বেশি সময় প্রাপ্তির স্বল্পতা। কিন্তু এ কথাতো ঠিক যে, সব ফল না হোক বছরের এমন কোন মাস নেই যে যখন বাজারে কিছু না কিছু ফল পাওয়া যায়। কিন্তু একবারে ফলবিহীন কোন মাস নেই বাংলার বর্ষপঞ্জিতে বা ষড়ঋতুতে।

ভাবতে হবে ১ হেক্টর জমিতে ধান গম ভুট্টা আবাদের যতটুক লাভ হয় একই পরিমাণ জমিতে আম, কাঁঠাল, কলা, তরমুজ, পেঁপে আনারস উৎপাদন করে তার চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায়। বর্তমানে বেশ কিছু ফলে পরিকল্পিত বাগান, ব্যবস্থাপনা, বিপণন অতি লাভজনক হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই এখনও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বিপণন পর্যায়ে কাঙ্খিত মাত্রায় এখনো পৌঁছা যাচ্ছে না এটা দুর্ভাগ্য আমাদের।

ফলভিত্তিক নানা রকমের আচার, মোরব্বা, জুস, জ্যাম, জেলি, চিপস, স্কোয়াশ, ক্যান্ডি, শুকনোফল, শিল্প, ওষুধ শিল্প গড়ে উঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। যা থেকে দেশিয় ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে যথেষ্ট অবদান রাখবে উল্লেখযোগ্য হারে।

ফল উৎপাদনে এখনও বিশেষ দৈন্যতা সমস্যা আছে আমাদের। এরমধ্যে আছে মানসম্মত চারা কলমের নার্সারির অভাব অপ্রতুলতা, সারা বছর ফলে এমন জাতের চারা কলমের অভাব, উৎপাদন উপকরণে অপ্রতুলতা দুষ্প্রাপ্যতা দুর্মূল্য, সংশ্লিষ্টদের ব্যবহারিক জ্ঞান দক্ষতার অভাব, উচ্চ ফলনশীল জাতের অভাব, অঞ্চলভিত্তিক জাতের অপ্রতুলতা, মূলধন ঋণ সহযোগিতার অভাব, বালাই ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমস্যা, গতানুগতিক চাষাবাদের ওপর অতিমাত্রায় র্নিভরশীলতা, সংরক্ষণ প্রক্রিয়াজাতকরণের অসুবিধা, পরিবহন প্যাকেজিং, সংরক্ষণের সমস্যা, ফড়িয়া দালালি বিপণন বাজারজাতকরণের অসুবিধা, প্রযুক্তি সম্প্রসারণে ধীরগতি, প্রয়োজনীয় প্রচার প্রচারণার অপ্রতুলতা, সংগ্রহ ও সংগ্রহ উত্তর প্রযুক্তির অভাব, বিশেষ গবেষণার অভাব এবং বিশেষ করে সার্বিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিশেষ দুর্বলতা।

এতসব সমস্যার বেড়াজালে ফল আবাদ ব্যবস্থাপনা আটকে থাকলেও আছে আমাদের অবাধ সম্ভাবনাময় আশাব্যঞ্জক পথচলার আয়েসি সুযোগ। আমরা সহজেই সমবায়ভিত্তিক সমন্বিত ফল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারি। পাহাড়ি এবং অন্যান্য সম্ভাবনাময় এলাকাকে বিশেষ ফলজোন হিসেবে ঘোষণা করে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ফল উৎপাদনও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে, আদর্শ আধুনিক চারা কলমের নার্সারি স্থাপন করে সেখান থেকে যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি বিতরণ, জাত প্রযুক্তি উদ্ভাবন আবিষ্কার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশব্যাপী বিস্তার বাস্তবায়ন, প্রশিক্ষণ দিয়ে জ্ঞান বাড়িয়ে প্রচার প্রচারণা জোরদার করে সার্বিকভাবে ফল সংশ্লিষ্টদের দক্ষ ও যোগ্য করে তুলতে পারি।

