ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ০৬ মে ২০১৮

 

হঠ্যাৎ করেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। বিশেষ করে রক্ত ঝরছে পাহাড়ে। রাঙামাটি উপজেলা চেয়ারম্যান দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হওয়ার পর দিনই তার শেষ কৃত্যে যোগ দেয়ার জন্য যাওয়ার পথে গুলিতে নিহত হন আরো পাঁচ জন। এদিকে অপর ঘটনায় নিহত হয়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক (৭০)। ছয়বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান সিরাজুল হক দুপুর ১টার দিকে একটি ভাড়া করা মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে কাছে থেকে পর পর কয়েকটি গুলি করে পালিয়ে যায়। এছাড়া ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অহরহই। এ অবস্থা চলতে পারে না। অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমার শেষকৃত্যে যাওয়ার পথে গাড়িবহরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা, যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য তনয় চাকমা ও মহালছড়ি যুব সমিতির সভাপতি সুজন চাকমা। এছাড়া খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মারা গেছেন সজীব চাকমা ও সেতুলাল চাকমা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আটজন। তারা খাগড়াছড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত ও আহতরা সবাই খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর যাওয়ার পথে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কের নানিয়ারচর উপজেলার বেতছড়ি ফরেস্ট টিলা এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এ বর্বরোচিত ঘটনায় ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়। পাহাড়ি-বাঙালি সবারই দিন কাটছে আতঙ্কে। দিনেদুপুরে একজন জনপ্রতিনিধিকে হত্যা এবং তার পরদিনই আবারো হত্যাকাণ্ড। এ ধরনের ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। বিশেষ করে পাহাড়ের এই হত্যাকাণ্ডকে নিছক আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এরসঙ্গে জড়িত নানা জটিল সমীকরণ। এই অবস্থায় শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পাহাড়ে শান্তি ফিরবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের মতে ১৯৯৭ সালে যে শান্তিচুক্তি হয়, ‘তা পাহাড়িদের জন্য সার্বজনীন ছিল না। শান্তিচুক্তি অনুষ্ঠানেই ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন চাই’ স্লোগান দিয়ে চুক্তির বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ। চুক্তি সম্পন্ন হলো দুই দশক। কিন্তু লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।’

তিন বলছেন, ‘প্রথমত, শান্তিচুক্তির অধীনে সকল পাহাড়ি বা সংগঠনগুলোকে আনা যায়নি। অর্থাৎ নানা অভিযোগ এবং দাবির বিষয়ে পাহাড়িরা এখনও সোচ্চার। এই প্রশ্নেই বাঙালি-পাহাড়ি এবং পাহাড়ি-পাহাড়িরা সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছেন।’

তার মতে, ‘ইউপিডিএফ এবং সমমনা সংগঠনগুলো মনে করে সন্তু লারমার দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাহাড়িদের সঙ্গে বেঈমানি করেছে। জেএসএস বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়ে সুবিধা নিচ্ছে এবং সরকারকে সুবিধা দিচ্ছে। অন্যদিকে পাহাড়িদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সরকার এবং সন্তু লারমার দল উদাসীন। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়াও এই সংঘাতপূর্ণ অশান্তির কারণ।’

সংঘাতের আরো কারণ সম্পর্কে তিনি বলছেন, ভূমি সংস্কারে জটিলতার কথা। পাহাড়ের ভূমি সমস্যার সমাধান সরকারগুলো করতে পারেনি। আর এসব কারণেই নিজেরা বিভাজিত হচ্ছেন এবং সংঘাতে জড়াচ্ছেন। মূলত পাহাড়ে এখন যেসব হত্যাকাণ্ড তার পেছনে নেতৃত্ব এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এবং এর পেছনে মূলত উল্লেখিত কারণগুলোই দায়ী।’

তিনি আরো বলেন, ‘পাহাড় শান্ত ছিল না। অস্থায়ী অশান্তি ছিল-ই বটে। এটি যেন স্থায়ী না হয়, তা এখনই আমলে নিতে হবে। অস্ত্র কোথা থেকে আসছে, কারা দিচ্ছেন, তা এখনই জানতে না পারলে বিপদ বাড়বে’। এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। পাহাড়ে যাতে স্থায়ী শান্তি ফিরে সেজন্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে সমতলেও ঘটছে হত্যাকাণ্ড, ছিনতাই, ধর্ষণ, রাহাজানি। এটি নির্বাচনের বছর। এই বছরে নানা রকম অঘটন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোনো কুচক্রী মহল যেন সুযোগ নিতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সবার আগে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এই মুহূর্তের কর্তব্য।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন