কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চাই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ
দেশে নতুন বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোক্তাদের আরো ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। আসন্ন নির্বাচনকে মাথায় রেখে বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়ে অনেকেই চিন্তা করলেও বিনিয়োগ পরিস্থিতি এখনও ব্যবসায়ীদের পক্ষে নয়। দেশে বিদেশী ও দেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ অনেক ভালো। যার কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশেকে বিনিয়োগের অন্যতম জায়গা হিসেবে খুঁজে নিয়েছে। তবে বিনিয়োগ আরো বাড়াতে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস, অবকাঠামো বাড়াতে হবে। যাতে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সুযোগ তৈরি করতে পারেন তারা। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশে এই মুহূর্তে ব্যবসার পরিবেশ বাড়ানোর জন্য জঙ্গি, সন্ত্রাস দমন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে প্রয়োজন নতুন নতুন বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য দেশে অবকাঠামো খাতে আরো কাজ করা দরকার। দেশীয় উদ্যোক্তাদের সকল সুবিধা জোরদার করে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আনলে দেশীয় উদ্যোক্তারা আরো ভালো কাজ করতে উৎসাহিত হবে। তাই দেশে নতুন নতুন বিনিয়োগ বাড়ানোর সাথে প্রয়োজন দেশীয় উদ্যোক্তাদের আরো বেশী ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা। বিশেষ করে গ্যাস,বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোগত সুযোগসুবিধা বাড়িয়ে নতুন নতুন ইকোনমিক জোনগুলোকে ব্যবসার জন্য তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির পক্ষ থেকে অনেক কাজ করা হলেও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে কাজ আরো বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বর্তমানে ৭.২৪ শতাংশ রয়েছে তা যাতে এই সরকারের শেষ সময় ৮ শতাংশে উন্নীত হয় সেদিকে জোর চেষ্টা চালাতে হবে। আর এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যে বিনিয়োগ দরকার তার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। দেশে যে ১০০ ইকোনমিক জোন তৈরি করা হচ্ছে সেখানে ব্যবসায়ীদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করে ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করলে দেশী ও বিদেশী উদ্যোক্তা- সকলেই আগ্রহ প্রকাশ করবে।
আর প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল রাখতে যে বিনিয়োগ দরকার তার জন্য আইনী বিষয়গুলো রয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে। আর এতে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো বাড়বে। বিদেশীদের কোন ঝামেলা বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়া ওয়ান স্টপ সার্ভিস যদি দেয়া যায় তাহলে আস্থা আরো বাড়বে। বিদেশীরা বলছেন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অথোরিটি তাদের সহযোগিতা করছে তবে কিছু কিছু জায়গায় আইনী জটিলতা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করছে। বিদেশী ও দেশী বিনিয়োগকারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে বিনিয়োগ করতে চাইলে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ অবকাঠামো। যা নিযে গভীরভাবে চিন্তিত বর্তমান সরকারও। সেই সাথে দেশের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে জঙ্গি ও অন্যান্য সকল রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে ব্যবসায়ীদের দূরে রাখা প্রয়োজন।
বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা আরো বেশী চিন্তিত করছে ছোট ও মাঝারী ব্যবসায়ীদের। ব্যাংকের অতিরিক্ত সুদ তাদের ব্যবসায়ের বড় বাধা। বড় ব্যবসায়ীরা লোন নিয়ে আর পরিশোধ করে না আর ছোট ব্যবসায়ীরা লোন চেয়ে পায় না। পেলেও ঋণের বোঝা এতটাই বেশী যা সামলানো অনেক ব্যসায়ীদের জন্য কষ্টের। খাত ভিত্তিক লেনদেনে ব্যবসায়ীদের বিশেষ প্রণোদনা ও করের বোঝায় কিছুটা সহজ করে দিলে উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার সংখ্যা বাড়তে পারে।
