ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

প্রকৃতি আমাদের আমরা প্রকৃতির

কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশিত: ০১:০৩ পিএম, ০৫ জুন ২০১৮

জুন ৫ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতিবছর শতাধিক দেশে পরিবেশ দিবস পালন করা হয়।

পরিবেশ দূষণের হাত থেকে এ বিশ্বকে বাঁচানোর সুদৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে প্রতি বছর ৫ জুন দিবসটি পালিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আসুন প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করি’ এবং স্লোগান- প্লাস্টিক পুনঃব্যবহার করি, না পারলে বর্জন করি’।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত দিবস। প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়। উত্তর গোলার্ধে দিবসটি বসন্তে আর দক্ষিণ গোলার্ধে দিবসটি শরতে পালিত হয়।

বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন, অযাচিত রাসায়নিকের ব্যবহার, অপরিকল্পিক শিল্পায়ন আর প্রচুর পরিমাণ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিষ্কাশনের ফলে দিন দিন পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে। সে সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং আবহাওয়া জলবায়ুর। দূষিত হচ্ছে পানি, বায়ু, মাটি এবং সম্মিলিতভাবে আমাদের পরিবেশ। যার ফলাফলস্বরূপ বিশ্ব তাপমাত্রা বাড়ছে, ঝড় ঝঞ্ঝা বৃষ্টি ক্ষরা, বন্যা, জলাবদ্ধতার সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে।

অদূর ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ তলিয়ে যেতে পারে পৃথিবীর নিম্নভূমির দেশসমূহ। পরিবেশ তথা পৃথিবী রক্ষায় প্রয়োজন পূর্ণ সচেতন উদ্যোগের। যার যার যতটুকু সাধ্য ততটুকু দিয়েই চেষ্টা করা দরকার অমিত সম্ভাবনার প্রাণের পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য যৌক্তিক রাখার। আমাদের সাধ্যের মধ্যে আছে এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে।

যেমন-০১. গাছপালা নিধন না করা আর অন্যকে নিধনে নিরুৎসাহিত করা এবং অবশ্যই নিজে বেশি বেশি করে গাছ লাগানো আর অন্যকে গাছ লাগানোয় উৎসাহিত করা। রোপিত গাছের চারা কলম যথাযথভাবে টিকিয়ে রাখার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ০২. গাড়ির ক্ষতিকর/কালো ধোঁয়া বন্ধ রাখার সব কৌশুলি চেষ্টা করা এবং অন্যকে এ ব্যাপারে বাধ্যতামূলকভাবে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সচেতন করার ব্যাপারে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা।

০৩. পাহাড় কাটা বন্ধ রাখা এবং এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করা। ০৪. ব্রিজ কালভার্ট পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ; ০৫. যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা বর্জ্য না ফেলে নিদিষ্ট স্থানে ফেলা এবং বর্জ্য পদার্থ যেখানে সেখানে নিষ্কাষিত না করা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ছোট মাঝারি বড় ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করা

০৬. বাড়ির এসি ফ্রিজ কমপ্রোসার এসব ইলেক্ট্রনিক মেশিনপত্রগুলো সময় সময় সার্ভিসিং করিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা। ০৭. পলিথিনের ব্যবহার সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন হওয়া। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার অন্যথায় ব্যবহার বন্ধ করা। পলিথিনের কার্যকর বিকল্প গ্রহণ প্রচার প্রসার বাস্তবায়ন করা।

০৮. পারিবারিকভাবে নিত্যদিনের ময়লা আবর্জনা দিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে জৈবসার কম্পোস্টসার তৈরি করে ব্যবহার করা। মোটকথা আমাদের পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুসমন্নত রাখা। এ রকম আরও অনেক বিষয় যা পরিবেশ/পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর সেগুলো বন্ধ করা বা বন্ধ করার জন্য জনগণকে সচেতন করার শপথ নেওয়ার অনুপ্রেরণা দেয় এই দিনটি।

মনে রাখতে হবে মানুষের বেঁচে থাকা, শ্বাস নেয়া জীবন-জীবিকা নির্বাহে প্রকৃতি ও পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের কারণে প্রকৃতি ও পরিবেশে প্রতিনিয়ত দূষিত বর্জ্যযুক্ত হচ্ছে আমাদের প্রাণের পৃথিবী। বিঘ্নিত হচ্ছে প্রাকৃতিক যৌক্তিক ভারসাম্য।

