অপরাধ নির্মূলে শাস্তি
স্বামীর গোপনাঙ্গ কর্তনের দায় নিয়ে এখন মুন্সীগঞ্জ জেলে, শ্রীনগরের দোলন। কিন্তু কী অসহ্য যাতনায় মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ এরকম এক নির্দয় কাজ করলো! প্রশ্ন জাগে না মনে?
গত ১৮ জুন, এরকমই এক মামলায় দোলনের ঠাঁই হয় মুন্সীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে। এধরনের অভিযোগ দেখে কারাগারের জেলার সাহেবও আশ্চার্যান্বিত। প্রশ্ন - কেন এরকম করলে? দোলন অঝোরে কেঁদে ফেলে। জানায়, তার স্বামীর পরনারী আসক্তির কথা। যার কারণে ৩/৪ বার এলাকাবাসী বিচার করে, নাকে খত দেয়ায়।
এসব নিয়ে প্রতিবাদ করে ফল পায়নি সে। উল্টো সয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। তার ১২/১৩ বছরের ছেলে বাবার চরিত্রহীনতার ক্ষীণ প্রতিবাদ করলে, তার বুকের উপর পাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত।
এরকম বর্বরতা দিনকে দিনে বেড়েই চলে। কারণ সে নেশাগ্রস্তও। শেষমেষ নিজের মেয়ের স্বামী বিদেশ থাকার সুযোগে মেয়ের উপরও লোলুপ দৃষ্টি দেয় ঐ পাষন্ড। এবার মেয়েকে বাবা নামক ঐ দানবের হাত থেকে বাঁচাতে তার গোপনাঙ্গ কেটে নেয়ার রূঢ় সিদ্ধান্ত নেন দোলন।
জেলার সাহেব এই নারীর কথা শুনে কিছুটা অবাক হলো। কৌতূহল মেটাতে খুঁজতে থাকলেন ঘটনার সত্যতা। এই নারীর কথার সাথে মিল পেলেন এলাকার লোকজনের কাছ থেকে। এরপর দোলন কাতর স্বরে বলল- স্যার, সত্যিই কী আমি অপরাধী? জেলে আসার মত? কিন্তু জেলার সাহেব কোন উত্তর দিতে পারলেন না। কারণ তিনি পোশাকের বাধ্যবাধকতায় আটকা, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তাঁর বলার সুযোগই নেই। হয়তো তাঁর মনেও খটকা লেগেছে। কারণ তিনিও তো মানুষ, সন্তানের বাবা।
ঘটনাটি ফেসবুকের বরাতে জানতে পারি। ঘটনা সত্য বলে, অনেকেই দেখলাম বেশ সোচ্চার। দোলনের পক্ষে সবাই। কেউ কেউ বলছেন, অপরাধের উপকরণ ধ্বংস করা হয়েছে। এতে অপরাধ নিবারণ হবে। আবার কেউ বলছেন, মহিলার স্বামী পাষন্ড, বর্বর, জাহিলিয়াত যুগের নরপশু।
হয়তো তা-ই। কিন্তু একে তো লোকটির লোলুপ দৃষ্টি, তার উপর নেশাখোর। এরা তো সমাজের যতটা না দরকারি, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি দংশনকারী। তাহলে এসব নেতিবাচক উপাদান সংবলিত মানুষদের জন্য কি কিছুই করার নেই সমাজের!
এই ঘটনায় দেখা যায়, সমাজ তো তার নারী আসক্তির বিচার করেছিল কয়েকবার। নাক খত দিয়ে সে মাফ পেয়েছিল সমাজপতিদের কাছ থেকে। তারপরও নিজের বোধোদয় ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে ঐ মনুষ্যত্বখেকো। তাহলে আর কি করার ছিল সামাজিক বিচার ব্যবস্থায়।
এ ব্যাপারে তার পরিবারের কী-ই বা করার ছিল। তবে বলা যায় যে, হয়তো শুরুতে তাকে মানসিক কাউন্সিলিং করা যেত, অথবা শুরুতেই যদি তাকে আইনী প্রক্রিয়ায় পাঠানো যেত, তাহলে হয়তো এরকমটা না-ও হতে পারতো! আর এ বিষয়টা লোকলজ্জার ভয়ে পরিবারই হয়তো লুকিয়ে রেখেছিল। তবে ধৈর্য্যের যখন বাঁধ ভাংগে তখনই অঘটন ঘটে।
প্রয়োজন আসলে কোন আইন মানে না। এসব কারণেই গৃহবধূ দোলন হয়তো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একজন মানুষের অঙ্গহানি করাটা অবশ্যই আইনত দণ্ডণীয়। কিন্তু যখন একটা অপরাধেই জীবনের বড় ধরনের অপরাধ নির্মূল হয়, সেক্ষেত্রে মানবিকতার বিচারে তো সাজা থেকে মুক্তি মিলতেই পারে। যাক এটা তো আইনী সিদ্ধান্তের ব্যাপার। যেহেতু দোলনের মামলাটি বিচারাধীন।
দোলনের অমানুষ স্বামীর মতো এরকম মানুষরূপী বর্বরদের সংখ্যা সমাজে নেহায়েত কম নয়। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় এদের লালসার শিকার হচ্ছে শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সের নারীরা। ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনে প্রাণও হারাচ্ছে অনেক নারী। প্রতিবছরই এর তালিকা দীর্ঘ হয়। এসব বর্বরতার দৃশ্যত: বিচার না হওয়ায় এরকম ঘটনা বেড়েই চলছে বলে মনে করছেন অনেকেই। আর দোলনের ঘটনা জেনে, আমারও মনের ভেতরে হু হু করে লু হাওয়া বইতে লাগলো।
মনে হলো- আহারে! ইভটিজিং, ধর্ষণ বা এধরনের জঘন্য কাজগুলোর যদি দৃশ্যমান শাস্তি হতো, তাহলে হয়তো সবাই নাজাত পেত। ঐ বখাটে, নষ্ট মানুষটির পরিবার, সমাজ, দেশ-মুক্ত হতো।
আবারও কুসুম কুমারী দাশের সেই পঙক্তি - "আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে" আওড়াই। আর আমি অপেক্ষায় থাকি সেই সুদিনের ...
লেখক : সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বাংলাভিশন।
এইচআর/এমএস