গাজীপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হোক
মীর আব্দুল আলীম
গাজীপুরের সিটি নির্বাচন চলছে। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী হওয়ায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ নির্বাচন কেমন হবে? নির্বাচন কি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে হবে? নাকি জোরজুলুমের নির্বাচন হবে, তা নিয়ে দেশ জুড়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
গাজীপুরের নির্বাচনে ইসি এবং সরকার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা প্রমাণ করুন- এটা এখন কায়মনে দেশবাসী চায়। এদেশে সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের শঙ্কা থেকেই যায় বরাবর। তাই এ নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও অবাধ করে সামনের জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী এবং ভোটারদের মনে আস্থা তৈরি করুক ইসি।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে তারই ইঙ্গিত পাওয়া যাবে এসব নির্বাচন থেকে। সেদিক থেকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্যও এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা। এসব নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ওপরই নির্ভর করছে ইসির প্রতি জন-আস্থার বিষয়টি।
বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি ছাড়া গত ২৪ বছরে আর কোন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এর কারণ সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে প্রতিটি সরকার নির্বাচন কমিশনকে তার সেবাদাস হিসেবে ব্যবহার করেছে। আর নির্বাচন কমিশনও সরকার ও সরকারি দলের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তবে আশার কথা এই যে বর্তমান ইসির অধীনে সর্বশেষ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন তেমন আলোচিত সমালোচিত হয়নি। গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে কি ঘটে তাই এখন দেখার বিষয়।
কোন নির্বাচনে কেবল প্রার্থীর বিজয়েই গণতন্ত্রের বিজয় হয় না, ভোটের সার্থকতা আসে না। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেউ জিতবেন, কেউ হারবেন। যিনিই জিতুন, শান্তিপূর্ণ ও অবিতর্কিত নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপিত না হলে দলের জয় গণতন্ত্রের জয় বলে প্রতিষ্ঠিত হবে না। গাজীপুরের নির্বাচনী সমীকরণকে অনেকে আগামী দিনে সংসদ নির্বাচনের সমীকরণ হিসেবেও দেখছেন। কিন্তু একটি বিষয় ভুললে চলবে না যে গাজীপুরের নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন।
জাতীয় রাজনীতির চাপে এই নির্বাচনের স্থানীয় বৈশিষ্ট্যকে যেন প্রভাবিত করা না হয়। তাই সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পারা এবং স্বচ্ছভাবে ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে। জয়-পরাজয় যাঁরই হোক, নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে পরাজিত হলে
চলবে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরপরই রয়েছে বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। আর এ বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হতে পারে জাতীয় নির্বাচন। ফলে দেশব্যাপী এখন নির্বাচনী হাওয়া বইছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যারা ভোটার নয়, তাদেরও মনোযোগ আকর্ষণ করছে সিটি নির্বাচন। পত্রপত্রিকায়ও সিটি নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। এককথায় সারা দেশই এখন এসব সিটি নির্বাচনের দিকে।
নির্বাচনের বছর এটা। পুরো বছরটাই নির্বাচন ঘিরেই কাটবে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হয়েছে। বাকি সিটিরও নির্বাচন এ বছরই হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ২০১৮ তে। তাই ভয় হচ্ছে; ভীষণ ভয়। সামনে নির্বাচনকে ঘিরেই এমন ভয় হচ্ছে। চুন খেয়ে মুখ পোড়া মানুষ আমরা, তাই মিষ্টি দই দেখলেও ভয় পাই। আর দেশের স্বভাবটাই আমাদের ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। কারণ সরকারের প্রতি
৫ বছরে শেষ বছরটা ভালোয় ভালোয় কাটে না। মারামারি, খুনোখুনি আর নানা হাঙ্গামায় উত্তপ্ত থাকে দেশ। কোন প্রকার হাঙ্গামা না থাকলেও বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা আর হুঙ্কারে আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা ভড়কে যাচ্ছি। কি জানি কি হয়, এই ভয় মনের ভেতর।
নির্বাচনকে সামনে রেখে, এমন ভয় হচ্ছে। বিগত নির্বাচনগুলো একতরফা হলেও এবার মনে হচ্ছে তা হবে না। যেকোন মূল্যে বিএনপি নির্বাচনে যাবে এবং যাচ্ছে। বড় রাজনৈতিক দু’দল নির্বাচনে গেলে যা হয় তাই হয়তো হবে। আবহাওয়াটা
ফের গোমট ঠেকছে। বোধ করি আলোর দেখা মিলবে না। রাজনৈতিক যুদ্ধ আবারও হতে পারে। তবে এটাই বলতে চাই, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এ সরকারে সময়টা খুব একটা খারাপ যায়নি। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ শুরু হয়েছে, দেশের দৃশ্যমান উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়েছে। গণতন্ত্রেও ঘাটতি থাকলেও, হরতাল অবরোধ না থাকায় জনমনে স্বস্তি ছিলো।
ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পেরেছে, শিল্প কারখানায় উৎপাদন হয়েছে। ভয় এখানেই; এ ধারা ঠিক থাকবেতো? সামনের দিনগুলো ভালো যাবে, মনে হচ্ছে না। আবার জ্বালাও পোড়াও, ভাংচুর, হরতাল অবরোধ এসব হবে নাতো? বাংলাদেশের নির্বাচন মানেই অস্থিরতা আর ভয়।
এবারও আমরা রাজনৈতিক মাঠে এমন পরিবেশ লক্ষ করছি। প্রকৃতিতে যেমন কালবৈশাখী শুরু হয়ে গেছে তেমনই, রাজনৈতিক অঙ্গনেও উথালপাথাল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। পত্রিকা খুললেই রাজনৈতিক গরম খবর দেখতে পাই। রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনকে ঘিরে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যেও নির্বাচনকে ঘিরে বেশ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। তবে তারা দেশে নির্বাচনকে ঘিরে আর কোন অশান্ত পরিবেশ চায় না।
জাতীয় নির্বাচনের যেখানে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি এ নির্বাচনকে ঘিরে কি হবে? জনগণ চায় ঝামেলা মুক্ত রক্তপাতবিহীন নির্বাচন। তারা অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনও প্রত্যাশা করে। বেসরকারি দলের জ্বালাময়ী বক্তব্য যেমন জনগণ আশা করে না, তেমনই তারা সরকার দলের কাছে সমতা বজায় রেখে সঠিক নির্বাচনের প্রত্যাশা করে। এ অবস্থায় কি করবে নির্বাচন কমিশন? আমরা জানি, নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের উপরই ন্যস্ত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সকল নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করার জন্য ওয়াদা করেছেন। তিনি তাঁর ওয়াদা রক্ষা করবেন এটাই আমরা কায়মনে চাই।
লেখক : সাংবাদিক।
এইচআর/জেআইএম