দেশের বাইরে থেকে মেশিনারিজের নাম করে আমদানী বাড়ানোর যে প্রবণতা তারও সঠিক নজরদারি প্রয়োজন। না হলে উন্নয়নশীল দেশে যাত্রার যে আরম্ভ তা যাতে ভঙ্গ না হয় সেজন্য সকল মহলের সচেতনতা বাড়াতে হবে। অর্থনীতির সূচক এখন নির্বাচনী বছরে টালমাটাল অবস্থায় থাকতে পারে। তাই বলে বিনিয়োগ যাতে খুব বেশি ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে ব্যাপারে বিশেষ নজর দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
দেশীয় উদ্যোক্তাদের আরো বেশি উৎসাহিত করতে তাদের বেশি করে সুযোগ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে অবকাঠামো, জায়গা, গ্যাস, বিদ্যুৎ,সঠিক বিনিয়োগ নীতির মাধ্যমে কর্ম পরিবেশ বাড়াতে হবে। শিল্প কারখানা তৈরিতে জায়গা নিশ্চিত হলেও অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা নিয়ে সরকারকে জোরালো কাজ করতে হবে। অর্থনীতির চাকা ঘুরাবে ব্যবসায়ীরা। আর ব্যবসায়ীদের সঠিক মূল্যায়ন করলে দেশ বাঁচবে ,অর্থনীতি বাঁচবে আর তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
বাংলাদেশের বিনিয়োগ সংক্রান্ত ওয়েবসাইটগুলোর হিট হিস্ট্রি দেখলে বোঝা যায় বিদেশীরা এই দেশের দিকে কতটা নজর দিচ্ছে। এর প্রধান কারণ আমাদের দেশের জনসংখ্যা। এই জনসংখ্য অনেকে মনে করেছিল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বাধা হবে। আজ জনসংখ্যাই দেশের অর্থনীতির চাকা বেগবান রাখার মূল চালিকাশক্তি। তবে জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে।
সরকারের বিভিন্ন পলিসি দেখলে বোঝা যায় দেশের উন্নয়নে কতটা কাজ হচ্ছে। যে ভিশন নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার সাথে দেশ চালাচ্ছেন সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আজ বিশ্বের কাছে অবাক বিস্ময়। যেই বাংলাদেশের একসময় ইনভেস্টমেন্ট পেতে সমস্যা হত আজ বিদেশীরা নজর দিচ্ছে সেই দেশের দিকে। দরকার পিপিপি কে আরো শক্তিশালী করা। বিদেশীদের জন্য আরো বেশি পলিসি সাপোর্ট বাড়ানোও জরুরি।
দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে আরে বেশি নতুন নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রয়োজন। সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ লোক তৈরি করতে পারলে হাই ম্যানেজমেন্টে আরো বিদেশীদের হায়ার করতে হবে না। আমার দেশের লোক,আমার বিনিয়োগ আর আমার অর্থনীতিকে তারাই এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গুলোও অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল হবে না।
সব ব্যবসায়ীরাই রিটার্নের কথা চিন্তা করে। তাই দেশে খুব দ্রুত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে আরো অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা বাড়ালে বিনিয়োগ বাড়বে। ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হবে আর প্রবৃদ্ধিও স্থিতিশীল থাকবে। তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে আরো বেশি নতুন নতুন মেশিনারিজ তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। সেই সাথে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের ফাইনান্সিয়াল সেক্টরে যাতে হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচানো যায় তার জন্য ফাইনান্সিয়াল সাইবার আইন দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। কারণ ফাইনান্সিয়াল সেক্টরে বিপর্যয় তৈরি হলে সব কিছুই বাধাগ্রস্থ হবে। বিদেশীদের কাছে ভুল তথ্য চলে যাবে। তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ব্যাংকগুলোর প্রতি ব্যবসায়ীরা আস্থা হারাবে আর নতুন নতুন বিনিয়োগ সম্ভাবনা থেকে পিছিয়ে যাবে। তাই ফাইনান্সিয়াল সাইবার নীতি এখন সময়ের দাবি। তা দেশী ও বিদেশী ব্যাবসায়ীদের সুষ্ঠু পরিবেশ দিতে বাংলাদেশ সরকারের এখন উন্নত দেশের যাত্রায় প্রধান ও মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ অবকাঠামো ও সুস্থ ফাইনান্সিয়াল সাইবার নীতি। দেশ এখন উন্নয়নশীলের তালিকায়। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও উদ্যোক্তা।
এইচআর/এমএস