‘সবুজ পাহাড়ে যেতে চাই আমরা’
দু’বছর তিন মাস আমাদের সংসার জীবন, কখনো তাকে নিয়ে কিছু লিখিনি। বরং যে কোন বিশেষ দিনে মনের মধ্যে প্রবল আশা নিয়ে বসে থাকি। ভাবি, সে লিখবেই। কম্পিউটারের সামনে কারণে অকারণে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করি, লিখছে কিনা।
সে লিখতো। লিখে চমকে দিত। আমার খুউব গর্ব হত। ভাবতাম .. জীবনে আর কীবা দরকার! নিজে নিজেকে ভৎর্সনা করতাম তার মত কিছু লিখতে পারি না বলে। আজও পারছিনা। কি লিখবো?
আমার সন্তান বিভোরের বাবার লিভার সিরোসিস। খুব দ্রুত সময় ট্রান্সপ্লান্ট না করা গেলে ডাক্তাররা সময় বেঁধে দিয়েছেন দু’মাস। মানুষের জীবনে এত এত খারাপ সময়ও আসে তাহলে! আমাদের বিভোরের বয়স ১৫ মাস ,ও হয়তো সময়ের এই নিষ্ঠুরতা বোঝে না। আসলেই কি বোঝে না? তাহলে দেয়ালে বাবার ছবির দিকে ওভাবে কেন তাকায়? কি জানি আমরা বড়রাই হয়তো ওকে বুঝি না!
আরও পড়ুন : আপনার ১০ টাকায় বাঁচবে রাজীব মীর
আমি বিভোরকে বলি -বলো বাবা.. বাবা। সে বলে না। হয়ত আগের মত বাবার কোলে বসেই বাবা ডাকতে চায়! মনে পড়ে সে দিনের কথা , প্রথম যেদিন বাব্বা বলে ডাকলো। বাবার সে কী খুশি! দুষ্টু মেয়ে আমাদের কতদিন বাবাকে দেখে না। আমরা সবাই এই দুষ্টু বিভোরের বাবাটার জন্য আশা নিয়ে বসে আছি।
বিভোর বাবা ডাকবে আর আমরা সবাই সেই বাবার ঝলমলে চোখের খুশি দেখবো। দেখ, তুমি কত ভাগ্যবান তোমার বোন তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে তার কলিজার অংশ দিতেও প্রস্তুত। তো ভয় কীসে তোমার! ফোনে কথা হলে ভেলরের কথা বলো। বলো, ওখানে সব পাথর,পাহাড়গুলোও পাথরের। কোথাও সবুজ নেই।
আমি মনে মনে বলি - সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ,আমাদের সবার দোয়ায় সুস্থ হয়ে ফিরে এসো। আমরা আমাদের সবুজ সবুজ পাহাড়ে ঘুরতে যাব। বিভোর ছোট বলে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি আমাদের। বিভোর বড় হচ্ছে, আমাদের আঙুল ধরে হাঁটবে ও। তোমার হাত ধরে পাহাড়ে উঠবে। চিন্তা করো না তুমি। মহান আল্লাহ তোমাকে কৃপা করবেন। এত ভালবাসা বৃথা যেতে পারে না! অপেক্ষায় আছি আমরা.. সুমনা।
এইচআর/জেআইএম