ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বাজেটে জোয়ার নেই, ভাটাও নেই

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা | প্রকাশিত: ১০:৩৪ এএম, ১২ মে ২০১৮

 

বাজেট আসছে। বাজেট বরাবরই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যদিও আজকাল তার গুরুত্বও কমে গেছে অনেকখানি। আগে সবাই তাকিয়ে থাকত কোন জিনিসের দাম বাড়বে আর কোনটার কমবে। এখন যেহেতু সারা বছর ধরেই দাম বাড়তে থাকে, রহস্য ও প্রত্যাশা কোনওটারই তেমন আর স্থান নেই। প্রত্যাশা বা দুশ্চিন্তা থাকলেও বাজেট নিয়ে আলোচনা কম।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ কোটি টাকার বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। সেই তুলনায় আগামী অর্থবছর বাড়ছে মাত্র ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ৭ জুন জাতীয় সংসদে বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে শেষ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বাজেটটির লক্ষ্য কী হবে? বলা সত্যিই মুশকিল। তবে একটা ব্যাপারে সন্দেহ নেই সরকার যাতে নির্বাচনী বছরে বিপদে না পড়ে না যায়, সেটা নিশ্চয়ই অর্থমন্ত্রীর একটা প্রধান লক্ষ্য থাকবে। সরকার কিভাবে মোকাবেলা করবে সেটা অবশ্য রাজনৈতিক বাস্তবের ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু আবুল মাল আবদুল মুহিত অন্তত এইটুকু নিশ্চিত করতে চাইবেন যে তাঁর বাজেট সরকারের পক্ষে একটা নতুন বিপদ হয়ে না দাঁড়ায়।

একটা কথা বলতেই হবে গত প্রায় ১০টি বছর নানা ঘাতপ্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে গেলেও অর্থনীতিতে নতুন কোনও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়নি। অর্থনৈতিক স্থিতি খুব জরুরি এবং তা বজায় ছিল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও। সাহসী সংস্কারের পথে অর্থমন্ত্রী হাঁটেননি, ব্যাংকিং খাতে কেলেংকারি ছিল নিত্যসঙ্গী, তবুও বার্ষিক ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে তিনি এগিয়েছেন। তবে মূল্যবৃদ্ধির তেজ সবসময়ই ছিল। মাথাপিছু গড় আয় বাড়লেও তা যে বৈষম্যের পথকেই প্রশস্ত করেছে সেটাও সবার জানা।

দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সর্বজনীন উন্নয়নের জন্য উঁচু বৃদ্ধির হারের কক্ষপথে পৌঁছানো প্রয়োজন। এটাই স্বাভাবিক বাজেট দর্শন। কিন্তু এক কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন। কারণ বছরটি নির্বাচনের বছর। বড় বাজেট মানেই বড় ঘাটতি। বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য কি সুসংবাদ রয়েছে তা জানা যাবে পরে। তবে ঘাটতি কমানোর প্রত্যাশিত পথে ফিরে আসতে পারছেনা বাজেট কোন বছরেই।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের চেয়ে এডিপির আকার বাড়ছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। আর সংশোধিত এডিপির তুলনায় বাড়ছে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। সেই সঙ্গে আগামী অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

পাশাপাশি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য বাড়ছে প্রায় ৫৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা বেশ রক্ষণশীল। নির্বাচনী বছরে সরকার কর না বাড়ানোর তথাকথিত জনপ্রিয় পথে পা বাড়িয়েছে।

বর্তমান সরকারের প্রধান রাজনৈতিক দর্শন শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রধান বিবেচনা করে। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ননির্ভর দর্শনসংবলিত বাজেট প্রদানের কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ, রাজনৈতিক পরিবেশ, সামাজিক স্থিতিশীলতা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, শিক্ষার পরিবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ সুশাসনের সূচকে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। ধর্মীয় উগ্রবাদ, সহিংসতার মতো বিষয়গুলো বাজেটে স্থান পায়না। কারণ এসব কমাতে যে উন্নত বিজ্ঞানভিত্তিক, জ্ঞাননির্ভর সমাজ গঠনের প্রচেষ্টা তার জন্য শিক্ষা সম্প্রসারণবান্ধব বাজেট হয় না।

আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং তৃতীয় অবস্থানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এছাড়া পর্যায়ক্রমে গুরুত্ব পাওয়া আরও ৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হচ্ছে- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়।

আগামী অর্থবছরের এডিপি তৈরিতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজির লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অগ্রাধিকার খাতগুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা হচ্ছে। এছাড়া উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, পরিবহন, ভৌত ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাত ও নারী উন্নয়নসহ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার বিষয়গুলো মাথায় রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন এডিপি তৈরির ক্ষেত্রে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও কাঙ্খিত সুফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে নতুন প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে চলমান প্রকল্প সমাপ্ত করার দিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

আগেই বলেছি নির্বাচন সামনে রেখেই করা হচ্ছে আগামী অর্থবছরের বাজেট। যেহেতু ডিসেম্বরের মধ্যে একটি নির্বাচন করার কথা, সেহেতু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও প্রভাবে বাজেটের আকার, বরাদ্দ এবং অর্থ ব্যয়- সব ক্ষেত্রেই নির্বাচনী চিন্তার প্রতিফলন পড়বে।

তাছাড়া নির্বাচনী নানা অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে গেলে বড় আকারের বাজেট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর বরাবরের মতোই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এর বাস্তবায়ন নিয়ে। বাজেট অর্থনীতিতে জোয়ার আনবে বলে ভরসা করা কঠিন, ভাটায়ও যে টেনে নিয়ে যাবে তাও নয়।

লেখক : প্রধান সম্পাদক, জিটিভি।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন