গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা দেবে কে?
এমনিতেই গণপরিবহন নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে গণপরিবহন যে নারীর জন্য কতটা অনিরাপদ সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা। এবার একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে গণপরিহনে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। তাও দিনে দুপুরে। লোকজনের কোলাহলের মধ্যেই। দুর্বৃত্তরা এই সাহস পায় কোত্থেকে? এ ধরনের ঘটনার প্রতিকার হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অভিযুক্ত তুরাগ বাসের চালক, হেলপারসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
ওই ছাত্রী শনিবার দুপুরে উত্তরা ৬নং সেক্টরে উত্তরা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে আসার জন্য উত্তর বাড্ডা এলাকা থেকে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। তখন বাসে ৭-৮ জন যাত্রী ছিল। এ সময় নাটকীয়ভাবে পরবর্তী স্টপেজগুলোতে বাস সামনে যাবে না বলে যাত্রীদেরকে নামাতে থাকে এবং নতুন কোনো যাত্রী উঠানো বন্ধ রাখে। এতে ওই ছাত্রীর আশঙ্কা ও সন্দেহ হলে তিনি বাস থেকে নামতে যান। কিন্তু বাসের হেলপার দরজা বন্ধ করে দেয় এবং কনট্রাক্টর তার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। বাসের কনট্রাক্টর-হেলপারের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। পরে অন্য বাসে চড়ে ক্যাম্পাসে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সহপাঠীদের বিষয়টি জানান।
পরবর্তীতে সহপাঠীরা ওই বাসের হেলপার কনট্রাক্টরকে আটকের দাবিতে রাস্তায় মানববন্ধন করে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা তুরাগ পরিবহনের অর্ধশত বাস আটকে চাবি নিয়ে নেয়। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রোববার বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রীর স্বামী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০/৩০ ধারায় ওই মামলা দায়ের করেন। মামলায় তুরাগ পরিবহনের ওই বাসের অজ্ঞাত চালক, হেলপারসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রূপা খাতুন চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। দুর্বৃত্তরা তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে যায়। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হলেও গণপরিবহনে নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।
বাস্তবতা হচ্ছে গণপরিবহন এখনো নারীবান্ধব হয়ে উঠেনি। আরও পরিষ্কার সকরে বললে যাত্রীবান্ধবও নয় গণপরিবহন। বেপরোয়া গতির যান যাত্রীর জীবন, হাত পা কেড়ে নিচ্ছে। একের পর এক ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। পার পেতে পেতে পরিবহন শ্রমিকরা এখন নারীর ওপর বর্বরতা চালাতেও দ্বিধা করছে না। গণপরিবহনে নারী নির্যাতন বন্ধে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। পরিবহন শ্রমিক সংগঠনকেও এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।
এইচআর/এমএস