ঋণ বীমা মূলধন সুনিশ্চিত করে ফল উৎপাদন বিপণনকে আরো সম্প্রসারিতকরণ, সেচ বালাই ব্যবস্থাপনা, সংগ্রহ উত্তর প্যাকেজিং গ্রেডিং সংরক্ষণ, পরিবহন আধুনিক ব্যবস্থার প্রচলন ও জনপ্রিয়করণ, ছোট মাঝারি বড় শিল্প স্থাপনা, নতুন আমদানিকরা লাগসই সহজলভ্য প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বাস্তবায়ন, ফলভিত্তিক গবেষণা গুরুত্বের সাথে সম্প্রসারণ জোরদারকরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আবহাওয়া সচেতনতার অনুকুলে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, ফল উৎপাদনে সু-কৃষি চর্চা, ফলব্যাগিং, প্রনিং শেয়ারিং, রিজুবিনেশন, ফেরোমন ফাঁদ, ব্যান্ডিং, অসময়ে ফল উৎপাদন কৌশল বাস্তবায়ন, বিদেশি আনা ফলের সুব্যবস্থাপনা, গরম পানির প্রক্রিয়াকরণ, আঞ্চলভিত্তিক জাত প্রযুক্তির বিস্তার, সুদক্ষ ব্যবস্থাপনায় আমাদের ফলভাণ্ডারকে দক্ষতার সাথে অনেক দূরের গর্বিত বাতিঘরে নিয়ে যেতে পারি।

দেশের প্রায় ২কোটি বসতবাড়ির আওতাধীন প্রায় প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমি রয়েছে যা বাণিজ্যিক ফল চাষ নেটওয়ার্কের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নিরাপদ ফল উৎপাদনের বিশেষ জোন হিসেবে বসতবাড়ির ফলের আলাদা কদর বাড়াতে পারি। ভোক্তাই হচ্ছেন বিপণন রফতানি বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। ভোক্তার সন্তুষ্টিই পণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে দেয় যার ভিত্তিতে আমদানি-রফতানি বাড়ে। ভোক্তার সন্তুষ্টির অনুকূলে কিছু বিবেচ্য মানদণ্ড রয়েছে যা সব দেশ বা সব ধরনের ফলের ক্ষেত্রেই কমবেশি প্রযোজ্য।

ফলের আকর্ষণীয় চেহারা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সুষম আকার, সংহতি, পরিপূর্ণ গঠন, সঠিক পরিপক্বতা, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রঙ, উজ্জ্বলতা, মিষ্টতা, সুঘ্রাণ, পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান, রোগজীবাণুমুক্ততা এসব সর্তকতার সাথে বিবেচনায় রাখতে হয়। ফল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যদি এসব গুণাবলী শতভাগ নিশ্চিত করা যায় এবং সাপ্লাই চেইন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে ভোক্তা পর্যায়েও ফলের মান ভালো রাখা সম্ভব এবং সার্বিকভাবে বাজিমাত।

আমাদের খাদ্যোপানে শর্করা, আমিষ, চর্বি এসবের উৎস এবং প্রাপ্যতা বহুমুখী এবং হাতের নাগালে। কিন্তু খনিজ এবং ভিটামিনের জন্য ফলই আর শাকসবজি প্রথম এবং প্রধান উৎস। সতেজভাবে বলা যায় খনিজ আর ভিটামিন ফল থেকে পাওয়া খুব সহজ ও সরল। তাছাড়া কাঁচা, পাকা সতেজ ফল খাওয়া ছাড়াও ফল ভালোভাবে সংরক্ষণ প্রক্রিয়াজাত করে সারা বছর খাওয়া যায়। অমৌসুমে রসনা তৃপ্তি মেটানো যায়। আমাদের রসনাযুক্ত বাহারি ফলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে কৌশলে।

আধুনিক এবং প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা, গবেষণা, উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা, পরিচর্যা, সেবা যতআত্তি দিয়ে দেশি ফল বেশি উৎপাদন করতে হবে। আমরা যখন আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে নান্দনিক উপায়ে দেশি ফল উৎপাদন করতে হবে। আমরা যখন আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে নান্দনিক উপায়ে দেশি ফল উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারব তখন বিদেশি ফল উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারব তখন বিদেশি ফলের বাজার এমনিতেই গুটিয়ে যাবে আমরা।

আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী ফলভাণ্ডারকে সুসমন্নত সুসমৃদ্ধ করে ফলভিত্তিক যত রকমের প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্ভব তা করে বিদেশে রফতানি করে অনেক দূরের সীমানায় পৌঁছে যাবো। তখন গর্বের সাথে বলতে পারবো ফলে পুষ্টি ফলে বল, ফল রফতানি করে বাড়াবো দেশের মনোবল।

লেখক : কৃষিবিদ, অতিরিক্ত পরিচালক, ক্রপস উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন