প্রশংসনীয় উদ্যোগ
নদীর দখল ও দূষণরোধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তি ও সংস্থাকে জাতীয় পুরস্কার দেবে সরকার। গত বুধবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের উন্নয়ন, আর্থিক ও প্রশাসনিক বৈঠকে এই তথ্য জানানো হয়। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সভায় সভাপতিত্ব করেন। দেশে যে হারে নদীদখল-ও দূষণের ঘটনা ঘটছে সেটি বিবেচনায় নিলে এই পুরস্কার ঘোষণা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই পুরস্কার অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এই পুরস্কার দেয়ার বিষয়ে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পুরস্কার দেয়ার প্রথা চালু হলে নদীর দখল ও দূষণরোধে জনগণ উৎসাহবোধ করবে এবং এক্ষেত্রে ব্যাপক সাড়া ও সহযোগিতা পাওয়া যাবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন নদীরক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কারের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
নদী রক্ষার জন্য নানামাত্রিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। সত্যি বলতে কি দখল দূষণে মানুষজন এখন দিশাহারা। বিশেষ করে শিল্পকারখানার আশপাশের এলাকার কৃষকরা এ নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। শিল্প কারখানার অপরিশোধিত তরল বিষাক্ত বর্জ্য স্থানীয় খালবিলে মিশে পানি দূষণ তো করছেই, ছড়াচ্ছে আবাসিক এলাকায় ও আবাদী জমিতেও। ফলে শুধু নদী-নালার পানিই দূষিত হচ্ছে না দূষিত পানি আশপাশের মাটিতে মিশে সেখানকার জনজীবনকে করে তুলছে মারাত্মক বিপর্যস্ত। বিষাক্ত পানির মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে আর্সেনিক, পচা জৈব উপাদান, দ্রবীভূত ও অদ্রবীভূত লবণ, সোডা, ক্ষতিকারক ক্রোমিয়াম; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব পদার্থ আবাদী জমিতে মিশে মারাত্মক দূষণের ফলে ধানের ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলদ গাছেরও ফলন হ্রাস পেয়েছে। গাছগাছালি জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। উৎপাদিত ফসলের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে। গবাদিপশুর ঘাস পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলকার লোকজন।
অপরদিকে নদী দূষণও অব্যাহত আছে। ট্যানারি বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদী। মানবসৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য থেকেও মারাত্মক এই ট্যানারির জৈব বর্জ্য। কিন্তু এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। নদী দূষণ নিয়ে এত কথা, এত লেখালেখি, পরিবেশ সংগঠনগুলোর আন্দোলন এমনকি খোদ হাইকোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও তা বন্ধ হচ্ছে না।
ঢাকার পাশে চার নদীর দূষণ বন্ধে এ পর্যন্ত কম পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কিন্তু দূষণ অব্যাহত আছে। বুড়িগঙ্গায় যাতে কেউ বর্জ্য ফেলতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। বর্জ্য ফেলা রোধে নদীর দুই পারে সচেতনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি বা ভ্যানের মাধ্যমে নদীতীরে ময়লা ফেলাও বন্ধ করতে হবে।
নদী দূষণ এখন শুধু নদীর পানিতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, তা আশপাশের জনপদকেও করে তুলছে মারাত্মক দূষিত। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার বর্জ্য গিয়ে নদীর পানি দূষণ করছে। আর দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের আবাসিক এলাকা, আবাদী জমিতে। ফসলি জমি এমনভাবে নষ্ট হয়ে কালো হয়ে গিয়েছে যে তা খালি চোখেই দেখা যায়। এছাড়া মাটি পচে গিয়ে মারাত্মক দুর্গন্ধও ছড়ায় তা। এরফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তো রয়েছেই, জমিতে ফসলও ফলছে না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে এখনই এর একটা বিহিত করা দরকার।
অভিযোগ রয়েছে, নদী ও আবাদী জমি দূষণের সঙ্গে জড়িত অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অধিদফতরের কোন ছাড়পত্র নেই। বছরের পর বছর কোন ইটিপি ছাড়াই তা চলছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করতে হবে যাতে অপরিশোধিত বর্জ্য কোন অবস্থাতেই তারা ফেলতে না পারে। এ জন্য পরিবেশ অধিদফতরকে সক্রিয় হতে হবে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান চালাতে হবে। নদীনালা, আবাদী জমি সর্বোপরি এলাকার মানুষজনকে দূষণের কবল থেকে বাঁচাতে হলে এর কোন বিকল্প নেই।
এইচআর/এমএস