পলিথিনের বিকল্প পাটের শপিং ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সরকারিভাবে। এখন দরকার এটাকে বিস্তৃতি বিস্তার করে সবার গ্রহণযোগ্যতার কাছে নিয়ে যাওয়া। সরকার নদী খনন, খাল খননসহ পাড়ে বৃক্ষরোপণ বাধ্যতামূলক করেছে। সাগর ও উপকূল অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনী, বৃক্ষরোপণ ও ম্যানগ্রোভ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ কাজ দায় শুধু সরকারের নয় আমাদের সবার সার্বক্ষণিকভাবে।

আমরা আমাদের জরুরি প্রয়োজনের বৃক্ষরোপণ, রোপিত বৃক্ষের যত্নআত্তি যথাযথভাবে করবো সুনিশ্চিতভাবে। ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে নিদিষ্ট জায়গায় ফেলবো এবং সম্মিলিতভাবে এগুলোর ব্যবস্থপনা সুনিশ্চিত করবো। আবশ্যকীয়ভাবে আবর্জনা দিয়ে বায়োস্লারি, জৈবসার, জৈবগ্যাস, জৈবকৃষি, জৈব পরিবেশ তৈরি করে পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম হাতে নিয়ে সুন্দর দেশ গড়ার প্রত্যয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করবো। মনে রাখবো আমাদের প্রাণের স্পন্দনে, প্রকৃতির বন্ধনে আমরা সমন্বিতভাবে বেঁচে থাকবো বাঁচাবো সবাইকে। কোন মতেই ভুললে চলবে না আমি প্রকৃতির, প্রকৃতি আমার’।

অযাচিত অপরিকল্পিতভাবে পলিথিন, রাবার প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে উর্বর কৃষি জমি থেকে শুরু করে খাল বিল, নদ-নদী, ডোবা নর্দমা, সুয়ারেজ লাইন এবং সাগর-মহাসাগরের প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তাই পরিকল্পিতভাবে প্লাস্টিকের পুনঃব্যবহার এবং পুনঃচক্রায়ন একান্ত প্রয়োজন। পলিথিনের বিকল্প পাটের শপিং ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দরকার কার্যকরভাবে এগুলো প্রচার প্রসার বিস্তার।

নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে যাতে প্রতিবেশ ও পরিবেশসম্মত বিধি ব্যবস্থা পালন করা হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। শিল্পাঞ্চল, আবাসিক অঞ্চলসহ যে কোনও স্থাপনায় বৃষ্টির পানি ও জলাধার সংরক্ষণ এবং বৃক্ষ রোপণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নদী খনন, খাল খননসহ পাড়ে বৃক্ষরোপণ বাধ্যতামূলক করেছে। সাগর ও উপকূল অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনী, বৃক্ষরোপণ ও ম্যানগ্রোভ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০১৮’ উপলক্ষে আমাদের হৃদ্দিক অঙ্গীকার হোক বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রতিবেশের টেকসই ব্যবস্থাপনায় জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে। সুন্দর পরিবেশ সুনিশ্চিত করে আমাদের প্রাণের পৃথিবী দেশকে সুনির্শল রাখবো আন্তরিকতায় দায়বদ্ধতায় পতিদিন প্রতিক্ষণ সারাবেলা।

আরেকটি কথা বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমাদের মনের পরিবেশ, ভিতরের পরিবেশ, ব্যক্তিগত, পারিবারিক সামাজিক পরিবেশ যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বিশুদ্ধ পবিত্র রাখতে পারি সচেতনভাবে তাহলে আমাদের দেশটাইতো শুভ সুন্দর পরিবেশের রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হবে । আমরা যেন তাই ভাবি সেটা করি এবং সব দায় দায়িত্ব পালন করে বিশুদ্ধ মানুষ হয়ে বিশুদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করি লালন করি ধারন করি এবং অবশ্যই পালন করি।

লেখক : অতিরিক্ত পরিচালক, ক্রপস উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন