ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

রমজান মাস কি রাজপথে ভিক্ষুক অবমুক্তকরণ সময়?

নায়না শাহরীন চৌধুরী | প্রকাশিত: ১১:৩৮ এএম, ৩০ মে ২০১৮

উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে, যদিও ছোটবেলা থেকে তাই জেনে এসেছিলাম। যাই হোক, ফ্লাই ওভার, ফ্লাই ওভারের নিচে ময়লার ভাগার, ভাঙ্গা রাস্তা, গণ-পরিবহনের অন্তঃহীন ভোগান্তি’র সাথে সমঝোতা করতে করতে নতুন জিনিস খেয়াল করছি।

আমরা যারা নিয়মিত খেটে খাওয়া মানুষ, বন্ধ প্রাইভেট কারের বাইরে যাদের জীবনযাত্রা প্রতিনিয়ত, ইদানিং, তাদের প্রত্যেকটা রাস্তার মোড়ে এই রমজান মাসে অন্ততঃ ৩/৪ জন ভিক্ষুককে ফেস করতে হচ্ছে। এটার কারণ কি?

সামনে ঈদ, তাই এই মৌসুমি ভিক্ষুকের আবির্ভাব? দান করা ভাল, কিন্তু, সবার পক্ষে এত ভিক্ষুকদের দান করা কি সম্ভব। আর সবচেয়ে বড় কথা এসব দানে তাদের ভাগ্য কতটুকু পরিবর্তিত হবে? মানুষের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে এরা ভিক্ষার আড়ালে মানুষকে ঠকাচ্ছে না তার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবেন?

সবচেয়ে খারাপ লাগে, প্রখর রোদে যখন মধ্যবয়সী শক্ত সামর্থ্য মহিলাকে দেখি কয়েক মাসের শিশুকে নিয়ে ভিক্ষা করতে। নিশ্চয়ই শিশুটি তার নয়। মালিবাগ থেকে মতিঝিল আসতে কত রকম ভিক্ষুক যে ছেঁকে ধরে! অথচ, রাষ্ট্রে নাকি অন্নাভাব নেই। যদি নাই থাকে, তাহলে তাদের অভাবটা কি যা তাকে পথে নামিয়েছে। চিকিৎসা? চিকিৎসার নকল ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ধরা পড়েছেন অনেক ভিক্ষুক!

রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানের সামনে প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে জড়ো হন প্রায় অর্ধশত ভিক্ষুক। যাদের একটা বড় অংশই ভিক্ষা করেন সপ্তাহে একদিন। এছাড়াও অনেকেই আছেন, যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কাজ না করে বিভিন্ন অজুহাতে ভিক্ষাকেই অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এতে মুসল্লীরা বিরক্ত হলেও তারা অনেকটা অসহায়। ভিক্ষা না দিলে অনেক সময় গালাগালও করে।

আমি প্রশাসনের আলস্যে হতাশ বোধ করি। জানিনা এই বিষয় গুলোর তদারকি গুলশান বনানীর প্রভাবশালী স্থান থেকে কবে আমাদের মত মধ্যম আয়ের মানুষের এলাকায় প্রযোজ্য হবে! হয়ত প্রশাসন সত্যি অসহায়।

রাজধানীতে ভিক্ষুকের সংখ্যা কত তার কোন পরিসংখ্যান নেই। সত্যিকারের ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্যও এখন আর কোন উদ্যোগ নেই। তবে রাজধানীতে ভিক্ষুকদের নিয়ে প্রথম একটি জরিপ করা হয়েছিলো ২০১১ সালে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সেই জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হয় প্রায় ১০ হাজার ভিক্ষুকের। এদের মধ্যে বিভিন্ন জেলায় পুনর্বাসনের জন্য নির্বাচিত করা হয় ২ হাজার ভিক্ষুককে। তবে পুনর্বাসিত হয় মাত্র ৬৬ জন। প্রকল্পটিও পরে বন্ধ করে দেয়া হয়।

কেন সেই প্রকল্প ব্যর্থ হলো আর কেনইবা ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের আওতায় আনা গেলো না, সে বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম) আবু মোহাম্মদ ইউসুফ বলছিলেন, "কাউকে ভ্যান, কাউকে রিক্সা, কাউকে সেলাইমেশিন এরকম বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নিয়ে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু কিছুদিন পর দেখা গেলো, তারা ঐসব ভ্যান, রিক্সা বিক্রি করে আবারো ভিক্ষায় চলে আসছে।

আমি কিন্তু দেখছি হাত, কিংবা পা কাটা প্রতিবন্ধী মানুষকে তোয়ালে বা বই বিক্রি করতে। তারা নিজেদের আত্মসম্মান বিসর্জন দেন নি। আসলে, ভিক্ষা একটি সহজ পন্থা মানুষকে ঠকানোর। মানবিকতার সাথে খেলা করার একটি পেশা এই ভিক্ষা বৃত্তি। আর আমরাও ভিক্ষাবৃত্তিকে প্ররোচিত করি। তাই, এই পেশা টি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। আপনি যেই হোন, খুব অসহায় না হলে, ভিক্ষা দেবেন না।

বরং, সম্ভব হলে তার জীবনযাত্রা কীভাবে পরিবর্তন করা যায় বা তাকে কিভাবে পুনর্বাসিত করা যায়, তা ভাবুন, ও সেই মত সাহায্য করুন। সেটাই হবে তার প্রতি প্রকৃত উপকার। আর না হলে, ভিক্ষা বৃত্তিকে সমর্থন করবেন না। বাংলাদেশ ভিক্ষুকের দেশ, মিসকিনের দেশ এই অপবাদ থেকে এই বৈশ্বিক অপমান থেকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। জানিনা, প্রশাসন কবে বাংলাদেশের প্রতিটা রাস্তা ভিক্ষুকমুক্ত করতে পারবে! তবে সে পর্যন্ত আমরা আমাদের চেষ্টাটুকু অব্যাহত রাখি, কেমন?

লেখক : সঙ্গীতশিল্পী, কলাম লেখক ।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন